নব্যেন্দু হাজরা: ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া রাস্তায় গাড়ি বেরোলেই এবার তা সিজ করা হবে। শুরু হবে আনফিট গাড়ি ধরপাকড়। সোমবার কসবা পরিবহন ভবনে বৈঠক শেষে একথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)।
এদিন মন্ত্রী বলেন, “যেভাবেই হোক দুর্ঘটনা কমাতে হবে। যে বাসের সিএফ হয়নি অথচ তা চলছে তেমন গাড়ি ধরা হবে।” রবিবার ডরিনা ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত মিনিবাসটির প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী এদিন বলেন, “শুধু তো ওই একটা বাস নয়, আরও এমন অনেক আনফিট বাস হয়তো ঘুরছে রাস্তায়, এগুলোকে ধরা হবে। পুলিশ এবং আরটিওদের বলেছি বেআইনি গাড়ি ধরতে।” উল্লেখ্য, দুর্ঘটনাগ্রস্ত মিনিবাসটির ছিল না কোনও বৈধ কাগজপত্র, ফিটনেস সার্টিফিকেট। এমনকী বাসটির বিরুদ্ধে থানায় ২০৩ ট্রাফিক মামলা ছিল।
[আরও পড়ুন: বেশ কিছু ক্ষেত্রে আরও ছাড় দিয়ে রাজ্যে বাড়ল কোভিড বিধির মেয়াদ, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর]
নতুন ট্রাফিক আইনে যে জরিমানা ধার্য্য হয়েছে তা যে কোনওভাবেই কমানো হবে না তাও এদিন পরিষ্কার করে দেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, ” যে জরিমানা নির্ধারিত হয়েছে তাই দিতে হবে। আইন ভাঙলে তার শাস্তি তো পেতে হবে। সকলকেই বলব, জরিমানা যাতে না হয়, সেদিকে নজর দিন। আইন না ভাঙলে তো আর জরিমানা দেওয়ার ব্যাপার নেই।”
এদিকে জরিমানা বৃদ্ধির নয়া আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বাস-ট্যাক্সি-ট্রাক সংগঠনগুলো। সাতটি সংগঠন মিলে তৈরি হয়েছে পরিবহন বাঁচাও কমিটি। এদিন কসবা পরিবহণ ভবনে বিক্ষোভ দেখান তারা। জমা দেন ডেপুটেশনও। বিক্ষুব্ধ দাবি, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশিত বর্ধিত জরিমানা যদি পরিবর্তন না করা হয়, তবে বড়সড় আন্দোলনের পথে নামা হবে। মঙ্গলবার এই একই দাবিতে লেনিন সরণিতে বিক্ষোভ দেখাবে ওয়েস্টবেঙ্গল ট্যাক্সি অপারেটরস কো অর্ডিনেশন কমিটি। এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “এসব করলে জরিমানা কমবে না। কেন চাপের মুখে সিদ্ধান্ত বদল হবে? তাহলে সরকার চলবে কী করে!” পাশাপাশি কোথাও পুলিশ যদি অকারণে কেস দেয় সেক্ষেত্রে উপযুক্ত তথ্য সমেত তাঁকে জানানোর কথাও জানিয়েছেন মন্ত্রী।
তবে সরকার যতই চেষ্টা করুক শহরে এখনও বেপরোয়া যানের দৌরাত্ম্য অব্যাহত। ফিট সার্টিফিকেট ছাড়াই ছুটছে গাড়ি। চলছে দুই বাসের রেষারেষিও। লকডাউনে দীর্ঘদিন বসে থাকার পর রাস্তায় গাড়ি নেমেছে। ফলে বেশিরভাগ গাড়িই আনফিট। কাগজপত্র ঠিক নেই। তবুও সেই অবস্থাতেই যাত্রী নিয়ে ছুটছে গাড়ি। বাসমালিকদের দাবি, সমস্ত কাগজপত্র ঠিক করে গাড়ি ফিট করে নামাতে যে পরিমাণ খরচ তা অধিকাংশ মালিকেরই বহন করার মতো এখন সামর্থ্য নেই। তাই ঝুঁকি আছে জেনেও রিশোল টায়ার আর জোড়া তাপ্পি মেরে বাস ঠিক করেই তাদের নামাতে হচ্ছে।
মালিক ও চালকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, খারাপ রাস্তা ও ট্রাম লাইনের কারণে টায়ার তাড়াতাড়ি খারাপ হয়। পিছনের চাকার নতুন এক জোড়া টায়ারের দাম ৩০-৪০ হাজার টাকা। আর সামনের এক জোড়া টায়ারের দাম ১২-১৮ হাজার। এতো টাকা দিয়ে টায়ার বদলানোর সামর্থ্য তাদের নেই। তাই ঝুঁকি আছে জেনেও তিন-চার হাজার টাকায় রিসোল টায়ারই তাঁদের ভরসা।