ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: এমন ঘটনা সিনেমার স্ক্রিপ্টকেও হার মানায়!
দুই মা এগিয়ে এলেন দুই তরুণের নতুন জীবন বাঁচাতে। কদিন আগেও এই দুই মায়ের কোনও পরিচয় ছিল না। তাদের সন্তানরাও একে অপরকে চিনত না। ঘটনা হল দুজনের সন্তানের কিডনি বিকল। দুই তরুণ এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জীবন-মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে। একজনের বাড়ি বিহার, আরেক মা এ রাজ্যের বাসিন্দা। তাঁদের রক্তের গ্রুপের সঙ্গে সন্তানের গ্রুপ মেলেনি। কিন্তু ঘটনা হল, বিহারের মায়ের সঙ্গে বঙ্গের তরুণের রক্তের গ্রুপ মিলেছে। আবার বঙ্গের মায়ের সঙ্গে বিহারের তরুণের গ্রুপ মিলছে। নিজেদের সন্তানের নতুন জীবন দিতে কিডনি বদল করতে তাঁরা এককথায় রাজি হয়েছেন।
এই সপ্তাহে পিজিতে একই অপারেশন থিয়েটারে পশ্চিমবঙ্গের মায়ের কিডনি প্রতিস্থাপিত হবে বিহারের তরুণের শরীরে। আবার বিহারের মায়ের কিডনি রাজ্যের তরুণের দেহে প্রতিস্থাপন হবে। নতুন পদ্ধতির নাম, 'সোয়াপ এক্সচেঞ্জ কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট।'
[আরও পড়ুন: মোদি ৩.০-তে অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন শাহ! দিল্লি দরবারে জোর জল্পনা]
দুই তরুণ যাতে নতুন জীবন পায় তার জন্য মরিয়া দুটি পরিবার। এদিকে স্বাস্থ্যভবনের বক্তব্য, দেশের মধ্যে প্রথম দুই রাজ্যের বাসিন্দাদের সম্মতিতে একই সময়ে কিডনি দেওয়া-নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যভবন থেকে দুই রোগীর যাবতীয় তথ্য বিহার স্বাস্থ্যদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ডোমিসাইল সার্টিফিকেট হাতে এসেছে বলে সূত্রের খবর। রাজ্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা ডা.কৌস্তভ নায়েকের কথায়, উদ্যোগ সফল হলে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য রোগীর পরিবারকে আর হন্যে হয়ে ঘুরতে হবে না। রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যের দাতা-গ্রহীতার সম্মতিতে কিডনি প্রতিস্থাপন হবে।
ঘটনার সূত্রপাত পিজি হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে। নেফ্রোলজির অধ্যাপক ডা. অতনু পাল বলেন, "দুই রোগী চিকিৎসাধীন। দুই তরুণের কিডনি বদল করতেই হবে। দুজনের মা রাজি হন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় রক্তের গ্রুপ। দুই ছেলের সঙ্গে তাঁদের মায়ের রক্তের গ্রুপ মেলেনি। কিন্তু দুই অপরিচিত মায়ের রক্তের সঙ্গে রক্তের পুরো মিল পাওয়া গিয়েছে। আমরা শুধু দুটি পরিবারকে একসঙ্গে বসিয়ে গোটা বিষয়টি খুলে বলেছি। বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের দুই মা এককথায় রাজি হয়েছেন।" স্বাস্থ্য ভবনের কিডনি প্রতিস্থাপন বোর্ডের এক নির্বাহী সদস্যের কথায়, "দুই মা তাঁদের সন্তানের জীবনের জন্য এতদিন এখানে ওখানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এমন ক্ষেত্রে সবটা জানার পর চুপ করে বসে থাকা যায় না। তাই দ্রুত বিহার থেকে ডোমিসাইল সার্টিফিকেট পাঠানোর জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই রাজ্য থেকে প্রাথমিকভাবে সম্মতি মিলেছে। নথি হাতে পেলেই পিজিতে পাঠানো হবে।"
[আরও পড়ুন: শপথ নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কাজ শুরু মোদির, আবাস যোজনায় বড়সড় বদল?]
ঘটনা হল, ব্রেন ডেথ ব্যক্তির দেহ থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এমন অনুমতির দরকার পড়ে না। সেই ক্ষেত্রে রিজিওনাল অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্ল্যান্ট গোটা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে বলে পিজি হাসপাতাল সূত্রে খবর।