নন্দিতা রায় ও দেবশ্রী সিনহা: অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তাই সিঁদুরে মেঘ দেখছে কর্ণাটকের মানুষ। দুই দলের অন্দরেও শঙ্কা। কিন্তু, ঘরে-বাইরে যাঁরা এমনটা ভাবছেন তাঁদের আশ্বস্ত করলেন ভাবী মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দিল্লিতে সাক্ষাতের পর প্রত্যয়ী জেডিএস নেতা বললেন, কর্ণাটকে স্থিতিশীল সরকার গড়বে কংগ্রেস-জেডিএস। বস্তুত, জোটে বড় দল হয়েও মুখ্যমন্ত্রীর আসনের দাবি ছেড়েছে কংগ্রেস। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আঞ্চলিক দলকে। এবার জেডিএসের ‘অ্যাডজাস্ট’-এর পালা। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার দল সেটি করবে, রাহুলের কাছে সে আশ্বাস গিয়েছে বেঙ্গালুরু থেকে।
[ কংগ্রেস-জেডিএস জোটকে ‘অপবিত্র’ বলে কটাক্ষ অমিতের, পালটা তোপ কংগ্রেসের ]
আসলে শঙ্কাটা অমূলক নয়। ২০০৪ সালটা কাঁটার মতো বিঁধে। সেবার জেডিএসের সঙ্গে প্রাক-নির্বাচনী জোট করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে সংঘাতে সেই সরকার পুরো মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। বিজেপির সাহায্য নিয়ে জেডিএস স্বল্পকালীন সরকার গড়েছিল। কর্ণাটকে কংগ্রেস-জেডিএস আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক। অতীতে একে অপরের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের, বিপাকে ফেলার অজস্র নজির রয়েছে। এবার ভোটেও তো প্রচারের সময় পারস্পরিক আক্রমণ-প্রতিআক্রমণ চলেছে। সেই দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী দলই এবার সরকার গড়তে চলেছে রাজ্যে। তার জন্য প্রথম দরকার স্থায়ী সরকারের অঙ্গীকার।
কিন্তু সূত্র কী?
রবিবারের খবর ছিল, মন্ত্রিসভা একপ্রকার ঠিকই হয়ে গিয়েছে। ৩৩ জনের মন্ত্রিসভায় ২০ জন কংগ্রেসের সদস্য থাকবেন। মুখ্যমন্ত্রীর পদ জেডিএসকে ছাড়া হলেও কংগ্রেসের থাকবে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ। অর্থমন্ত্রক নিজের হাতে রাখবেন কুমারস্বামী। ওইদিন কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনঘন বৈঠক করেন জেডিএস নেতারা। জেডিএস সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভার একটি তালিকা কুমারস্বামী হাতে করে নিয়ে এলেও রাহুলের সঙ্গে আলোচনার পরে তা পরিবর্তন করা হতে পারে। রাহুল জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের নেতারাই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি কর্ণাটকে দলের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপালকে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। বেণুগোপাল মঙ্গলবার রাজ্যের নেতা ও বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তারপরেই সবকিছু চূড়ান্ত হবে বলে এদিন রাহুলের সঙ্গে বৈঠকের পরে কুমারস্বামী জানিয়েছেন। প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুলকে বুধবার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকার জন্য তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাঁরা আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।
[ কর্ণাটকে কুমারস্বামীর সঙ্গে জুড়ছে দুই উপ-মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি, জানিয়ে দিল কংগ্রেস ]
বুধবার বিকেল সাড়ে চারটেয় কুমারস্বামী মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন। পরের দিনই তাঁর বিধানসভায় আস্থা পরীক্ষা। বুধবারের শপথের মঞ্চ আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী জোটের মহড়াস্থল হয়ে উঠতে চলেছে বলেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এখানেই বিরোধী জোটের ‘ব্লু-প্রিন্ট’ তৈরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। সোনিয়া, রাহুল, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো শপথে হাজির থাকছেনই, কেন্দ্র-বিরোধী অন্য দলের নেতারাও শপথে হাজির থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। সোমবার কুমারস্বামী দিল্লিতে বসপা নেত্রী মায়াবতীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বেঙ্গালুরুতে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতরাম ইয়েচুরিকেও ফোনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি।
তবে উপমুখ্যমন্ত্রী পদটি নিয়েই আপাতত সংশয়। এর আগে কংগ্রেসের জি পরমেশ্বর সেই পদে বসবেন বলেই ঠিক ছিল। কিন্তু এদিন কংগ্রেসের অন্দরেই দলিত পরমেশ্বরের পরিবর্তে কোনও লিঙ্গায়ত বিধায়ককেই উপমুখ্যমন্ত্রী করার দাবি উঠেছে। কংগ্রেসের লিঙ্গায়ত বিধায়ক শ্যামানুর শিবাশঙ্কারাপ্পার উপমুখ্যমন্ত্রী পদে বসার সম্ভাবনা প্রবল, তাঁরই পাল্লা ভারী। কংগ্রেসের ৭৮ জন বিধায়কের মধ্যে ১৬ জন লিঙ্গায়ত বিধায়ক রয়েছেন, যা অন্য সম্প্রদায়ের থেকে সবচেয়ে বেশি। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার জমানায় লিঙ্গায়তদের সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে আগে থেকেই অভিযোগ রয়েছে। তাই এবার কোনও লিঙ্গায়ত নেতাকে উপমুখ্যমন্ত্রী করার দাবি উঠেছে। পাশাপাশি সর্বভারতীয় বীরশৈবা মহাসভার পক্ষ থেকেও একই দাবি করা হয়েছে। কর্ণাটকে সবচেয়ে বেশি ভোট শতাংশ লিঙ্গায়তদেরই রয়েছে। সে কারণে হঠাৎ ঘরে-বাইরে ওঠা দাবিকে কংগ্রেস কীভাবে সামাল দেয়, সেদিকে নজর রয়েছে সকলের। কর্ণাটক এবার দু’জন উপমুখ্যমন্ত্রী পেতে চলেছে বলেও জানা গিয়েছে। জেডিএস থেকেও একজন উপমুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, শাসক দলও গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রাখছে। দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এই সংক্রান্ত প্রশ্নে ফেডারেল ফ্রণ্ট গঠনের চেষ্টাকে গুরুত্ব দিতে চাননি। কর্ণাটকের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে বিজেপির পরাজয় বিরোধী শিবিরকে চাঙ্গা করে তুলেছে, এবার শপথের মঞ্চ থেকে যদি বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরোধিতায় নামে, তাহলে রাজনৈতিকভাবে তাদেরকে আরও কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে বুঝছে বিজেপি, মত রাজনৈতিক আলোচকদের। এদিকে বিধায়ক কেনাবেচা নিয়ে শোরগোল থেমেছে। তবে, সাবধানের মার নেই। তাই কংগ্রেস ও জেডিএস শিবিরের বিধায়কদের একটি পাঁচতারা হোটেলে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার কুমারস্বামীর আস্থা পরীক্ষার পরেই ঘরমুখো হতে পারবেন তাঁরা।
The post আস্থাভোট পর্যন্ত হোটেলেই বন্দি বিধায়করা appeared first on Sangbad Pratidin.