এবছর করোনা আবহেই পুজো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাবগুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ কলকাতার বাছাই করা কিছু সেরা পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন বেহালা নূতন দলের পুজো প্রস্তুতি৷
সুলয়া সিংহ: রবি ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমলের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় জানলার গরাদ। সেই গরাদের মাঝে একচিলতে ফাঁকই ছিল তার বিরাট পৃথিবী দেখার একমাত্র অবলম্বন। বর্তমান সমাজে দাঁড়িয়ে সুদূরের ব্যাকুলতায় ঘরবন্দি অসংখ্য ‘অমল’। কল্পনার রাজ্যেই কেবল বিচরণের সুযোগ তাদের। সকলেই তাই মুক্তির পথ খুঁজছে। পৃথিবীর আজ গভীর অসুখ। বাইরে পা ফেললেই ওঁত পেতে বসে বিপদ। তাই বন্ধ জানলায় দমবন্ধ দিশাহারা মানুষ কল্পলোকের অমোঘ আকর্ষণে মুক্তির পথের খোঁজে। ঠিক অমলের মতো। রবি ঠাকুরের সেই অমলই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে অতিমারী পরিস্থিতিতে। আর অমলের হাত ধরে সেই মুক্তির পথের খোঁজ করবে বেহালা নূতন দল। তাদের এবারের থিম ‘অমলের পুজো’।
[আরও পড়ুন: করোনা কালে জীবনের রূপান্তরই বড়িশা সর্বজনীনের এবারের পুজো ভাবনা]
শিল্পী বিশ্বনাথ দে’র ভাবনায় এবার সাজছে মণ্ডপ। গোটা মণ্ডপজুড়ে মুক্তির জন্য অমলের ব্যাকুলতাকে ফুটিয়ে তুলতে প্রচুর জানলার ব্যবহার করেছেন শিল্পী। আর যোগাযোগের মাধ্যম যখন ছিল শুধুই চিঠি, তাই পোস্ট বক্সের গুরুত্বও চোখে পড়বে। সেখানে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকেই যেন অমলকে অনুভব করতে পারবেন। আসলে দীর্ঘদিনের গৃহবন্দি জীবনে রবি ঠাকুরের সেই চরিত্রটির প্রতিবিম্বই তো সকলের উপর গিয়ে পড়েছে। একইভাবে আবার এই বদ্ধ জীবনে ছিল মৃত্যুভয়ও। তাই চিরবিদায় নেওয়ার আগে আরও একবার বাঁচার আস্বাদ নিতে যেন মরিয়া মানুষ। অমলও তেমনটাই চেয়েছিল। শ্যামলী নদীর ধারে, দূরে আরও দূরে খুঁজেছিল মুক্তির পথ। সেই রচনা আর কঠিন বাস্তব আজ মিলেমিশে একাকার।
শিল্পী বলছিলেন, “এখানে আলাদা করে কোনও অমল থাকবে না। আসলে আমাদের সকলের হাল তো এখন অমলের মতোই। তাই রবি ঠাকুরের থেকে সেই ঘরবন্দি থাকার ব্যাকুলতার কাহিনি ধার নিয়েই চিন্তার বিস্তার ঘটিয়েছি। এখানে সুধার মধ্যে তুলে ধরেছি মা দুর্গাকে। ফুলই যার অঙ্গসজ্জা। আর এই গোটা পরিবেশকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিতে শরণাপন্ন সেই কবিগুরুরই। ‘সমুখে শান্তি পারাপার…’ গানটি এই ভাবনার সঙ্গে অদ্ভুতভাবে মিলে গিয়েছে।” সঞ্জয় দাসের আবহ ও সংযুক্তা দাসের কণ্ঠে এবারের পুজোয় মুক্তির পথ খুঁজবে মানুষ। বেহালা নূতন দলের মণ্ডপে।
