সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মেলবোর্নে ভারত-পাকিস্তান (India vs Pakistan) উত্তেজক ম্যাচের নায়ক বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। তাঁর দুরন্ত ব্যাটিংয়ের জন্যই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে ভারত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (ICC T-20 World Cup) রক্তের গতি বাড়িয়ে দেওয়া সেই ম্যাচে কোহলির ব্যাটিং বিক্রম প্রশংসিত হয়েছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরাট কোহলির সঙ্গেই ট্রেন্ডিং নো বল। প্রাক্তন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা ফুঁসছেন সেই নো বলের (No Ball) সিদ্ধান্ত নিয়ে।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ১৬ রান। বাঁ হাতি পাক স্পিনার মহম্মদ নওয়াজ প্রথম বলেই তুলে নেন হার্দিক পান্ডিয়ার উইকেট। দ্বিতীয় বলে এক রান নেন দীনেশ কার্তিক। তৃতীয় বলে কোহলি ২ রান নেন। জেতার জন্য শেষ ৩ বলে ভারতের দরকার ছিল ১৩ রান। এই সময়ে নওয়াজের ফুলটস গ্যালারিতে পাঠান কোহলি। আম্পায়ারদের দিকে তাকিয়ে কোহলি জানতে চান বলটা তাঁর কোমরের উপরে ছিল। এটা কি নো বল নয়? আম্পায়ার এরাসমাস কিছুক্ষণ পরে নো বল দেন। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। তাঁরা জানতে চান কেন নো বল দেওয়া হল। ফ্রি হিটের ডেলিভারিতে বোল্ড হন কোহলি। তিন রান নেন সেই ডেলিভারি থেকে। বাকি কাজটা করেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
আম্পায়রদের দেওয়া নো বলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা। পাক সমর্থকরাও ক্ষুব্ধ আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে। খেলা শেষ হওয়ার পরে সেই বিতর্কিত ফুলটস ডেলিভারিতে কোহলির মারা শটের ছবি পোস্ট করেন প্রাক্তন পাক পেসার শোয়েব আখতার। সেই ছবি পোস্ট করে শোয়েব লেখেন, ”আম্পায়ার ভাইও, ফুড ফর থট আজ রাত কে লিয়ে।”
রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস আর কিছু লেখেননি। কিন্তু শোয়েবের এমন ক্যাপশন নিয়ে শুরু হয়ে যায় জোর চর্চা। ভারতীয় সমর্থকরা দেখাতে থাকেন আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। যদিও শোয়েব আখতার আগে টুইট করেছিলেন, নো বল হয়নি। পরে অবশ্য তা ডিলিট করে দেন শোয়েব।
[আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইতিহাস বাংলাদেশের, নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে জয়যাত্রা শুরু টাইগারদের]
পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক ওয়াসিম আক্রম নো বল প্রসঙ্গে বলছেন, ”আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল বলটা নীচে নেমে আসছে। খালি চোখে মনে হয়নি নো বল ছিল। স্লো মোশনে মনে হয়েছে বলটা নীচের দিকেই নেমে আসছিল। যে কোনও ব্যাটসম্যানই নো বলের জন্য আবেদন করবে। এটা কোহলির দোষ ছিল না। উত্তেজক একটা ম্যাচ। তোমার হাতে প্রযুক্তি রয়েছে। সেটাকে ব্যবহার কর। কেন একটা বিষয় নিয়ে অযথা বিতর্ক উস্কে দেওয়া?”
এবারের বিশ্বকাপে ধারাভাষ্যকারদের প্যানেলে নেই ওয়াসিম আক্রম এবং ওয়াকার ইউনিস। আক্রম বলেন, ”আমি আর ওয়াকার ধারাভাষ্যকারদের প্যানেলে নেই। আমরা থাকলে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতাম। যেটা মনে হচ্ছে সেটাই বলতাম।”
ওয়াকার আবার মনে করেন আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দেরি করেছেন। কোহলি প্রতিবাদ করাতেই আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নেন। একসময়ের ভয় ধরানো বোলার বলছেন, ”বলটা যখনই কোমরের উপরের উচ্চতায় থাকে তখন স্কোয়ার লেগ আম্পায়ার ইঙ্গিত দেন ডেলিভারিটা নো। এরাসমাস খুবই অভিজ্ঞ একজন আম্পায়ার। যদি রিপ্লে ভাল করে দেখা হয় তহালে দেখা যাবে এরাসমাস পিছনে ঘুরে বলটা দেখছিল। বিরাট কোহলি যখন নো বলের জন্য ওর উপরে চাপ তৈরি করে তখন …।”
ওয়াকার আরও বলেন, ”এটা নো বল বা নো বল নয়, তা নিয়ে আমি বলতে চাই না। বিতর্কে ঢুকতে আমি চাই না। বিরাট কোহলি নো বলের জন্য আবেদন করতেই পারে। এটা ওর অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। ও সেটাই করেছে। স্কোয়্যার লেগ আম্পায়ার আরেক আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টা পাঠাতে পারত থার্ড আম্পায়ারের কাছে। থার্ড আম্পায়ার তো সেই কারণেই বসে রয়েছেন। সেই বলতে পারত, ওটা নো বল না ছক্কা।”
পাকিস্তানের আরেক প্রাক্তন অধিনায়ক শোয়েব মালিক ওয়াকার ও ওয়াসিমের সুরেই সুর মেলাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, ”তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য নেওয়া অবশ্যই উচিত ছিল। বিশেষ করে এই ধরনের উত্তেজক ম্যাচে এবং ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। ভুল হতেই পারে তবে তৃতীয় আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। রিপ্লে দেখার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে বিষয়টা ঠিক ছিল।”
পাকিস্তানের প্রাক্তন উইকেটকিপার মইন খান আবার বলছেন, ”রিপ্লে দেখে মনে হচ্ছে বলটা সত্যিই নো ছিল। কিন্তু এই ধরনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তৃতীয় আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনা করাই উচিত ছিল। তৃতীয় আম্পায়ারের সঙ্গে কথা না বলাটাই ভুল হয়েছে।”
শেষ ওভারে নওয়াজের করা নো বল নিয়ে বিতর্ক চলছেই।