ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: একুশে বিধানসভা নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্যের পরই দলত্যাগীদের মধ্যে তৃণমূলে (TMC) ফেরার হুজুগ দেখা যাচ্ছে। এবার কি সেই তালিকায় ঢুকে পড়ল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Rajib Banerjee) নামও? ডোমজুরের প্রাক্তন বিধায়কের কি ‘ঘর ওয়াপসি’ হতে চলেছে! তাঁর ফেসবুক পোস্ট ঘিরে অন্তত তেমনই জল্পনা ছড়িয়েছে।
তৃণমূল ত্যাগের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ছবি সঙ্গে করে বিধানসভা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বলে দিয়েছিলেন, “যেখানেই যাই, দিদি আমার হৃদয়েই থাকবেন।” তারপরই নাম লেখান গেরুয়া শিবিরে। ডোমজুর কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে লড়াই করেন। কিন্তু জনতার সমর্থন মেলেনি। শিবির বদলানোয় তাঁর দিক থেকে মুখ ফেরায় আমআদমিও। সেই রাজীবই এবার এবার নিজের নয়া পোস্টে জল্পনা উসকে দিলেন। পরোক্ষভাবে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদ নিয়ে যে তিনি অসন্তুষ্ট, তাও স্পষ্ট করে দেন।
[আরও পড়ুন: ক্রমশ বাড়ছে দূরত্ব? দিলীপের ডাকা বৈঠকে অনুপস্থিত মুকুল, তুঙ্গে দলত্যাগের জল্পনা]
ঠিক কী লিখেছেন তিনি? রাজীব পোস্ট করেছেন, “সমালোচনা তো অনেক হল। মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে কথায় কথায় দিল্লি আর ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালভাবে নেবে না। আমাদের সকলের উচিত রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কোভিড (COVID-19) ও ইয়াস- এই দুই দুর্যোগে বিপর্যস্ত বাংলার মানুষের পাশে থাকা।” অর্থাৎ বিভিন্ন ইস্যুতে লাগাতার রাজ্যের সমালোচনা করা এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে কেন্দ্রের নেওয়া পদক্ষেপে বিরক্তিই প্রকাশ করলেন রাজীব।
এই ফেসবুক পোস্টের পর রাজীবকে তীব্র খোঁচা দেন সৌমিত্র খাঁর। “৪২ হাজার ভোটে হারার পর মনে পড়ল? আপনি নীরব না থেকে বিজেপির কর্মীদের পাশে থাকলে ভাল হয়। না হলে গাড়ির পিছনে যে ছবিটা আছে সেটা আবার সামনের সিটে নিয়ে আসুন।” লেখেন সৌমিত্র।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহ ফিরে পেতে সোশ্যাল মিডিয়ায় লম্বা চিঠি লিখেছিলেন একুশের নির্বাচনের আগে দলত্যাগী সোনালী গুহ। পদ্মশিবিরের মোহভঙ্গ হওয়ায় দলে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মালদহের সরলা মুর্মু এবং উত্তর দিনাজপুরের প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অমল আচার্যও। দিনকয়েক আগেই সেই তালিকায় যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন ফুটবলার তথা বসিরহাট দক্ষিণের প্রাক্তন বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস। এই আবহেই সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে আবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জল্পনা উসকে বলে দেন, শুধু দলত্যাগীরাই নন, জেতা বিজেপি বিধায়করাও যোগাযোগ করছেন। আর এবার ‘বেসুরো’ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও রাজ্য বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, ডোমজুরের প্রাক্তন বিধায়ক কেন এমন পোস্ট করেছেন, তা নিয়ে এখনও তাঁর সঙ্গে কথা হয়নি। রাজীবের সঙ্গে শীঘ্রই এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
এদিকে, এদিনই সরাসরি সক্রিয় রাজনীতিকে বিদায় জানালেন রন্তিদেব সেনগুপ্ত। নিজের ফেসবুক পেজে তাঁর সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েও দিয়েছেন সংঘ ঘনিষ্ঠ এই বিজেপি নেতা। “গত কয়েক মাসে রাজনীতির তাড়নায় বইয়ের সঙ্গে সহবাসের পাঠ উঠে গিয়েছিল। গত একমাসে আবার বইয়ের কাছে ফিরিয়ে আনলাম নিজেকে। আমার হারিয়ে যাওয়া সেই পাঠাভ্যাস আমার কাছে ফিরে এসেছে। এতেই আমি খুশি। এই সহবাসের আনন্দ আমি আর হারাতে চাই না। আমি এখন যত পাঠের গভীরে যাই, বুঝতে পারি, রাজনীতি- তা সে যে পক্ষেরই হোক না কেন, তা আসলে মুক্ত চিন্তাকে হত্যা করে। আমি সেই বন্ধ্যাত্বের জগতে আর ফিরতে চাই না।” লেখেন তিনি।