অর্ণব আইচ: বাইপাস থেকে অজয়নগর। সেখান থেকে নয়াবাদ হয়ে নরেন্দ্রপুরের কাঠিপোতা। পঞ্চসায়রের গণধর্ষণের অভিযোগে সোমবার অভিযুক্ত উত্তম রামকে নিয়ে ঘটনার নাট্য রূপান্তর দিল পুলিশ। সিসিটিভি খতিয়ে দেখে পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত যে, গাড়ির ভিতর নির্যাতিতা ও চালক উত্তম রাম ছাড়া অন্য কেউ ছিল না। যুবতী বসেছিলেন গাড়ির সামনের সিটে, চালকের পাশে। গাড়ির ভিতরেও যে কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি, সেই বিষয়েও পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত। তবে গাড়ির বাইরে কী হয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি।
এদিন উত্তম পুলিশকে যে জায়গায় যুবতীকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল, সেই জায়গাটি দেখায়। সেখানে যুবতীর উপর কোনও যৌন অত্যাচার চলেছিল কি না, অথবা চালক উত্তম তার কোনও সঙ্গীকে ডেকে নিয়ে এসেছিল কি না, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে। তবে অনেক রাত পর্যন্ত যে ওই রাস্তায় লোকের যাতায়াত রয়েছে, পুলিশ তা জানতে পেরেছে। চালক ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করলেও পুলিশ অপেক্ষা করছে মঙ্গলবার আদালতে এক বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ওই নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দির রিপোর্টের উপর। এমনকী, মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্টের থেকেও গোপন জবানবন্দির রিপোর্ট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত পুলিশের।
[ আরও পড়ুন: ফেসবুকে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে প্রেমের ফাঁদ, বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে গয়না লুট যুবকের ]
এদিকে, পঞ্চসায়রের যে বৃদ্ধাশ্রম তথা হোম থেকে যুবতী পালিয়েছিলেন, সেই হোম-সহ ওই একই মালিকের মোট ১১টি হোমের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে লালবাজার। তার ভিত্তিতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ওই ১১টি হোম।
পুলিশ জানিয়েছে, যে বাতানুকূল ট্যাক্সি করে বাইপাস থেকে যুবতীকে তোলা হয়, সিসিটিভির ফুটেজে সেই ট্যাক্সির বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি দেখেই পুলিশ চালক উত্তমের সন্ধান পায়। ট্যাক্সিটির গায়ে ‘এসি’ ও ‘নো রিফিউজাল’ লেখা, নীল দাগের উপর দরজার হ্যান্ডেলের মতো চিহ্নগুলি পুলিশের নজরে আসে। প্রথমে ৭০টি সাদা রঙের এসি ট্যাক্সি পরীক্ষা করা হয়। এর পর নরেন্দ্রপুরের কাঠিপোতা এলাকার ১৩টি ট্যাক্সি পরীক্ষা করে উত্তমকে শনাক্ত করা হয়। ঘটনার পর থেকে বাড়িতে স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গেই ছিল সে। প্রথমে সে অস্বীকার করলেও প্রায় বারো ঘণ্টার টানা জেরার পর সে স্বীকার করে।
চালকের দাবি, যুবতী হাত দিয়ে ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে বৃদ্ধাশ্রম যাওয়ার জন্য একশো টাকা দেবেন বলে জানান। তাই তাঁকে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রম খুঁজতে অজয়নগর হয়ে নয়াবাদে আসারাম বাপুর হোমেও যায় চালক। এর পর সে যুবতীকে কাঠিপোতায় নিয়ে গিয়েছিল কেন, সেই প্রশ্ন পুলিশ তুলেছে। একপাশে খাল, অন্যপাশে পুকুর রয়েছে, এমন একটি জায়গায় এসে চালক তাঁকে নেমে যেতে বলে টাকা চায়। যুবতী জানান, তাঁর কাছে টাকা নেই। তখন তাঁকে ধাক্কা দেয় প্রচণ্ড মদ্যপান করে থাকা ওই চালক। যুবতীও তাকে মারে। এবার তাঁর নাকে, মুখে ঘুষি মারে চালক। ধাক্কা দিয়ে বাইরে ফেলার কারণে তাঁর দুই হাঁটুতে চোট লাগে। রক্তাক্ত পোশাক পরে তিনি এগিয়ে গেলে এলাকার বাসিন্দারা উদ্ধার করে তাঁকে নরেন্দ্রপুর থানায় নিয়ে যান। পুলিশ তাঁর বক্তব্যের ভিডিওগ্রাফি করে। নতুন পোশাক কিনে দেওয়ার পর সরকারি হোমে নিয়ে যায়। তখন তিনি শুধু শ্লীলতাহানির বিষয়টি জানিয়েছিলেন। হোম থেকে কীভাবে তিনি পালালেন, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। সোনারপুর স্টেশনের সিসিটিভি ক্যামেরা খারাপ বলে কোনও ফুটেজ মেলেনি। যে দুই মহিলা নির্যাতিতাকে ধরে বালিগঞ্জ স্টেশনে হাঁটছেন বলে দেখা গিয়েছে, তাঁদের পরিচয় জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[ আরও পড়ুন: নার্সিংহোম থেকে ছুটি, বাড়ি ফিরলেন অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরত ]
The post গাড়িতে ছিলেন শুধু চালক ও যুবতী,পঞ্চসায়রে ধর্ষণকাণ্ডের তদন্তে নয়া মোড় appeared first on Sangbad Pratidin.