সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চেনা পথের পথিক অনেকেই হয়। তবে অচেনা পথে হাঁটার আনন্দই আলাদা। প্রকৃতির কোলে এমনই এক শান্ত-সুন্দর গ্রাম রঙ্গারুন বা 'রাজেরু'। শৈলশহর দার্জিলিংয়ের খুব কাছে এর অবস্থান। চারদিক চা বাগানের সবুজে মোড়া। তার মাঝে থাকলে শহরের এই ইঁদুর দৌড়ে ক্লান্তি একেবারে ভুলে যাবেন।
ছবি: সংগৃহীত
ব্রিটিশ আমলে এখানে গড়ে ওঠে ৪৯.৯৩ হেক্টরের এই চা বাগান৷ এনজেপি থেকে পৌঁছতে সময় লাগে আড়াই-তিন ঘণ্টা। পাহাড়ের কোল কেটে এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে প্রায় ৭০-৭৫ কিলোমিটার পথ৷ তার পর? মেঘ এখানে হাতে ধরা দেয়৷ পিচ বাঁধানো পাহাড়ি পথ ঝুপ করে নেমে আসা মেঘের মায়াজালে হয়ে পড়ে ঝাপসা৷ রঙ্গারুন পৌঁছানোর পথে পাশে ঘন গাছের সারিতে রয়েছে প্রায় ৩০ রকমের ঔষধি গাছপালা৷ কুইনাইন গাছও রয়েছে বিস্তর৷ সঙ্গে রয়েছে কমলার অগুনতি গাছ। শীতের সময় তা ফলে ভরে যায়।
[আরও পড়ুন: বিশ্বজুড়ে ফের ডাউন ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম, ঘনঘন সমস্যায় পড়ায় ফুঁসছেন ইউজাররা ]
রোদ উঠলে ঝকঝকে আকাশে এখান থেকেই দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর৷ আলো ঠিকরে পড়া চূড়া রাঙিয়ে দেয় রঙ্গারুনের রূপ৷ আতিথেয়তার কথা এখানে বলে শেষ করা দায়৷ হোম স্টে, কটেজে রয়েছে আন্তরিকতার ছোঁয়া। অচেনা মানুষগুলোর সঙ্গে একবেলা কথা বললেই মনে হয় যেন কতদিনের চেনা সবাই৷ খাবারের আয়োজনও বাড়ির মতোই পেয়ে যাবেন৷ দার্জিলিং থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে বলে এখানে দুপুরের খাবার বাইরে সারারও প্রচুর অপশন পেয়ে যাবেন।
ছবি: সংগৃহীত
রঙ্গারুনের চারদিক স্বপ্নের মতো৷ সেনচেল অভয়ারণ্যের অন্তবর্তী গ্রাম হওয়ার দরুণ ভোরের দিকে বেরিয়ে পড়ুন পথে, বরাতজোরে চোখে পড়তে পারে ওরিয়েন্টাল টার্টল ডাভ, রেড ভেন্টেড বুলবুল, গ্রিন ফ্লেম ব্যাক ও অন্যান্য বিরল প্রজাতির পাখি৷ তবে পাখি দেখার সেরা সময় জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস৷ অভয়ারণ্যে রয়েছে ভাল্লুক, হরিণ, শজারু, এমনকী চিতাও৷ স্থানীয় মানুষের মধ্যে চাক্ষুষ চিতা দেখার অভিজ্ঞতাও রয়েছে, তবে তা বিরল৷
ছবি: সংগৃহীত
রঙ্গারুন চা-বাগানে হেঁটে যাওয়া যায় অনেকটা পথ, চারদিক ঘন সবুজ, মাঝে হঠাত্ ঘিরে ধরবে মেঘের দল৷ ঝাপসা করে দেবে চারদিক৷ গ্রামের অন্যদিকে পথ ধরে চলে যান রুংদাং খোলায়৷ এপথে গাড়ি যায় না, সুতরাং একমাত্র ভরসা পায়ে হাঁটা, সূর্য ওঠার পরই প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন রুমদাং খোলার পথে৷ পথ শেষে চোখে পড়বে অপরূপ পাহাড়ি ঝোরা৷ ঝোরার জল কাচের মতো ঝকঝকে৷ রুংদাং খোলার সূত্রে রুংদাং নদী৷ রঙ্গারুনের নামও এসেছে নদীর সূত্রেই৷ লেপচা ভাষায় 'রাঙ্গেরুন' কথার অর্থ 'এক বড় নদীর বাঁক'৷ এখানেই রুংদাং নদী সোজার বদলে বাঁকা পথ নেয়, তাই এমন নাম৷ রক ক্লাইম্বিং, মাউন্টেন বাইকিং, ফরেস্ট ক্যাম্পিং, ট্রেকিং, হাইকিং–সবেরই ব্যবস্থা রয়েছে ছোট্ট এই গ্রামে৷