সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি ডিস্কো কিং। তাঁর সুর দেওয়া গান মানেই নতুন ট্রেন্ড। ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘ডান্স ডান্স’ ছবির গানে আজও হইচই ওঠে যে কোনও ক্লাবে, ডিস্কো থেকে। তাঁর সুরে পা স্থির রাখা খুব কঠিন। সত্তর থেকে আশির দশকে বাপি লাহিড়ীর (Bappi Lahiri) ম্যাজিকই ছিল এমন। তবে শুধু ডিস্কো গানেই নয়, রোমান্টিক গানেও বাপি লাহিড়ীর সুরে ছিল সমান জাদু। বাংলা ছবি ‘অমরসঙ্গী’র ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ তো এখনও প্রেমের গানের তালিকায় শীর্ষে। তবে জানেন, সেই বাপি লাহিড়ীই একবার ঠিক করে ছিলেন সংগীত জগত ছেড়ে দেবেন! আর এর নেপথ্যের কারণ ছিল, কিশোরকুমার!
কিশোরকুমার সম্পর্কে মামা ছিলেন বাপি লাহিড়ীর। কিশোরকুমারও অত্যন্ত স্নেহ করতেন বাপিকে। বাপি লাহিড়ীর সুরে একের পর গান গেয়েছেন কিশোরকুমার। সে গানও আজও গানপ্রেমী মানুষদের মুখে মুখে। কিন্তু জানেন কি এই কিশোরকুমারের জন্যই বাপি লাহিড়ী ঠিক করেছিলেন সংগীতজগত ছেড়ে দেবেন। জানা যায়, কিশোরকুমারের মৃত্যুর পর একেবারেই ভেঙে পড়েছিলেন বাপি। আর তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর কোনও দিনও গানে সুর দেবেন না। পরে অবশ্য় সে সিদ্ধান্ত বদলেও দেন অনুরাগীদের কথা ভেবে। শুধু গানেই নয়, কিশোরকুমারের সঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয়ও করেছিলেন বাপিদা।
১৯ বছর বয়সে কলকাতা থেকে মুম্বই পাড়ি দেন বাপি লাহিড়ী। বলিউডে শুরু করেন সুরের যাত্রা। ১৯৭৩ সালে ‘ননহা শিকারি’ ছবি থেকে সুরকার হিসেবে তাঁর কেরিয়ার শুরু। প্রথম থেকেই নজর কেড়ে নেন বাপি লাহিড়ী। তবে তাঁর আগে ১৯৭২ সালে বাংলা ছবি দাদুতে সুর দিয়েছিলেন লাহিড়ী।
সে সময় মহম্মদ রফি ও কিশোরকুমারের মধ্যে ছিল কঠিন লড়াই। রফি ভাল, নাকি কিশোর তা নিয়ে তুমুল তরজা লেগেই থাকত অনুরাগীদের মধ্যে। এই সময়ই অসাধ্য সাধন করলেন বাপি লাহিড়ি। ‘জখমি’ ছবির জন্য একসঙ্গে বাপি ও রফিকে গানও গাওয়ালেন তিনি। যা কিনা ইতিহাস তৈরি করেছিল।
গোটা কেরিয়ারে ৫০০টি ছবিতে পাঁচ হাজারের বেশি গানে সুর দিয়েছেন বাপি লাহিড়ী। একদিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গানের রেকর্ডিং করায় তাঁর নাম ‘গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড’ রেকর্ডেও উঠেছিল।
[আরও পড়ুন: Sandhya Mukherjee: প্রয়াত গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপ্যাধ্যায়, কী প্রতিক্রিয়া কবীর সুমনের?]
তবে শুধু সুরকার হিসেবে নয়, বাপি লাহিড়ির স্টাইল স্টেটমেন্টও নজর কেড়েছিল সবার। সোনার গয়নার প্রতি তাঁর আলাদা ভালবাসা ছিল। নানারকম সোনার গয়না পরতেও ভালবাসেন তিনি। জানা যায়, প্রত্যেক দিনই নতুন নতুন রকমের গয়না পরতেন। তাঁর গলায় শোভা পেত আটটি সোনার চেন! যা তিনি রোজ বদলে নিতেন।
বাপি লাহিড়ীর গলায় ছিল গণেশের একটি লকেট। সেই লকেট ছিল পান্নাখচিত। বাপি লাহিড়ী এক সাক্ষাৎকারে জানিয়ে ছিলেন, মাইকেল জ্যাকশন নাকি একবার তাঁর এই লকেটের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। এবং বাপি লাহিড়ির কাছে এটি চেয়েও ছিলেন!
ডিস্কো ডান্সার ছবির ‘জিমি জিমি’ গান কে না শুনেছে। এই গানটি এতটাই হিট হয়ে যে হলিউডের ছবিতেও ব্যবহার করা হয় বাপি লাহিড়ীর এই গান। হলিউড ছবি ‘ইউ ডোন্ট মেস উইথ দ্য জোহানস’ ছবিতে শোনা যায় ‘জিমি জিমি আজা আজা’।
গায়ক, সুরকারের পাশাপাশি সমাজসেবকও ছিলেন বাপি লাহিড়ী। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জাস্টিস ফর উডোসে তাঁর অবদানের জন্য বাপি লাহিড়ীকে ‘হাউজ অফ দ্য লর্ড’ সম্মানও দেওয়া হয়েছিল।
[আরও পড়ুন:প্রয়াত বাপি লাহিড়ী, ফের নক্ষত্রপতন সংগীত দুনিয়ায়]