অভিরূপ দাস: আছেন প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে আছে তাঁর পূর্ণ মন্ত্রিসভা। খাদ্যমন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রী, পরিবেশমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, কে নেই! তবে মন্ত্রিসভার কোনও সদস্যের বয়স আঠারো পেরোয়নি। তারা যে সব স্কুলের ছাত্রী! খাতায় কলমে ভোটাধিকার না পেলেও স্কুলের মন্ত্রিসভার ভোটে তারা কোমর বেঁধে ভোট দেয়। মন্ত্রী নির্বাচিত করতে রীতিমতো নিয়ম মেনে বাক্সে ব্যালট ফেলে। এমন অভাবনীয় কাণ্ডই ঘটছে বেহালার রাজা রামমোহন রায় রোডে উচ্চবালিকা বিদ্যামন্দির বড়িষায়। যে স্কুলের রয়েছে নিজস্ব মন্ত্রিসভা। মন্ত্রীরা একাদশ শ্রেণি থেকে সবে দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠেছে। আর তাদের দপ্তরের সদস্যরা কেউ নবম, কেউ বা দশম শ্রেণির।
রাজ্য বা দেশের মন্ত্রিসভার মতোই স্কুলের মন্ত্রিসভায় কাজ কম নেই। তুমুল ব্যস্ততা। প্রতিটি মন্ত্রীর কাজ আলাদা। স্কুলে খেলাধুলা ঠিকমতো হচ্ছে কি না তার তদারক করে ক্রীড়ামন্ত্রী। স্কুলে মিড-ডে মিল দেওয়া হয়। খাদ্যদপ্তরের মন্ত্রী এবং তার ক্যাবিনেটের যারা সদস্য তারা দেখে ঠিকমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে রান্না হয়েছে কি না। অন্যদিকে, স্বাস্থ্যদপ্তরের মন্ত্রী এবং ক্যাবিনেট সদস্যদের কাজ, যারা খেতে বসছে তারা ঠিকমতো হাত ধুচ্ছে কি না সেদিকে কড়া নজর রাখা।
[আরও পড়ুন: রক্ষকই ভক্ষক! খাস কলকাতার হোমে টানা ১০ বছর ধরে লাগাতার ‘ধর্ষণ’ দুই নাবালিকাকে]
স্কুলে কারও চোট আঘাত লাগলেও ফার্স্ট এডের ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্যদপ্তরের সদস্যরা। স্কুলের সবুজ রক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ দপ্তরের মন্ত্রীর কাজ খাওয়ার পর কাগজ, প্লাস্টিকের প্লেট ঠিক জায়গায় ফেলা হচ্ছে কি না তার পর্যবেক্ষণ। খুদে মন্ত্রী আর তাদের ক্যাবিনেট সদস্যরা বৃহস্পতিবার দেখা করে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দারের সঙ্গে। অভিনব মন্ত্রিসভা দেখে তাজ্জব মেয়র পারিষদও। আগ্রহ প্রকাশ করেছেন স্কুলে যাওয়ার।
স্কুলের মধ্যে কীভাবে নির্বাচিত হয় মন্ত্রী? ইতিহাসের শিক্ষক শম্পা দেবদাস জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের মতোই রীতিমতো নিয়ম মেনে ভোট হয় স্কুলে। তবে তা পাঁচ বছর নয়, বছর বছর। উচ্চ বালিকা বিদ্যামন্দির বড়িষার শিক্ষিকা সোনালি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে কয়েকজন ছাত্রীকে আমরা বেছে নিই। তাতে মতামত নেওয়া হয় স্কুলের ছাত্রীদেরও। এরপরই হয় নির্বাচন। একাদশ শ্রেণির ছাত্রীরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন প্রধানমন্ত্রী-সহ অন্য মন্ত্রীদের। এই মুহূর্তে স্কুলের প্রধানমন্ত্রী সোহিনী সাহা জানিয়েছে, দেড় হাজার ছাত্রী রয়েছে আমাদের স্কুলে। শিক্ষিকাদের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও তাদের দিকে কড়া নজর রাখি। উঁচু ক্লাসের ছাত্রী হওয়ার সৌজন্যে আমাদেরও তো একটা দায়িত্ব আছে।