সোম রায়: কলকাতায় থাকতে একজন গিফ্ট পেতেন আস্ত ইলিশ। অন্যজন ইয়াব্বড় গলদা চিংড়ি। দু’জনের অবস্থান ছিল বঙ্গ মানচিত্রের দুই মেরুতে। করোনা আতঙ্কের সময় দু’জন রয়েছেন পৃথিবীর দুই প্রান্তে। একজন অস্ট্রেলিয়ার পার্থে। আরেকজনের ঠিকানায় রয়েছে মরোক্কোর আগদাল শহরের পোস্টাল কোড। এই মুহূর্তে একজন রয়েছেন হোম আইসোলেশনে। অন্যজন দুই ছেলেমেয়েকে দেখাশোনার পাশাপাশি সান্তাক্লজের মতো সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন স্থানীয় দুস্থদের দিকে। দুনিয়াজুড়ে আতঙ্কের মাঝে এভাবেই সময় কাটাচ্ছেন দুই প্রধানের প্রাক্তন দুই হেড স্যর ট্রেভর জেমন মর্গ্যান ও করিম বেঞ্চারিফা।
৩ মার্চ সপ্তাহ দু’য়েকের ছুটি কাটাতে জন্মভূমি ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন ‘টিজেএম’। লন্ডনে বোন ও সারে কাউন্টির অন্তর্গত ডোর্কিংয়ে মেয়ের বাড়িতে ১৫টা দিন বেশ মজা করেই কাটিয়েছিলেন মর্গ্যান। যদিও ততদিনে করোনা আতঙ্ক গ্রাস করা শুরু করেছে ইউরোপের এদিক-ওদিক। তবু কাছের মানুষদের সঙ্গে থাকলে যা হয়! তবে ১২দিন আগে বাড়ি ফিরেই বাধ্য নাগরিকের মতো সরকারের নিয়ম মেনে চলে গিয়েছেন হোম আইসোলেশনে। মর্গ্যান বলছিলেন, “ঠিক সময়ে ফিরে এসেছি। এখন যারাই বাইরে থেকে ফিরছে প্রত্যেককে সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে দু’সপ্তাহ রাখা হচ্ছে। আমি তো তাও বাড়িতে আছি।”
[আরও পড়ুন: লকডাউনে সমস্যায় ‘ডায়পার কিড’-এর পরিবার, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন লক্ষ্মীরতন]
স্বস্তির খবর হল, তাঁর শরীরে মেলেনি কোভিড-১৯ (COVID-19)-এর অস্তিত্ব। সেই কথা জানিয়ে বললেন, “পরীক্ষা করিয়েছি। কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে এখানে সবাই সরকারের নির্দেশ মেনে চলছে। কপাল ভাল আমরা যেখানে থাকি, সেখানকার জনঘনত্ব খুব একটা বেশি নয়। তবু বার, পাব, রেস্তরাঁ, স্কুল, কলেজ – সব বন্ধ। রাস্তায় ভিড় করা বারণ। একে অন্যের সঙ্গে অন্তত দু’মিটার দূরত্ব রাখতে বলা হয়েছে। প্রত্যেকে সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে। তাই আমিও সরকারি নিয়ম মেনে হোম আইসোলেশনে রেখেছি নিজেকে। এটা শুধু নিজের কথা ভাবার সময় নয়। সমাজের প্রতিও আমাদের দায়িত্ব আছে। কলকাতার বন্ধুদেরও বলব, প্রশাসন যা বলছে, মেনে চলুন।”
যুবভারতীর রিজার্ভ বেঞ্চে হয়তো দু’জনের অবস্থান ছিল উলটোদিকে। তবে যুবভারতীর শহরের অনুরাগীদের জন্য ‘টিজেএম’-এর মতোই বার্তা দিলেন ‘করিমচাচা’। বললেন, “শুনেছি ওখানে লকডাউন চলছে। প্লিজ প্রশাসনের কথা শুনে চলুন। একদম বাইরে বেরবেন না।” বাড়িতে ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়ে। এই আতঙ্কের আবহে যাদের ঘরে রাখা সবচেয়ে কঠিন কাজ। কিন্তু খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না করিমের। বলছিলেন, “কম দুষ্টু ফুটবলারকে সামলাতে হয়েছে? আমি অভ্যস্ত। ট্রেনিংয়ের সময় যেভাবে ফুটবলারদের বোর হতে না দিয়ে বিভিন্ন ফান ড্রিল করাতাম, বাচ্চাদের সঙ্গেও তাই করছি।”
[আরও পড়ুন: ‘শ্রমিকদের কথা ভাবা উচিত ছিল সরকারের’, লকডাউন নিয়ে কটাক্ষ হরভজনের]
এর পাশাপাশি আরও একটা কাজ করছেন করিম। যা সত্যিই তারিফযোগ্য। শোনা যাক করিমের মুখেই। “আমাদের রাজা ও সরকার একটা বিষয়ে বড্ড কড়া। অর্থনীতির থেকে তারা জোর দিচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্যে। তাই সবকিছু বন্ধ। এর ফলে দিন আনা দিন খাওয়া অনেকে সমস্যায় পড়েছে। আমি নিজের সাধ্যমতো ওদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি। আসলে একদিন সুপারমার্কেটে গিয়ে দেখি এক মহিলা প্রায় তিনশোটা ব্যাগ তৈরি করে তাতে স্প্যাগেটি, ময়দা, সবজি বিভিন্ন জিনিস ভরে দান করছে। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা পাই। আল্লাহর কৃপায় রোজগার তো টুকটাক করেইছি। সাধ্যমতো গরিব মানুষগুলোকে একটু সাহায্য করছি।” এভাবেই চলছে দুই প্রাক্তন কোচের করোনা রোজনামচা।
The post ত্রাতার ভূমিকায় মোহনবাগানের প্রাক্তন কোচ করিম, হোম আইসোলেশনে মর্গ্যান appeared first on Sangbad Pratidin.