সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আয়লান কুর্দিকে মনে আছে? সমুদ্র সৈকতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা সেই শিশুর শবদেহ দেখে শিউরে উঠেছিল বিশ্ব। প্রশ্নের মুখে পড়েছিল তথাকথিত সভ্য সমাজের মূল্যবোধ। তবে কূটনীতিকদের তর্কের আসরে চায়ের কাপে তুফান উঠলেও শরণার্থী সমস্যার সমাধান মেলেনি। সংঘাতে দীর্ণ মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলি থেকে প্রাণ বাঁচাতে আজও ইউরোপের পথে পাড়ি দিচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। এবার সেই আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবেশ রুখতে নতুন বিল আনল ব্রিটেন।
সোমবার গভীর রাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে দীর্ঘ বিতর্কের পরে এই শরণার্থী বিল পাশ হয়েছে। এবার শুধু রাজা তৃতীয় চার্লসের সইটুকু বাকি। তারপরেই বিলটি পরিণত হবে আইনে। নতুন বিলে সাফ বলা হয়েছে, ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যে সব শরণার্থী নৌকা করে ব্রিটেনের উপকূলে এসে পৌঁছন, তাঁদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া যাবে না। ব্রিটেনের পছন্দ মতো কোনও ‘তৃতীয়’ দেশ, যেমন আফ্রিকার অত্যন্ত দরিদ্র দেশ রোয়ান্ডায়, পাঠিয়ে দেওয়া হবে। নিজের দেশে আইনে পরিণত হওয়ার পরে ব্রিটেনকে ফের এই আইন ইউরোপীয় আদালতে পেশ করতে হবে। সুনাক সরকার জানিয়েছে, গত বছরের রায়ের বিরুদ্ধে আগামী মাসেই আদালতে আপিল করবে তারা।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কনজারভেটিভ সরকারের এই বিলের কড়া সমালোচনা করেছে রাষ্ট্রসংঘ। আন্তর্জাতিক মঞ্চে শরণার্থীদের পুনর্বাসন নিয়ে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ব্রিটেন, নতুন বিলটি তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলে তোপ দেগেছেন রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। ব্রিটেনের কনজারভেটিভ সরকার বরাবরই কড়া শরণার্থী নীতির পক্ষে সওয়াল করে এসেছে। আগামী নির্বাচনে এটাই তাদের তুরুপের তাস হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
[আরও পড়ুন: দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সাবমেরিন, ‘জবাব’ দিতে জোড়া মিসাইল ছুঁড়ল কিমের দেশ!]
উল্লেখ্য, ২০১৮ থেকে ব্রিটেনে এসে পৌঁছনো শরণার্থীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। গত বছর ৪৫ হাজারেরও বেশি শরণার্থী ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ব্রিটেনে এসে পৌঁছেছিলেন। নতুন বিল পেশ করে সুনাক সরকার দাবি করেছিল, অতিমারী ও ব্রেক্সিট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে কড়া হাতে শরণার্থী সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। সুনাকের পূর্বসূরি বরিস জনসন প্রথম ‘রোয়ান্ডা প্ল্যান’-এর ঘোষণা করেছিলেন। গত মাসে সেই পরিকল্পনা বাতিল করে দেয় মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় আদালত।