shono
Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘সুপারি কিলিং’-এর বরাত, মধ্যপ্রদেশে বসে কলকাতায় খুনের ছক! গ্রেপ্তার ২

পুলিশি তৎপরতায় টিটাগড়ে আইনজীবীকে খুনের ছক ভেস্তে গেল।
Posted: 09:09 AM Jun 06, 2022Updated: 09:09 AM Jun 06, 2022

অর্ণব আইচ: সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) ‘সুপারি কিলিং’-এর বরাত। টিটাগড়ের আইনজীবীকে খুনের ছক কষে কলকাতায় বসে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের ‘ডন’কে সুপারি দিয়েছিল শহরেরই এক বাসিন্দা। গোয়ালিয়র সিটি পুলিশের হাতে নীরজ জাট নামে সেই সুপারি কিলার গ্রেপ্তার হওয়ার পর সামনে এল সেই সত্য। তার হোয়াটস অ্যাপ (WhatsApp) পরীক্ষা করে গোয়ালিয়র সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, পূর্ব কলকাতার নারকেলডাঙার বাসিন্দা পবন রাই এক আইনজীবীকে গুলি করে খুনের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার সুপারি দেয় নীরজকে। ওই আইনজীবীর এক সঙ্গীকেও খুনের ছক কষা হয়েছিল।

Advertisement

গোয়ালিয়র পুলিশের কাছ থেকে সেই তথ্য জানতে পেরেই লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখা শনিবার গভীর রাতে মধ্য কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে পবন রাইকে গ্রেপ্তার করে। গোয়ালিয়র ও কলকাতা পুলিশের যৌথ চেষ্টায় ভেস্তে গেল আইনজীবী খুনের ছক। রবিবার পবন রাইকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে সুপারির ‘মোটিভ’ জানতে গোয়েন্দারা তাকে জেরা করেন। ওই আইনজীবীর সঙ্গেও লালবাজারে (Lalbazar) কথা বলছেন গোয়েন্দারা। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, কোনও আইনজীবীকে খুনের জন্য সুপারি কিলার নিয়োগ করার ঘটনা কলকাতায় এই প্রথম। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত পবন রাইয়ের সঙ্গী রবিকান্ত সিং পলাতক। নীরজকে গোয়ালিয়র থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে।

[আরও পডু়ন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন শিক্ষিকা, কলকাতার সেই স্কুলই বাংলা থেকে হতে চলেছে ইংরাজি মাধ্যম]

পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি গোয়ালিয়রের স্বঘোষিত ‘ডন’ নীরজ জাট সোশ্যাল মিডিয়ায় টেবিলে অস্ত্র রেখে, হাতে অস্ত্র নিয়ে দু’টি ছবি ও দু’টি ভিডিও পোস্ট করে। সে নিজেকে সুপারি কিলার বলেও পরিচয় দেয়। এর আগে হাতে AK 47 হাতে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করে গ্রেপ্তার হয়েছিল ঝাড়খন্ডের ‘ডন’ আমন সাউ। পরে দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জে গুলি চালানোর অভিযোগে তাকে কলকাতা পুলিশও গ্রেপ্তার করে। আমন সাউয়ের মতোই নীরজ ছবি, ভিডিও পোস্ট করায় গোয়ালিয়রের গোয়েন্দারা তার ডেরায় তল্লাশি চালান। নীরজের আওয়াজ যে একেবারেই ফাঁকা নয়, তার প্রমাণ মেলে। গত বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করে উদ্ধার হয় দু’টি মুঙ্গেরি রিভলভার, একটি পিস্তল ও সাত রাউন্ড বুলেট।

ধৃত সুপারি কিলার নীরজ।

নীরজের একাধিক মোবাইল ঘেঁটে গোয়ালিয়র সিটি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ইস্ট ও ক্রাইম) রাজেশ দান্ডোতিয়া দেখেন, গত প্রায় ৬ মাস ধরে নীরজের একাধিক মোবাইলের হোয়াটস অ্যাপ থেকে কথা ও মেসেজে যোগাযোগ হয়েছে পূর্ব কলকাতার নারকেলডাঙা থানা এলাকার বেলেঘাটা রেল কলোনির বাসিন্দা পবন রাইয়ের। সোশ্যাল মিডিয়ায় পবন রাই ও সঙ্গী রবিকান্ত সিংয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল নীরজের। হোয়াটস অ্যাপেই পবন তাকে টিটাগড়ের বাসিন্দা বারাকপুর আদালতের এক আইনজীবীকে খুন করার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার সুপারি দেয়। তাঁর পুরো ঠিকানা, ছবি, গতিবিধি সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য হোয়াটস অ্যাপে পাঠানো হয়। পুলিশের দাবি, সুপারির আগাম টাকাও পাঠানো হয়েছিল। বারাকপুর আদালত চত্বর অথবা তার কাছাকাছি কোনও জায়গায় ওই আইনজীবী ও তাঁর এক সঙ্গীকে গুলি করে খুনের ছক কষে দিনক্ষণও ঠিক করা হয়। নীরজ কবে কলকাতায় আসবে, কোথায় থাকবে, কে তাকে সাহায্য করবে ও কীভাবে কলকাতা ছেড়ে পালাবে, সেই সম্পর্কে পবন তার সঙ্গী রবিকান্তকে নিয়ে পরিকল্পনা করতে থাকে।

[আরও পডু়ন: করোনা কেড়েছে মা-বাবাকে, দশম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া ছাত্রীকে ২৯ লক্ষ টাকা শোধের নোটিস]

ওই হোয়াটস অ্যাপ মেসেজগুলি গোয়ালিয়র পুলিশ লালবাজারে পাঠায়। পবনের ঠিকানা শনাক্ত করে বেলেঘাটা রেল কলোনিতে হানা দেন গোয়েন্দারা। কিন্তু বাড়িতে ছিল না সে। তার মোবাইলের সূত্র ধরেই মধ্য কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পবনকে। লালবাজারে ডেকে গোয়েন্দারা ওই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন। গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ওই আইনজীবীর দাবি, পবন তাঁর মক্কেল নয়। পবনকে তিনি চেনেন না। পবনের বিরোধী কেউ তাঁর মক্কেল কি না, তাও তিনি জানেন না। যদিও পুলিশের ধারণা, কোনওভাবে ওই আইনজীবী ও তাঁর সঙ্গীর দ্বারা পবনের ক্ষতি হয়েছে। তাই সে খুনের জন্য সুপারি দেয়। এদিকে, গোয়েন্দারা জেনেছেন, পবন রাইয়ের বিরুদ্ধে আগেও পূর্ব কলকাতার একাধিক থানায় বিভিন্ন অভিযোগ হয়েছে। খুনের ছকের ‘মোটিভ’ জানতে পবনকে টানা জেরা চলছে। তার সঙ্গী রবিকান্তকে গ্রেপ্তার করা গেলে আরও তথ্য জানা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement