স্টাফ রিপোর্টার: শুধু মৌখিক প্রতিবাদ নয়, পুরনো নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবার সংসদেও প্রতিবাদে শামিল হচ্ছে তৃণমূল৷ আগামী ১৬ নভেম্বর রাজ্যসভায় ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা চেয়ে নোটিস দিয়েছে তৃণমূল সংসদীয় দল৷ একইদিনে লোকসভা মুলতুবি প্রস্তাব আনবে তারা৷ বৃহস্পতিবার একইসুরে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নবান্নে তিনি বলেছেন, “বিদেশ থেকে কালো টাকা এনে ফেরত দেবে বলেছিল, সেইসব কিছু করল না, মানুষের লক্ষ্মীর ঝাঁপি কেড়ে নিল৷” তাঁর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, “রাজ্যে আড়াই লক্ষ ও অসমে পাঁচ লক্ষ চা শ্রমিক রয়েছে৷ কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের জন্য চা বাগানের শ্রমিকরা মাইনে পাচ্ছেন না৷ মালিকরা আমায় চিঠি দিয়েছেন৷ আমি মুখ্যসচিবকে বলেছি, বিষয়টা দেখতে৷ ওরা মাইনে না পেলে আমি ছেড়ে দেব না৷ একজন শ্রমিকের মৃত্যু হলে ছাড়ব না৷ সাধারণ মানুষ যখন বিপদে পড়বে, আমি প্রতিবাদ করব৷ সাধারণ মানুষকে ভিখারি করার অধিকার কে দিয়েছে?”
(কালো টাকা উদ্ধারে দফায় দফায় আয়কর দফতরের হানা)
দেশের মধ্যে প্রথম রাজনৈতিক দল হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসই প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল৷ তার পর মুলায়ম সিং যাদব, মায়াবতী, চন্দ্রবাবু নাইডু ও পি চিদাম্বরম প্রতিবাদের সুর চড়ানোয় তাঁদের পাশে পেয়েছেন মমতা৷ নবান্নে সাংবাদিকদের সামনে প্রতিক্রিয়ায় ইন্দিরা গান্ধীর বেশ কিছু সংস্কারের প্রসঙ্গ টেনে ভূয়সী প্রশংসা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী৷ তৃণমূল নেত্রী বলেন, “ইন্দিরা গান্ধী নাসবন্দি, গরিবি হটাওয়ের মতো যে কর্মসূচি নিয়েছিলেন, তার পিছনে যথেষ্ট সদিচ্ছা ছিল৷ তবে বিজেপির উদ্যোগ সফল হবে না৷” রাজনৈতিক মহল মনে করছে, নোট বাতিলের ইস্যুতে বিজেপি-বিরোধী জোট এককাট্টা হয়ে সংসদে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, “আমরা আগেই এর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সরব হয়েছি৷ এখন অন্য রাজ্যও সরব হচ্ছে৷ এমনকি বিজেপির অন্দরেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে৷ উত্তরপ্রদেশের মুলায়ম সিং যাদব থেকে মায়াবতী, চন্দ্রবাবু নাইডু সবাই এর বিরুদ্ধে সরব৷ আমরা বিষয়টি নিয়ে লোকসভায় সরব হব৷ এঁরা ড্যামেজকে ম্যানেজ করার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তা কখনওই সফল হবে না৷ এর ফলে বিজেপি রাজনৈতিকভাবে শেষ হয়ে যাবে৷” উত্তরপ্রদেশ ভোটে বিজেপি গোহারা হারবে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ তাঁর বক্তব্য, “বিজেপি বাইরে থেকে কালো ধন এনে দেশের মানুষের মধ্যে টাকা করে বিলি করার কথা বলেছিল, তা তো হলই না৷ উল্টে মানুষকে ভিখিরি করে দিল৷ একশ্রেণির ব্যবসায়ী ও বড়লোক, বিত্তশ্রেণির মানুষ লাভবান হয়েছে৷” তাঁর প্রশ্ন, “কেন্দ্র আগে থেকেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানত৷ আগে থেকে কেন প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি? এটিএমে পর্যাপ্ত টাকা রাখা হয়নি কেন? এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এইসব ভাবা উচিত ছিল৷ তা না করে মানুষকে ভিখিরি করে তিনি জাপান চললেন৷ মানুষ এর উত্তর দেবে৷ ব্যাঙ্কে তো ‘ম্যান-পাওয়ার’ নেই, সামলাবে কী করে? পোস্ট অফিসগুলি তো সাইনবোর্ড৷” তিনি এদিনও বলেন, “আমার কাছে বাজার করার টাকাও নেই৷ বাড়ির সবাইকে মুড়ি-আলুভাজা খেতে বলেছি৷” এ রাজ্যে আটশো গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে, যেখানে ব্যাঙ্কের কোনও শাখা নেই৷ সেখানকার গরিব মানুষ কী করবেন বলে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ নতুন নোট ছাপানোর জন্য প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে৷ এই খরচের প্রসঙ্গ টেনেও সংসদে তৃণমূল প্রশ্ন তুলবে বলে মমতা জানিয়েছেন৷
লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামী ১৬ তারিখ লোকসভা অধিবেশনের শুরুতেই মুলতুবি প্রস্তাব আনা হবে৷ রাজ্যসভায় দলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনও জানান, এদিনই ২৬৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী অন্য কাজ ফেলে রাজ্যসভায় ‘নোট-ব্যান’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ ও গরিবকে হয়রান করা হয়েছে৷ আগে থেকেই সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া উচিত ছিল৷ ভুল পরিকল্পনার মাশুল দিয়েছেন মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ৷ কালো টাকা উদ্ধারে কোনও কাজই করেনি কেন্দ্র৷”
(জানেন, নোট বাতিলের এত বড় সিদ্ধান্ত কীভাবে গোপন রাখলেন মোদি?)
The post পুরনো নোট বাতিলের বিরুদ্ধে ফের সুর চড়ালেন মমতা appeared first on Sangbad Pratidin.