সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশ-সহ চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য পেলেও একটা খচখচানি বিজেপির (BJP) অন্দরে থেকেই যাচ্ছে। সেটা হল পাঁচ রাজ্যেই বিধায়ক সংখ্যা আগের থেকে কমে যাওয়া। যার প্রভাব সরাসরি পড়তে চলেছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে। আগামী ২৪ জুলাই শেষ হচ্ছে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ। ইতিমধ্যেই পরবর্তী রাষ্ট্রপতির সন্ধান শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। দলের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে আরও একবার রামনাথ কোবিন্দকে (Ramnath Kovind) রাষ্ট্রপতি করা হবে নাকি নতুন কাউকে সেই পদে আনা হবে সেসব নিয়ে। বিজেপি সূত্রের দাবি, রাষ্ট্রপতি পদের লড়াইয়ে রয়েছেন বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিজেপি কি এই মুহূর্তে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে নেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে আছে?
উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে ভাবনার কিছু ছিল না বিজেপির। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে নেওয়ার মতো জায়গাতেই ছিল এনডিএ (NDA)। আসলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন দেশের সব সাংসদ এবং সব রাজ্যের বিধায়কদের ভোটে। দেশের মোট ৭৭৬ জন সাংসদ এবং ৪১২০ জন বিধায়ক বা বিধান পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। একেক জন সাংসদ পিছু ধরা হয় ৭০৮ ভোট আর বিধায়কদের ভোটের সংখ্যাটা একেক রাজ্যে একেক রকম। বিধায়কদের ভোটের মূল্য সবচেয়ে বেশি উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh)। যোগী রাজ্যের একেক জন বিধায়কের ভোটসংখ্যা ২০৮। ঘটনা হল ২০১৭ বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপি জোটের বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৩২৫। পরে আরও কয়েকজন বিধায়ক বিভিন্ন দল থেকে যোগ দেন। একইভাবে উত্তরাখণ্ডেও বিজেপি জোটের বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৬০-এর কাছাকাছি। সেটা এবার নেমে এসেছে ৪৭-এ। নির্বাচনে যাওয়ার আগে গোয়াতেও বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৩০-এর বেশি, সেখানেও এবারে ২০জন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপির টিকিটে। একই ছবি পাঞ্জাবে। আগেরবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় অকালি দল বিজেপির সঙ্গে জোটে ছিল। সেই সঙ্গে বিজেপির আসনও কমেছে। সব মিলিয়ে পাঞ্জাবেও কমেছে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা। মণিপুরে বিজেপির নির্বাচিত বিধায়ক সংখ্যা বাড়লেও মোট বিধায়ক সংখ্যা কমেছে। কারণ ২০১৭ বিধানসভা নির্বাচনের পর বহু বিধায়ক গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিল।
[আরও পড়ুন: পাঁচ রাজ্যে ভরাডুবির পর ফের সক্রিয় কংগ্রেসের ‘G-23’ নেতারা, উঠছে নেতৃত্ব বদলের দাবি]
মোট কথা, পাঁচ রাজ্যেই কমবেশি ক্ষতি হয়েছে বিজেপির। যার জেরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জটিলতা কিছুটা হলেও বেড়েছে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের আগে বিজেপি জোটের মোট ক্ষমতা ছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রয়োজনীয় সংখ্যার তুলনায় মাত্র ০.৫ শতাংশ কম। কিন্তু এখন সেটা কমবেশি ১.২ শতাংশ কম। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়তে পারে গেরুয়া শিবির। যদিও তাতে খুব একটা বেগ হয়তো পাবেন না মোদি-শাহরা (Amit Shah)। তার কারণ দুটি। এক, বিজেপি চাইলেই অন্ধ্রপ্রদেশের ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টি বা বিজেডি তাঁদের সমর্থন করবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে তাঁদের শর্ত থাকতে পারে। দুই, বিরোধী শিবির এই মুহূর্তে একেবারেই ঐক্যবদ্ধ নয়। কংগ্রেসের যা অবস্থা তাতে তারা বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে বলেও বোধ হয় না। সুতরাং, একার দমে না হলেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে খুব একটা বেগ হয়তো পেতে হবে না মোদি-শাহকে।
[আরও পড়ুন: পাঞ্জাবের পর কেজরির নজর এবার গুজরাটে, জোরকদমে শুরু প্রস্তুতি]
এবার আসা যাক রাজ্যসভা নির্বাচনে। পাঁচ রাজ্যে বিজেপির আসন কমলেও কংগ্রেসের অবস্থা আরও খারাপ। যার সুবিধা পেতে চলেছে বিজেপি। রাজ্যসভায় গেরুয়া শিবিরের শক্তি আরও বাড়তে চলেছে। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষেই রাজ্যসভার আসনসংখ্যা ১০০ পেরোবে।এখন বিজেপির আসন সংখ্যা ৯৭। সব ঠিক থাকলে বছর শেষে বিজেপির আসন সংখ্যা বেড়ে হবে ১০৪। আর এনডিএ’র আসন সংখ্যা ১২০ পেরিয়ে যাবে।