স্টাফ রিপোর্টার: পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের জন্য আরএসএস ঘনিষ্ঠ কে কে শর্মাকে কেন্দ্রীয় পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে অভিযোগে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার কালীঘাটে দলের ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গে ক্ষোভে ফেটে পড়েন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “একজন আরএসএসের প্রোগ্রামে গেলেন আর পর্যবেক্ষক হয়ে গেলেন! এটা কি করে হয়? মালদহেও একজনকে পাঠানো হয়েছে। সব ফোর্সকে এখানে পাঠানো হচ্ছে আর তারাই বিজেপির হয়ে কথা বলছে। হি ইজ আরএসএস ম্যান।” এ ব্যাপারে দ্রুত কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন মমতা। বিষয়টিকে যে তৃণমূল সহজভাবে মেনে নেবে না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “একজন খাকি পোশাক পরে আরএসএসের প্রোগ্রামে চলে গেল। খাকি পোশাককে আমি সম্মান করি। নির্বাচন কমিশনকে বলব, এটা দেখুন। আমরা চিঠি লিখেছি।” রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের কর্মসূচিতে কে কে শর্মার উপস্থিতির ছবি দেখিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এদিকে, রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সঞ্জয় বসু জানিয়েছেন, কে কে শর্মা বাহিনী মোতায়েন বিষয়ে দেখভাল করবেন।
বিতর্ক সামনে এসেছে বিএসএফের অবসরপ্রাপ্ত ডিজি কে কে শর্মাকে এই রাজ্য ও ঝাড়খণ্ডে সেন্ট্রাল পুলিশ পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করার কিছুক্ষণ পরেই। একটি ছবি প্রকাশ্যে আসে যেখানে আরএসএসের একটি কর্মসূচিতে সংঘের নেতাদের মাঝেই মঞ্চে দেখা গিয়েছে কে কে শর্মাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্যে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নিয়ে আপত্তি তোলে রাজ্যের শাসকদল। সেই ছবিতে দেখা যায়, অবসরের আগে আরএসএসের একটি অনুষ্ঠানে হাজির রয়েছেন কে কে শর্মা। অফিসিয়াল ইউনিফর্মেই সেই অনুষ্ঠানে শর্মার হাজির থাকার ছবিও টুইট করেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। তৃণমূলের প্রশ্ন, নিজের কর্মজীবনেই যিনি আরএসএসের এত কাছের, সেখানে এখন তিনি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব সামলাবেন কী করে?
[আরও পড়ুন: ক্ষমতায় এলে নোটবন্দির তদন্ত হবে, ইস্তেহার প্রকাশে ঘোষণা মমতার]
এ ব্যাপারে সিপিএম নিরপেক্ষতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলেছে, তেমনই কংগ্রেস তথ্য প্রমাণ পেলে কমিশনে নালিশ জানানোর কথা জানিয়েছে। সিপিএম অবশ্য বিজেপি-তৃণমূলের আঁতাঁতকেও ইঙ্গিত করেছে। পার্টির পলিটবু্যরো সদস্য তথা রায়গঞ্জের বাম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “কেন্দ্রে গত পাঁচ বছরে ও রাজ্যে আট বছরে একজনও নিরপেক্ষ পুলিশ দেখিনি। একজন আরএসএস-কে পর্যবেক্ষক করে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাঁর নিচে যে পুলিশ কাজ সামলাবে, তারা তো তৃণমূলের লোক। এ থেকেই বোঝা যায়, দুই দলের মধ্যে কতটা মিল।” অন্যদিকে, কংগ্রেসের বহরমপুর কেন্দ্রের প্রার্থী প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরি বলেছেন, “কে কে শর্মাকে আমি চিনি। সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে বিভিন্ন সময়ে তাঁকে ডাকা হয়েছিল উত্তর দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি আরএসএসের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত কি না সেটা জানি না। যদি সেটা হয়ে থাকে খুবই চিন্তার বিষয়। নির্বাচন কমিশনের উচিত বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া। আমার হাতে কোনও ডকুমেন্ট এলে আমি অবশ্যই কমিশনে জানাব।”