অভিরূপ দাস: এক ফুল দো মালি। দুই নারীর আকচা আকচি। সমস্যা সমাধানে আইন বিভাগের দ্বারস্থ হয়েছেন পুর-আধিকারিকরা। ঝঞ্ঝাট যাঁকে নিয়ে সেই অশোককুমার মালহা কলকাতা পুরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মী ছিলেন। প্রয়াত হয়েছেন বছর দেড়েক আগে। এর পরেই তাঁর পিএফের টাকা নেওয়ার জন্য শুরু হয়েছে দড়ি টানাটানি। শুধু তো টাকা নয়, মিলবে চাকরিও! অবসরের আগেই যে মারা গিয়েছেন অশোক মালহা। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, দুটি বিয়ে করেছিলেন অশোক। দুই স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দুই মেয়ে রয়েছে। এই টাকা, চাকরি পাবেন কে?
জানা গিয়েছে, শনিবার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের দ্বারস্থ হয়েছেন সন্ধ্যা চৌধুরী। নিজেকে অশোককুমার মালহার প্রথম স্ত্রীর মেয়ে বলে দাবি করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার বাবা ১৬ ডিসেম্বর ২০২২-এ মারা গিয়েছেন। একবছরের উপর হয়ে গিয়েছে। কোনও আর্থিক সাহায্য পাচ্ছি না। মা পুরসভায় গিয়ে প্রমাণপত্র হিসাবে বিয়ের সার্টিফিকেট জমা দিয়েছে। কিন্তু বারবার পুরসভার তরফ থেকে বলা হচ্ছে, ফাইল আটকে আছে। আমরা আরটিআই করেছি।’’
গোটা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত মেয়রও। কেন এত দেরি হচ্ছে? মেয়রের এই প্রশ্নে দপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, অশোককুমার মালহার দুটো বিয়ে। এই দুই স্ত্রীর মধ্যে কে আসল স্ত্রী সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। আধিকারিকদের আরও ভাবাচ্ছে পদবি ঝঞ্ঝাট! বাবার নাম অশোককুমার মালহা, সেখানে মেয়ের নাম সন্ধ্যা চৌধুরী! কী করে এমনটা হয় ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। শুধু তাই নয়, নমিনি হিসাবে অশোককুমার মালহা কলকাতা পুরসভার কাগজে যে নাম দিয়ে গিয়েছেন সেটাও অন্য। পুরসভার আধিকারিক জানিয়েছেন, সেখানে যে নারীর নাম দেওয়া রয়েছে তাঁর পদবি মালহা। ফলে বিষয়টা আমাদের ভাবাচ্ছে। এদিন মেয়র ফিরহাদ হাকিম প্রয়াত অশোকবাবুর কন্যাকে জানিয়েছেন, অপেক্ষা করতে হবে। আপনার আরেক মা ওই টাকা ও চাকরির দাবি জানিয়েছেন। পুরসভা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
সূত্রের খবর, আইন বিভাগে বিষয়টি পাঠিয়েছে পুরসভা। মেয়র জানিয়েছেন, হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী প্রথম যাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তিনিই পাবেন সবকিছু। এদিন সন্ধ্যা চৌধুরী দাবি করেন, ‘‘আমার মায়ের সঙ্গেই তো প্রথম বিয়ে হয়েছিল ওঁর।’’ এদিকে তাঁর সঙ্গে পদবি মিলছে না অশোককুমার মালহার। সন্ধ্যা চৌধুরী নামে সে মহিলার দাবিকেও তাই এখুনি মান্যতা দিতে নারাজ কলকাতা পুরসভার আধিকারিকরা। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আধিকারিক জানিয়েছেন, আরেক স্ত্রী চুপচাপ রয়েছেন। তবে তিনিও নিজেকে আইনি স্ত্রী বলে দাবি করছেন। কাগজ অনুযায়ী, মাত্র তেরো বছর বয়সে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল অশোকবাবুর। সেটাই বা কী করে সম্ভব? তবে কি কাগজে কোনও জাল রয়েছে? উত্তর খুঁজছেন আধিকারিকরা। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, পুরো বিষয়টায় সন্দেহজনক অনেক কিছু রয়েছে। খোলসা করতে আইন বিভাগে পাঠানো হয়েছে।