নন্দন দত্ত ও রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: দলের নিচুতলার সংগঠন নিয়ে পাওয়া রিপোর্টে সন্তুষ্ট নন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগেই পঞ্চায়েত ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বুথ সংগঠন নিয়ে যে রিপোর্ট জমা পড়েছে তাতে খুশি নন শাহ। শুক্রবার রাতে নিউটাউনের এক হোটেলে দলের কোর কমিটির সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠকে এমনটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি স্পষ্ট করে রাজ্যনেতাদের বলে দিয়েছেন, খাতায়-কলমে নয়, বাস্তবে সংগঠন গড়ে দেখাতে হবে। ২০১৯’এর লোকসভা ভোটে যে সাফল্য এসেছিল সেই ভোটব্যাংক ধরে রাখতে হবে। বামেরা যেন কোনওভাবেই ‘অ্যাডভান্টেজ’ না পায় তা দেখতে হবে। পাশাপাশি বলেছেন, পঞ্চায়েতের মধ্যে দিয়ে বুথ তৈরি করলে তার লাভ লোকসভা ভোটে পাওয়া যাবে। তাই বুথ শক্তিশালী না করলে সাফল্য আসবে না।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বৈঠকে পঞ্চায়েত ভোটে আধাসেনা দেওয়ার দাবি তোলেন। বিষয়টি কোর্টের বিচার্য বলে নস্যাৎ করে দেন শাহ। তিনি শুভেন্দুদের পালটা বলেন, ‘‘নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির উপর ভরসা করুন। সংগঠন গড়ে তুলুন।’’ জনসংযোগ বাড়াতে প্রত্যেককে প্রতিটা পরিবারের কাছে পৌঁছনোর বার্তাও দিয়েছেন শাহ। সাংসদ-বিধায়ক ও দলীয় নেতৃত্ব সকলকে একসঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। লোকসভায় কীভাবে আসন বাড়ানো সম্ভব, তা হিসেব কষে বুঝিয়ে দেন। পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে অন্য দলের কর্মীদেরও নিয়ে আসার যে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা আবার সিউড়িতে বীরভূমের জেলানেতাদের নিয়ে বৈঠকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ, বঙ্গ বিজেপির সংগঠন বাড়াতে অন্য দলের কর্মীদের যোগদান করানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি, এমনটাই সূত্রের খবর।
[আরও পড়ুন: ‘গাঁটছড়া’র শুটিং ফ্লোরে ‘হস্তমৈথুন’! অনিন্দ্যর ভিডিও দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড়]
দলের অন্দরে অমিত শাহর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সুনীল বনশল এবং মঙ্গল পাণ্ডে। এই দু’জনকেই বাংলার পর্যবেক্ষক করেছেন তিনি। জেলায় জেলায় ঘুরে পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন সুনীল ও মঙ্গল। বঙ্গ বিজেপির সংগঠনে কোথায় গলদ রয়েছে, তার রিপোর্ট এদিন রাতে কোর কমিটির বৈঠকে শাহকে দেন এই দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক। দলের আন্দোলন-কর্মসূচি আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বৈঠকে। এদিন সিউড়িতে জাতীয় সড়কের পাশে বিজেপির পার্টি অফিসের উদ্বোধন করেন অমিত শাহ। বীরভূম সাংগঠনিক জেলার ১৪৫ জন কর্মীকে নিয়ে বৈঠক করেন। জেলার নেতাদের বৈঠকে শাহ বলেন, তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির লড়াই হবে। ‘সেটিং তত্ত্ব’ যারা (বামেরা) প্রচার করছে, তা মিথ্যা বলে এদিন স্পষ্ট করে দেন অমিত। বীরভূমের লোকসভা আসন জেতার জন্য কর্মীদের কাছে আহ্বান জানান।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের সংগঠনকে মজবুত করতে সংগঠন নিয়ে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বেঁধে দেওয়া সত্ত্বেও তা পূরণ করতে পারেনি বঙ্গ বিজেপি। বুথ গড়তে ব্যর্থতা। আর একুশের ভোটের পর থেকেই বিজেপির গ্রাফ নিম্নমুখী। ফলে লোকসভার আগে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে বলে দিয়েছেন, নিজেদের জোরে লড়তে হবে। সবক্ষেত্রে দিল্লির উপর ভরসা করলে হবে না। এদিন শাহর সফরসূচিতে ছিলেন না বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
দিলীপবাবুর না থাকাটা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে দলে। দিলীপ ঘোষ অবশ্য জানিয়েছেন, সংসদের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক থাকায় তিনি পোর্টব্লেয়ারে ছিলেন। আবার বীরভূমের দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এদিন সিউড়ির সভায় ছিলেন না। লকেটও সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে গোয়ায় গিয়েছিলেন। সিউড়ির সভায় দিলীপ ও লকেটের অনুপস্থিতি নিয়ে দলের মধ্যে চর্চাও চলেছে। গোয়া থেকে ফিরে রাতে শাহর বৈঠকে অবশ্য যোগ দেন লকেট। রাতের বৈঠকে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক ছাড়াও সুকান্ত, শুভেন্দু, শান্তনু ঠাকুর, দেবশ্রী চৌধুরি, অগ্নিমিত্রা পাল, রাহুল সিনহা প্রমুখ ছিলেন। মে মাসের ৮ ও ৯ তারিখে ফের রাজ্যে আসবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।