সুকুমার সরকার, ঢাকা: মায়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ‘গণহত্যা’র ছক কষেই রাখাইন প্রদেশে অভিযান চালিয়েছিল। শ’য়ে শ’য়ে নিরাপরাধ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়া ও জলে ভাসিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনার জেরেই সাত-আট লক্ষ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আর রোহিঙ্গাদের হত্যায় বিদ্বেষ ছড়াতে সাহায্য করেছিল নোবেলজয়ী আং সান সু কি’র নেতৃত্বাধীন সরকার। সোমবার রোহিঙ্গা কাণ্ড নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের তৈরি করা স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পেশ করা রিপোর্টে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গণহত্যার ছক কষা এবং সাত লক্ষ রোহিঙ্গাকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করার অপরাধে অভিযুক্ত সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং ও পাঁচ শীর্ষ সেনাকর্তাকে বিচারের জন্য আদালতে হাজির করার সুপারিশ করেছে রাষ্ট্রসংঘের মিশন।
[রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে বাল্যবিবাহ, জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ]
ইন্দোনেশিয়ার প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল মারজুকি দারুসমানের নেতৃত্বে গঠিত রাষ্ট্রসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন প্রায় এক বছর ধরে রাখাইন প্রদেশের পাশাপাশি কক্সবাজারের বিভিন্ন শরনার্থী শিবির ঘুরে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের নানা তথ্য সংগ্রহ করেছে। কথা বলেছে, মায়ানমার সেনা ও পুলিশের গোয়েন্দাদের সঙ্গেও। এদিন ২০ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে মিশন। প্রকাশের আগে মিশনের তরফে রিপোর্টটি মায়ানমার সরকারকেও পাঠানো হয়। কিন্তু সরকার তো দূরের কথা, মায়ানমার সেনার মুখপাত্র মেজর জেনারেল তুন তুন নাইকে ফোন করা হলেও কোনও মন্তব্য করেননি বলে সংবাদসংস্থা রয়টার্সের তরফে দাবি।ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং অংয়ের নামও রয়েছে, যার বাহিনী উপকূলীয় ইন দিন জেলায় অভিযানের দায়িত্বে ছিল। ওই এলাকায় ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে মাটির নিচে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। রয়টার্স এই ঘটনা প্রকাশ্যে আনার পর মায়ানমার সেনা ঘটনা স্বীকারে বাধ্য হয়েছিল। সাত সেনাকে দশ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে সু কি সরকার।
মিশনের রিপোর্টে রয়েছে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ। রাষ্ট্রসংঘের নীতি অনুযায়ী, কোনোও নির্দিষ্ট জাতি, ধর্ম বা বর্ণের গোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিতে ছক কষে অভিযান হলে তাকে গণহত্যা হিসেবে ধরা হয়। তথ্য অনুসারে রোহিঙ্গাদের হত্যা ও অগ্নি সংযোগের ঘটনাকে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্টে ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ বলা হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের এই রিপোর্ট প্রকাশের পরে বস্তুত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মায়ানমারের সু কি সরকার আরও চাপে পড়ে গেল। এদিকে রাখাইনে গণহত্যা এবং বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য প্রচারের অভিযোগে মায়ানমারের সেনাপ্রধানকে নিষিদ্ধ করেছে ফেসবুক। ফেসবুকের পক্ষ থেকে সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
[রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জটিলতা তৈরি করছে বাংলাদেশ, দাবি মায়ানমারের]
The post রোহিঙ্গা গণহত্যায় রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট, কাঠগড়ায় মায়ানমারের সেনাপ্রধান appeared first on Sangbad Pratidin.