shono
Advertisement

অষ্টধাতুর কনক দুর্গা পূজিত হন চিল্কিগড় রাজবাড়িতে

এক সময় পুজোয় নরবলি ছিল রীতি। The post অষ্টধাতুর কনক দুর্গা পূজিত হন চিল্কিগড় রাজবাড়িতে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 06:01 PM Oct 07, 2018Updated: 06:01 PM Oct 07, 2018

পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির Sangbadpratidin.in৷ আজ রইল চিল্কিগড় রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর কথা।

Advertisement

সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: চিল্কিগড় রাজবাড়ির কুলদেবী কনক দুর্গার পুজো ঘিরে জড়িয়ে আছে নানা গল্পকথা। আর এর সঙ্গে রয়েছে চিল্কিগড়ের রাজ পরিবারের পাঁচশো বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাস।

একসময় কনক দুর্গার পুজোয় নরবলি ছিল রীতি। কিন্তু রাজার রাজত্বে তাঁর কোনও প্রজা বা ব্রাহ্মণ সন্তানের বলি দেওয়া হত না। কিন্তু ভুলবশত একবার বলির জন্য এক ব্রাহ্মণ সন্তানকে নিয়ে আসা হলে তারপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় নরবলি প্রথা। কিন্তু নরবলি বন্ধ হলেও আবহমান সময় ধরে কনক দুর্গার পুজোয় পশুবলির রীতি আজও চলে আসছে।

[পুজোতেও সিক্যুয়েল, উষ্ণায়ন প্রতিকারে এ মণ্ডপে শিল্পীর ভাবনা সবুজায়ন]

ঘন জঙ্গল ঘেরা, ডুলুং নদীর ধারে একান্ত নির্জন স্থানে রাজপরিবারের কনক দুর্গার পুজো শুরু হয়েছিল প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে। দেবী কনক দুর্গা এখানে দুর্গা রূপে পূজিতা হয়ে আসছেন। বিভিন্ন বই এবং স্থানীয় রাজপরিবার সূত্রে জানা যায়, ঘন জঙ্গলের মধ্যে ডুলুং নদীর তীরে সামন্ত রাজা গোপীনাথ মত্তগজ সিংহ স্বপ্নাদেশ পেয়ে প্রথম কনক দুর্গার পুজো শুরু করেছিলেন।

লোকশ্রুতি আছে এই সামন্ত রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন রানির হাতের সোনার কঙ্কণ এবং অষ্টধাতু দিয়ে তৈরি করতে হবে দেবীমূর্তি। জানা যায়, দেবী কনক দুর্গা স্বপ্নে রাজাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রতিমার আকার কেমন হবে এবং কোন স্যাকরা তাঁকে মূর্তির রূপ দেবে। দেবীর নির্দেশ মেনে চিল্কিগড়ের স্যাকরা যোগেন্দ্র কামিল্যাই তাঁকে নির্মাণ করেন এবং দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন রামচন্দ্র ষড়ঙ্গী। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত রামচন্দ্র ষড়ঙ্গীর বংশধররা দেবীর পুজো করে আসছেন। দেবীর নির্দেশ অনুযায়ী, দেবী অশ্ববাহিনী, চতুর্ভুজা।

[পুজোয় ঈশান কোণে ঈশানীর আরাধনায় ব্রতী বেলেঘাটা ৩৩ পল্লি]

এই রাজপরিবারের কুলদেবী কনক দুর্গা। রোজই তিনি পূজিতা হন। কিন্তু দুর্গাপুজোর সময় অষ্টমী, নবমীতে বলি হয় কনক দুর্গার মন্দিরের সামনেই। এছাড়া অষ্টমীর সন্ধিপুজোর সময় এবং রাতে নিশাপুজোর সময় বলি হয়। ষষ্ঠী, সপ্তমীতে ষোড়শোপচারে হয় দেবীর পুজো। পুজার ক’টা দিন রাজ্য-সহ পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় চিল্কিগড়ে কনক দুর্গার পুজো দেখতে।

পুজোর দিন ছাড়াও নিত্যপুজোতে দেবীর ভোগ বেশ চিত্তাকর্ষক। শনি ও মঙ্গলবার খিচুড়ি এবং নানা ব্যঞ্জন। এছাড়া অন্যান্য দিন দেবীকে অন্ন, মাছ, ঘণ্ট, ভাজা, তরিতরকারি ভোগ দেওয়া হয়। সন্ধ্যা আরতির পর পরমান্ন দিয়ে দেবীকে ভোগ দেওয়া হয়। এই পুজোর বর্তমান সেবাইত বংশপরম্পরায় ব্রিজেশচন্দ্র দেউ ধবলদেব। বর্তমান পূজারি আতঙ্কভঞ্জন ষড়ঙ্গী এবং তাঁর ছেলে গৌতম ষড়ঙ্গী দেবীর পুজো করে আসছেন। দুর্গাপুজোয় পরিবারের সদস্যরাও পুজো করেন।

[কাশফুলের মাঝে মায়ের আগমনি বার্তা, উৎসবের মেজাজ এই মণ্ডপে]

আতঙ্কভঞ্জন ষড়ঙ্গীকে চিল্কিগড়ের রাজবাড়ির ইতিহাসের আকর বলা যায়। বৃদ্ধ বয়সেও রাজপরিবারের তারিখ সম্বলিত ইতিহাস তাঁর কন্ঠস্থ। তিনি বলেন, “আমাদের পরিবার তথা রামচন্দ্র ষড়ঙ্গী দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই থেকে আমি এবং আমার পরিবার দেবীর পুজো করে আসছি। প্রায় পাঁচশো বছর আগে সামন্ত রাজা গোপীনাথ মত্তগজ সিংহ স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবী কনক দুর্গার পুজো শুরু করেন। আজও সমান নিষ্ঠার সঙ্গে সেই পুজো হয়ে আসছে।”

অশ্ববাহিনী চতুর্ভুজা কনক দুর্গা রাজপরিবারের কুলদেবী। নিত্যপুজো দেখতেই এখনও ভিড় করেন স্থানীয়রা। পর্যটকদের কাছেও এই কনক দুর্গা মন্দিরের আকর্ষণ কম নয়। ডুলুং নদীর ধারে ঘন জঙ্গলে একটা সময় শুরু হয়েছিল রাজপরিবারের এই পুজো। এখনও একইরকম নিষ্ঠার সঙ্গে চিল্কিগড়ের রাজবাড়ির সেই পুজো চলছে। স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবী দুর্গার আরাধনা এত বছর ধরে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে ঝাড়গ্রামের মানুষের কাছে৷

The post অষ্টধাতুর কনক দুর্গা পূজিত হন চিল্কিগড় রাজবাড়িতে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement