দেব গোস্বামী, বোলপুর: শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর আন্তর্জাতিক সংগ্রহশালা বাংলাদেশ ভবন নিয়ে অনিশ্চয়তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বভারতীর সঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনও যোগাযোগ করেনি। মেলেনি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ইঙ্গিত বা নির্দেশ। তাই কবে খুলবে বিশ্বভারতীর বাংলাদেশ ভবন সংগ্রহশালা তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে।
এই মুহূর্তে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনও রকম ঝুঁকি নিতে নারাজ। বাংলাদেশে নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর প্রায় দুমাস অতিক্রান্ত। এখনও পর্যন্ত নতুন সরকারের সঙ্গে বিশ্বভারতীর যোগাযোগ বা সমন্বয় হয়নি। বিশ্বভারতীর বাংলাদেশ ভবন ওপার বাংলার অর্থানুকূল্যেই নির্মিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য থেকে ৭১ -এর মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত নথি, তথ্য, নিদর্শন রয়েছে এই সংগ্রহশালায়। দেশ-বিদেশের পর্যটক থেকে সাধারণ মানুষের জন্য কবে খুলবে ভবনের সংগ্রহশালা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সকলেই।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকারের ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দে বিশ্বভারতীর ইন্দিরা গান্ধি জাতীয় সংহতি কেন্দ্রের মাঠে প্রায় কয়েক একর জায়গা জুড়ে তৈরি হয় আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবন। ২০১৮ সালের ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ভবনের নকশা তৈরি করেছিলেন স্বয়ং বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নিজেই। পরে এই ভবন পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১০ কোটি টাকা বরাদ্দও করে। চুক্তি হয় এই টাকা ব্যাঙ্কে জমা করেই প্রাপ্য সুদের অঙ্ক দিয়ে বাংলাদেশ ভবন রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। আর ভবনের দায়িত্ব বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের।
এই ভবনে সংগ্রহশালা ছাড়াও রয়েছে গ্রন্থাগার, সভাকক্ষ, প্রেক্ষাগৃহ। দুই বাংলার ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণার ব্যবস্থাও রয়েছে বিশ্বভারতীর বাংলাদেশ ভবনে। আর বিশ্বভারতীতে প্রতি বছর প্রায় ৪০ জন বাংলাদেশের পড়ুয়া ভর্তিও হয়ে থাকেন। বর্তমানে বিশ্বভারতীতে ৩৫ জন বাংলাদেশি পড়ুয়াও রয়েছেন। কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতনে বেড়াতে আসা সুচিস্মিতা দাসগুপ্ত ও শ্যামল ভৌমিক জানান, ‘‘শান্তিনিকেতনে বেড়াতে এসে বাংলাদেশ ভবন দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। কারণ মুক্তিযুদ্ধের বহু মূল্যবান ছবি-সহ নথি ও গ্রন্থ রয়েছে। না দেখতে পেয়ে হতাশ হয়েই বাড়ি ফিরছি।’’
এমনকি, বাংলাদেশ ভবনে সংরক্ষণের জন্য গত ১৫ জুলাই বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল শান্তিনিকেতনে এসে মুজিবর রহমানের একটি বৃহৎ ভাস্কর্য প্রাক্তন হাসিনা সরকার বিশ্বভারতীর হাতে তুলে দেয়। সেটিও রয়েছে আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবনে। এনিয়ে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ জানান, ‘‘বাংলাদেশের নতুন সরকার এখনও পর্যন্ত যোগাযোগ করেনি। ভারত সরকার থেকেও কোনও নির্দেশ আসেনি৷ এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ভবন খুলে দেওয়া হয়নি। নির্দেশিকা পেলেই খুলে দেওয়া হবে সর্বসাধারণের জন্য।’’ তবে পড়ুয়াদের জন্য অফিস ও গ্রন্থাগার খোলা রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।