সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভোটের আগে বলা হচ্ছিল তিনি ‘কিং মেকার’ হবেন। কারও কারও মনে হয়েছিল পরিস্থিতি তেমন হলে তিনি ‘রাজা’ও হয়ে যেতে পারেন। দিনের শেষে দেখা গেল, তাঁর দল ভাল ফল করলেও ত্রিপুরার মহারাজা প্রদ্যোত কিশোর মানিক্য দেববর্মা (Prodyot Kishor Manikya Debbarma) না রাজা হলেন, না কিংমেকার হলেন। তাঁকে বসতে হচ্ছে বিরোধী আসনেই। উলটে তাঁর দলের কাটা ভোটেই সুগম হয়ে গেল বিজেপির রাস্তা।
ত্রিপুরার (Tripura) সর্বশেষ ফলাফল বলছে, বিজেপি জোট ৩৩টি আসন পেয়েছে। বাম-কংগ্রেস জোট পেয়েছে ১৪ আসন। এবং তিপ্রা পেয়েছে ১৩ আসন। আপাত দৃষ্টিতে এই ফল একপেশে মনে হলেও আদপে সেটা একেবারেই একপেশে নয়। বহু আসনে বিজেপি (BJP) জিতেছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে। আগের বারের তুলনায় ভোটের হার এবং আসন সংখ্যা দুটোই কমেছে গেরুয়া শিবিরের। উপরন্তু, ফলাফলের হিসাব বলছে বিরোধী ভোট যদি ভাগাভাগি না হত আরও অন্তত ১৯টি আসনে হারতে হত গেরুয়া শিবিরকে। যার মধ্যে রয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার (Manik Saha) আসনটিও। হারতেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী। এমনকী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিকেরও জেতা হত না। সেক্ষেত্রে বিজেপির পক্ষে ক্ষমতায় ফেরা সম্ভব হত না।
[আরও পড়ুন: ১৫% সুদে লক্ষ লক্ষ টাকা ফেরতের টোপ! গোপাল-হৈমন্তীর চিটফান্ড সংস্থার তথ্য যাচাই CBI-এর]
ভোটের হারের হিসাবে বলছে, বিজেপি জোট ত্রিপুরায় (Tripura) পেয়েছে প্রায় ৪১ শতাংশ ভোট। সেখানে বাম-কংগ্রেস জোটের ঝুলিতে গিয়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। আর তিপ্রা মথা পেয়েছে ২২ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তিপ্রার আসন সমঝোতা হলে বহু আসনেই ফলাফল বদলে যেত। ত্রিপুরায় উপজাতি অধ্যুষিত যে ২০ আসন ছিল, তিপ্রা নিজেদের ১৩টি আসন সেই ২০টির মধ্যেই পেয়েছে। কিন্তু বাঙালি অধ্যুষিত বাকি ৪০ আসনের মধ্যে বেশ কিছু আসনে বিরোধী ভোটে ভাগ বসিয়ে বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ত্রিশঙ্কু মেঘালয়ে বৃহত্তম দল NPP, খাতা খুলল তৃণমূল]
বাম শিবিরের আক্ষেপ, মহারাজা যদি উপজাতি এলাকার বাইরে প্রার্থী না দিতেন, তাহলে ফলাফল অন্য হতে পারত। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মানিক দে (Manik Dey) স্পষ্টই বলে দিচ্ছেন, মথা এভাবে ভোট না পেলে শুধু সিপিএমই (CPIM) ২৬-২৭টা আসন পেয়ে যেত। বস্তুত রাজনৈতিক মহলের ধারনা, সত্যিই যদি বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে মথার জোট হত তাহলে ত্রিপুরায় কোনওভাবেই বিজেপি ক্ষমতায় ফিরতে পারত না। কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না, কারণ তিপ্রার দাবির সঙ্গে জাতীয় দলগুলি সম্মত হতে পারেনি। এরপর মথা কী করে সেদিকে অবশ্য নজর থাকবে। আপাতত তারা বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব রেখেই বিরোধী আসনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।