অরূপ বসাক, মালবাজার: ইতিহাস তার নাগাল পায়নি। বর্তমান চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কী। কথা হচ্ছে স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া ডালিমগড়কে নিয়ে। অতি উৎসাহী ছাড়া এই জনপদের নাম অনেকের কাছে পৌঁছয়নি। কালিংম্পং জেলার এই এলাকার পথে পথে ইতিহাস। সেই সরণির খোঁজ নিল টোটো।
[গড়পঞ্চকোট কথা: যেখানে নাগালে প্রকৃতি, পিছনে ইতিহাস]
উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় ডুয়ার্স ও পাহাড় অনেক রক্তপাতের সাক্ষী। সেই সময় ইংরজেদের সঙ্গে লড়াই হয়েছিল ভুটান ও সিকিম রাজাদের। সেই লড়াইয়ের কাহিনি খানিকটা জানা গেলেও পাহাড়ি রাজাদের বীরগাথা ইতিহাসে সেভাবে লিপিবদ্ধ হয়নি। যুদ্ধে পরাজিত রাজাদের সাহস ও বীরত্বের কথা পাহাড়ের প্রান্তিক জনজাতির মধ্যে আজও বিদ্যমান। এদিক-ওদিক চাপা পড়ে রয়েছে পাহাড়ি রাজাদের ইতিহাস। এই রকম অন্ধকারে রয়েছে এক লেপচা যুবরাজের বীরগাথা চাপা পড়ে রয়েছে কালিম্পং জেলার গরুবাথান ব্লকের ডালিমগড়ে। ঝাড় জঙ্গল ও আগাছায় এই মুহূর্তে চাপা রয়েছে ডালিমগড়। তার নিচে রয়েছে পাথরের দেওয়াল। পাথরের ঘর, মন্দির। খুঁজলে হয়তো অনেক ইতিহাস জানা যাবে। ডালিমগড়ের জন্য পাশের পাহাড়ি ঝোড়ার নাম ডালিমখোলা। গ্রামের নাম ডালিমবস্তি। এমনকী স্থানীয় জনপদের নাম ডালিম পঞ্চায়েত। অপরূপ মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। এখনকার জনজাতির মাঝে আজও শোনা যায় লেপচা রাজা পুনু গাবাচোর বীরগাথা।
[পাহাড়ে বেড়াতে যাবেন? নিখরচায় সাফারির সুযোগ ব্রিটিশ আমলের ল্যান্ডরোভারে]
সিকিমের রাজপুত্র ‘পুনু গ্যাবাচোক’-এর সঙ্গে জড়িয়ে এই ঐতিহাসিক ডালিমগড়। প্রচলিত রয়েছে পুনু সেই কেল্লাটি তন্ত্রসাধনা দ্বারা তৈরি করেন। কারণ প্রায় ৩০০ বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের উপর এমন দুর্ভেদ্য কেল্লা তৈরি করা ছিল দুঃসহ। তন্ত্র সাধনায় দক্ষ পুনু গ্যাবাচোককে স্থানীয়রা ভূত রাজা বলে অভিহিত করতেন। গ্যাবাচোককে হারাতে ইংরেজ সেনারা বহুবার আক্রমণ করে। পরবর্তীতে তোপের গোলার কাছে নতিস্বীকার করে এই দুর্গ। লেপচা ভাষায় পুনু অর্থ মহারাজ। পুনু গ্যাবাচোকের বাবা হংস গ্যাবাচোক ছিলেন অষ্টাদশ শতকের সিকিমের রাজা। তাঁর দ্বিতীয় পত্নীর গর্ভস্থ সন্তান হলেন পুনু।
ঐতিহাসিক এসব তথ্য পাওয়া যায় সিকিমের ইতিহাসে। তবে বর্তমানে এই জায়গা পশ্চিমবঙ্গের অংশ হলেও পাহাড়ি রাজাদের গৌরবময় ইতিহাস সেভাবে বাংলার আত্মস্থ হয়নি। লেপচা রাজাদের ইতিহাস আজও লোকমুখে শোনা যায় পাহাড়ের আনাচে-কানাচে। তবে পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঐতিহাসিক ক্ষেত্রের রক্ষণাবেক্ষণের আরজি জানিয়েছেন। তাদের মতে তাহলে এই গড় উত্তরের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত হবে। কালিংম্পং জেলার গরুবাথান থেকে পাহাড়ি পথে ট্রেকিং করে খুব সহজেই পৌছানো যায় ডালিমগড়ে।
ছবি: প্রতিবেদক
The post পথের বাঁকে ইতিহাস, ডালিমগড় চেনেন কি? appeared first on Sangbad Pratidin.