shono
Advertisement

‘এই প্রেমহীন সময়ে বলছি তোমায় ভালবাসি,’সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলার রূপকথার সাক্ষী সমাজ

২০১৭ সালে ধারাবহিক 'ঝুমুরে'র সেটে রূপকথার সূচনা।
Posted: 06:02 PM Nov 20, 2022Updated: 09:13 PM Nov 20, 2022

কিশোর ঘোষ: ‘জিন্দেগি লম্বি নেহি, বড়ি হোনি চাহিয়ে’। জীবন দীর্ঘ হওয়ার চেয়েও মহৎ হওয়া জরুরি। এমন ডায়লগ বলি সিনেমায় থাকে। কিন্তু সিনেমা আর বাস্তব তো এক নয়। তাছাড়া যত বাজারে আলু, কন্ডোম, মোবাইল, গুলি-বোমার দাম বাড়ছে, তত কমছে ভালবাসার দাম। ভালবাসা হল গিয়ে একটি ফেক ভোকাবুলারি। যা ফেসবুকে বহু ব্যবহৃত। এতে চাকরি-প্রেম (বিছানা)-সহ যাবতীয় দেওয়ানেওয়া মজবুত হয়। ‘কাজের’ চাপে চার অক্ষরটুকু লেখার সময় থাকে না যাদের, তারা লাভ সাইনে হৃদয় জুড়ায়! ২৪ বছর বয়সে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলার শর্মার (Aindrila Sharma) মৃত্যুতে এসব মনে হচ্ছে। বান্ধবীর জন্য দিনের পর দিন হাসপাতালের পড়ে থাকা, রাতের পর রাত জাগা সব্যসাচী চৌধুরীর (Sabyasachi Chowdhury) কথা ভেবে মনে হচ্ছে। সব্যসাচী কে?

Advertisement

ঐন্দ্রিলার ভালবাসার নাম। সব্যসাচীর ভালবাসার নাম ঐন্দ্রিলা। গত ১ নভেম্বর কথা বলার শক্তি হারায় ভালবাসা। নাকেমুখে নল গোঁজা। জ্ঞান হারানো অনন্ত! বেঁচে আছে না মরে গিয়েছে বোঝা কঠিন! পৃথিবীর সমস্ত কঠিন অসুখ উপহার দেওয়া হয়েছে মেয়েটাকে! হাসপাতালের চিকিৎসকরাও কিছু বলতে পারছেন না। তবু অসুস্থ ভালবাসার পাশে অপেক্ষায় ভালবাসা। যেন সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেনের বাড়ি। যার নাম ‘ভাল বাসা’। অর্থাৎ কিনা একটা ভাল থাকার জায়গা। বিপদের ঠাঁই। ঝড়জলে ছাদ। দুপুর রোদের ছায়াতলা।

[আরও পড়ুন: ঐন্দ্রিলার ইচ্ছেশক্তিকে কুর্নিশ প্রসেনজিতের, ‘কেন চলে গেলে?’ আক্ষেপ ঋতুপর্ণার]

ছায়াতলের মায়ার সূচনা ২০১৭ সালে। ঐন্দ্রিলার প্রথম ধারাবাহিক ‘ঝুমুর’-এর সেটে প্রথম দেখা দু’জনের। সেদিন কি সব্যসাচী বুঝেছিল, শেষ দিনগুলো হাসপাতালের রাত হয়ে যাবে! এক পাশে থাকবে ঐন্দ্রিলা, অন্য পাশে মৃত্যু। মাঝখানে সব্যসাচীকে বসার চেয়ার  দেওয়া হবে। যতটা দেরি করানো যায় আর কী! তবু, রোখা গেল না ২০ নভেম্বরকে। এসেই গেল কালো! কিন্তু মৃত্যুপথযাত্রী বান্ধবীর পাশে থাকার ‘বোকাবোকা ঘটনা’ অমর হয়ে গেল! ঐন্দ্রিলা নক্ষত্র হয়ে গেলেন, সব্যসাচী একা হয়ে গেলেন। জন্মাল সব্যসাচী আর ঐন্দ্রিলার মানস সন্তান, রূপকথার মতো এক ভালবাসা। ‘এই প্রেমহীন সময়ে বলছি তোমায় ভালবাসি!’ ইহ জীবন দিয়ে সুমন গাইলেন সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলা। 

[আরও পড়ুন: ঐন্দ্রিলার অসুস্থতা সংক্রান্ত যাবতীয় পোস্ট ডিলিট করলেন সব্যসাচী, কিন্তু কেন?]

ফলে ছিটকে গেল চালাক সভ্যতা, চমকে গেল চতুর সমাজ। মৃল্যবৃদ্ধিতে ভোগা রোগা পৃথিবীর মাথায় হাত! যেখানে বেড়েই চলেছে আলু, কন্ডোম, মোবাইল, গুলি-বোমার দাম। যখন গরিব, অসুস্থ বন্ধুর জন্য সময় নেই ‘বন্ধু’র, যখন শ্রদ্ধা-আফতাব-দিল্লি-খুন সত্যি, ভালবাসাহীন সেই পৃথিবীতে ভালবাসার দাম বাড়িয়ে দিলেন সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলা। এখন শীতের রাতের আকাশে মেঘের স্লেটে ভাসছে সব্যসাচীর বিশ্বাস, “নিজের হাতে করে নিয়ে এসেছিলাম, নিজের হাতে ওকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাব। এর অন্যথা কিছু হবে না।” অন্যথা হয়নি। মানব জীবনের আদত গন্তব্য ভালবাসার বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। ক’জন পৌঁছায়! সিনেমার ডায়লগকে বাস্তব বানিয়ে ছাড়লেন ওঁরা। এক অভিনেতা ও এক অভিনেত্রীর অভিনয়হীন জীবন। সব্যসাচীর সঙ্গতে ঐন্দ্রিলা যেন বলে গেলেন, ‘জিন্দেগি লম্বি নেহি বড়ি হোনি চাহিয়ে’, জীবন দীর্ঘ হওয়ার চেয়েও মহৎ হওয়া জরুরি। সিনেমার ডায়লগ শক্ত বাস্তবের মাটিতে নিজের পায়ে দাঁড়াল! আমরা অবাক সাক্ষী হলাম। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement