সুকুমার সরকার, ঢাকা: জুলাই মাসে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। এই আন্দোলন কার্যত 'হাসিনা হঠাও' অভিযানের রূপ নেয়। গণ অভ্যুত্থানের জেরে পতন ঘটে আওয়ামি লিগ সরকারের। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। আর তাঁর গদিচ্যুত হওয়ায় অঙ্গুলিহেলনের অভিযোগ উঠেছে আমেরিকার বিরুদ্ধে। কিন্তু এই অভিযোগকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকা।
হাসিনার সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আমেরিকা আগেই জানিয়েছিল এই সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী তারা। সোমবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিক সম্মেলনে মার্কিন প্রশাসনের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল আর একবার সেই কথা জানিয়ে বলেন,"বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের রূপরেখা নির্ধারণে ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আমরা প্রস্তুত ও আগ্রহী। বাংলাদেশের ঘটনাবলী নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আমেরিকা।" এর পরই শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়াতে আমেরিকার ষড়যন্ত্রের যেসব খবর প্রকাশ্যে আসছে তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, "আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, এগুলো সত্য নয়। এই কারণেই আমি এই খবরগুলো দেখিনি। আমরা বাংলাদেশের জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে চাই। এর বাইরে আর কিছু বলতে চাই না।"
[আরও পড়ুন: আসছে না ইলিশ, তবু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে বাংলাদেশে ডিম পাঠাল ভারত]
বলে রাখা ভালো, নোবেলজয়ী ইউনুসকে সবসময়ই সমর্থন জানিয়ে এসেছে আমেরিকা। চলতি বছরেই এই অর্থনীতিবিদ-সহ চারজনকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ছমাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু জামিন পেয়ে যাওয়ায় তাঁদের হাজতবাস হয়নি। তবে ইউনুসের কারাদণ্ডের নির্দেশের পর তৎকালীন হাসিনা সরকারের তীব্র বিরোধিতা করেছিল আমেরিকা। আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার আহ্বান জানিয়েছিল তারা। যদিও সেই মামলা থেকে এখন অব্যাহতি পেয়ে গিয়েছেন ইউনুস-সহ চারজনে।
উল্লেখ্য, হাসিনার সঙ্গে আমেরিকার আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্কের কথা বিশ্বের অজানা নয়। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বহুবার অভিযোগ জানিয়েছিলেন যে, তাঁকে গদিচ্যুত করতে চায় আমেরিকা। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ঢাকাকে তোপ দেগেছিল ওয়াশিংটন। এছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সেনাঘাঁটি তৈরির আবেদন জানিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। যা ফিরিয়ে দেন হাসিনা। তার পর থেকেই দুদেশের সম্পর্কের ফাটল চওড়া হয়। এর পর পদ্মা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। গত ৫ আগস্ট অবসান ঘটে হাসিনা সরকারের। ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিশ্লেষকদের মতে, ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্ব মজবুত করে স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছে আমেরিকা।