shono
Advertisement

অভিশপ্ত ছবি ‘দ্য ওমেন’! একের পর এক দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়েছিল কলাকুশলীদের

এই ছবির উপরে কি সত্যিই পড়েছিল শয়তানের ছায়া?
Posted: 08:29 PM Sep 24, 2021Updated: 11:18 PM Sep 24, 2021

বিশ্বদীপ দে: মৃত্যুর পরেই কি সব শেষ? নাকি কোনও অন্য জীবনের শুরু? এই উত্তর সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে খুঁজে চলেছে মানুষ। মৃত্যুকে জীবনের প্রান্তিক স্টেশন মেনে নিতে না চাওয়া থেকেই বোধহয় লোকচর্চায় ভূতের (Ghost) জন্ম। রীতিমতো টিকিট কেটে সিনেমা হলে কিংবা ট্যাঁকের কড়ি ফেলে বই কিনে ভয় পেতে ভালবাসে মানুষ। এই ভালবাসা অন্য ধরনের বিনোদন থেকে অনেকটাই আলাদা। এখানে ভাল লাগার সঙ্গে লেগে থাকে রোমাঞ্চের রোঁয়া রোঁয়া ফিনফিনে এক অনুভূতি। যা অনেক সময়ই জন্ম দেয় মিথের- যা দেখছি তা সবটাই মিথ্যে নয়। এর মধ্যে মিশে রয়েছে সত্যির পরশ।

Advertisement

আর এই সব মিথের কথা বলতে বসলে গত শতকের সাতের দশকের একটি ছবির কথা ফিরে ফিরে আসে। ‘দ্য ওমেন’ ছবিটা হররপ্রেমী বহু মানুষেরই পছন্দের ছবি (Horror movie)। কিন্তু ছবির চেয়ে কিছু কম রোমাঞ্চকর নয় ছবির সঙ্গে লেগে থাকা গা ছমছমে নানা ঘটনাস্রোত।
তবে সেকথা বলার আগে একটু সেই হারানো সময়টাকে খোলসা করা দরকার। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘দ্য ওমেন’ (The Omen)। এর মাত্র তিন বছর আগে মুক্তি পেয়েছিল সর্বকালের অন্যতম সেরা হরর ছবি ‘দ্য একজরসিস্ট’। উইলিয়াম পিটার ব্ল্যাটির লেখা উপন্যাস থেকে তৈরি হওয়া সেই ছবিতে এক কিশোরীর শয়তানে রূপান্তরিত হওয়ার রোমাঞ্চকর ধাপগুলির সম্মুখীন হয়ে দর্শকরা কার্যতই বিহ্বল হয়ে পড়েছিল। আসলে ছয়ের দশকের শেষ ভাগ থেকেই মার্কিন মুলুকে অকাল্ট রিভাইভালের অন্তিম তরঙ্গ আছড়ে পড়েছিল। গজিয়ে উঠেছিল নানা স্যাটানিক ক্লাব। যাদের উপাস্য স্বয়ং শয়তান! সেই যুগের ধর্মই প্রতিফলিত হয়েছিল ‘একজরসিস্ট’ ছবিটিতে। ‘দ্য ওমেন’ ছবিতেও ফিরে এসেছিল সেই শয়তানচর্চার প্রসঙ্গই। এর আগে-পরে বহু ছবিতেই এসেছে এই প্রসঙ্গ। হয়েছে আরও নানা কিসিমের ভুতূড়ে ছবি। কিন্তু এদের সকলের থেকেই কিছুটা আলাদা ‘দ্য ওমেন’। কেন? আসা যাক সে প্রসঙ্গেই।

‘দ্য ওমেন’ ছবির একটি দৃশ্য

১৯৭৫ সালের গ্রীষ্মকাল। ‘দ্য ওমেন’ ছবির কেবল আইডিয়াটুকুরই সবে জন্ম হয়েছে। বব মাঙ্গার নামের এক বিজ্ঞাপন জগতের এগজিকিউটিভের মাথাতেই এসেছিল ছবির গল্পটা। ছবির প্রযোজক হতে চলা হার্ভে বার্নহার্ডকে ছবিটির প্রসঙ্গে সব বলার পরও বব তাঁকে সতর্ক করেন। খুঁতখুঁতে ভঙ্গিতে জানান, এই ধরনের ছবি না তৈরি করলেও হয়। কিন্তু কেন?

অনেক পরে এক সাক্ষাৎকারে সেদিনের কথোপকথন প্রসঙ্গে খোদ বব জানিয়েছিলেন, ”আমি বলেছিলাম, দেখুন আপনি যদি ছবিটি তোলার চেষ্টা করেন, কিছু সমস্যা কিন্তু হতে পারে। শয়তানের আসল অস্ত্রই হল অদৃশ্য হয়ে থাকা। আর আপনি কিনা ছবির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে তাকে ফুটিয়ে তুলতে চলেছেন! শয়তান কিন্তু এটা হতে দেবে না।” বার্নার্ডের স্মৃতিচারণাতেও সেই সুর, ”আমাদের কাজের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল খোদ শয়তান।  শয়তান চায়নি ছবিটা আদৌ হোক।”

চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কিছু ছবি পেয়েছে ‘কার্সড মুভি’র তকমা। আর সেই সব অভিশপ্ত ছবির শীর্ষস্থানটি পেয়েছে ‘দ্য ওমেন’। ১৯৭৫ সালের জুন মাসে ছবির কাজ শুরু হওয়ার আগেই আচমকা প্রধান অভিনেতা গ্রেগরি পেকের ছেলে নিজেকে গুলি করে বসে! এরপর সেপ্টেম্বরে পেক যে লন্ডনগামী বিমানের যাত্রী ছিলেন, তাতে বাজ পড়ে! একই অভিজ্ঞতা হয় ছবির প্রযোজক মেক নিউফেল্ড ও বার্নার্ডেরও। তাঁদের বিমানেও হয়েছিল বজ্রপাত। তাঁরা বেঁচে যান ঠিকই। কিন্তু তখন থেকেই শয়তানের কালো ছায়া যেন তাঁদের চোখের সামনে দুলতে শুরু করেছিল। বার্নার্ড তো এরপরই গলায় ঝুলিয়ে ফেলেন একটি ক্রস। কারণ ততদিনে তাঁর বিশ্বাস পোক্ত হয়ে গিয়েছে, শয়তান এই ছবিটি হতে দিতে চান না।

এই হাড়হিম দৃশ্যই বাস্তবে ফিরে এসেছিল

ছবিতে একটি দৃশ্যে অনেকগুলি বেবুনকে দেখানো হয়েছিল। শুটিংয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু শুটিং শেষ হওয়ার পরের দিনই বাঘের কবলে পড়ে প্রাণ হারান সেই ব্যক্তি, যিনি পশুদের প্রশিক্ষণকারী হিসেবে দৃশ্যটি ফুটিয়ে তোলার মূল দায়িত্বে ছিলেন।

ছবির কলাকুশলীদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বিমান ভাড়া করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই বিমানটিতে তোলা হয় অন্য যাত্রীদের। টেক অফের কিছুক্ষণের মধ্যেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিমানটি আছড়ে পড়ে মাটিতে। মারা যান প্রত্যেক যাত্রী।

ছবির স্পেশাল এফেক্ট শিল্পী জন রিচার্ডসন ও তাঁর সহকারী লিজ মুরের অভিজ্ঞতা বোধহয় সবচেয়ে ভয়ংকর। ছবির শুটিং ততদিনে শেষ। চলছে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ। সেই সময়ই আচমকা একটি গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় তাঁদের গাড়ির। রিচার্ডসন আহত হলেও বেঁচে যান। কিন্তু প্রবল ধাক্কায় শরীর থেকে মাথা ছিন্ন হয়ে যায় লিজ মুরের। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হল, ছবিতে অবিকল তেমনই এক দৃশ্যের স্পেশাল এফেক্টের কাজ করেছিলেন রিচার্ডসন ও লিজ! এখানেই শেষ নয়। দুর্ঘটনার জায়গায় থাকা মাইলফলকের গায়ে লেখা ছিল ‘ওমেন, ৬৬.৬ কিমি দূরে।’ অতিপ্রাকৃত বিষয়ে সামান্য ওয়াকিবহাল মানুষ মাত্রেই জানেন, খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছে শয়তানের সংখ্যা হল ৬৬৬। গোটা দৃশ্যটি আগাগোড়া ভাবলে কোনও হরর ছবির দৃশ্য বলেই যেন মনে হয়।

‘দ্য একজরসিস্ট’ ছবিকে ঘিরেও রয়েছে এমন মিথ

ছবি ঘিরে এত সব আশ্চর্য দুর্ঘটনার পরত ছবিটিকে আরও বেশি কুয়াশাময় করে তুলেছিল। যে কুয়াশা আজও রয়েছে। কিন্তু… সব মুদ্রারই একটা বিপরীত পিঠ থাকে। এক্ষেত্রেও নিন্দুকেরা বলে থাকেন ‘দ্য একজরসিস্ট’ ছবির কথা। সেই ছবিকে ঘিরেও এমনই কিছু মৃত্যুর কিংবদন্তি রয়েছে। যদিও সমালোচকদের দাবি, এই সব কিংবদন্তির আড়ালে রয়েছে নিপুণ প্রচারকৌশল। একে তো ভয়ের ছবি। তার সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া যায় এমন সব ‘সত্যি’ ভয়ের আলোছায়া, তাহলে খেলা আরও খোলতাই হয়। তাহলে কি ‘দ্য ওমেন’কে ঘিরেও রয়েছে এমন কুশলী খেলা? কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন কোনও জোরাল দাবি সেই অর্থে উঠতে দেখা যায়নি আজও। তবে মুচকি অভিযোগ অনেকেই তুলেছেন।

হালের ‘অ্যানাবেল’, ‘কনজুরিং’-এর মতো ছবি ঘিরেও এই ধরনের নানা রহস্যময় ও কাকতালীয় দুর্ঘটনার কথা শোনা গিয়েছে। কিন্তু কোনও মিথই বোধহয় ‘দ্য ওমেন’ ছবির মতো কুয়াশাঘন হয়ে উঠতে পারেনি। যে কুয়াশা এতগুলি দশক পেরিয়ে রয়ে গিয়েছে। আজও সেই ছবির প্রসঙ্গ উঠলে ফিরে ফিরে আসে হাড়হিম নানা দুর্ঘটনার মোড়ক। আর মনে পড়ে ছবির অসহায় প্রযোজকের কাতর উক্তি, ”শয়তান চায়নি ছবিটা আদৌ হোক।”

ছবির সেই বেবুন দৃশ্য
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement