ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: শুধুমাত্র ধরপাকড় নয়, কালীপুজো ও দিওয়ালিতে শব্দদানব বন্ধ করতে সাঁড়াশি অভিযান দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের। নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটালে বা বিধি না মেনে মাইক বাজালে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা অথবা দু’টি শাস্তিই একসঙ্গে বলবৎ হবে। রবিবার জরুরি ভিত্তিতে এমনই সিদ্ধান্ত নিল পর্ষদ ও পুলিশ।
রবিবার ছুটির দিনেও জোর তৎপরতা চোখে পড়ল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দপ্তরে। দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা আলোচনা করেছেন কলকাতা, হাওড়া, বারাকপুর, বিধাননগরের পুলিশ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং শতাধিক বড় আবাসনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, অন্যান্যবারের মতো শুধুমাত্র ধরপাকড় করেই থেমে থাকবে না পুলিশ। অভিযুক্তর বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে শব্দবাজি ফাটানোর নজরদারিতে এবারই প্রথম কলকাতা ও উত্তর চব্বিশ পরগনার বহুতলগুলির সামনে ড্রোন ওড়াবে পুলিশ। দপ্তরের সদস্য সচিব রাজেশ কুমার জানিয়েছেন, “কালীপুজো বা দিওয়ালিতে শব্দবিধি ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। অভিযুক্তর বিরুদ্ধে জেল বা মোটা অঙ্কের জরিমানা অথবা একইসঙ্গে যাতে দু’টি শাস্তি প্রয়োগ করা যায় তার ব্যবস্থা করা হবে।”
[আরও পড়ুন: ‘অর্থনীতি ছেড়ে রাজনীতির ঝান্ডা ধরুন’, নোবেলজয়ীকে নিদান রাহুল সিনহার]
দপ্তর সূত্রে খবর, শব্দবিধি না মানার জন্য প্রতি বছর কালীপুজোয় রাজ্যজুড়ে পুলিশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ অভিযান চালায়। নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে আটকও হয়। কিন্তু এবার অভিযুক্তর বিরুদ্ধে কড়া আইন প্রয়োগ করা হবে। ইপিএ-তে (এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন অ্যাক্ট) কড়া আইনের ব্যবস্থা রয়েছে। সেই আইন মেনেই সাঁড়াশি অভিযানে নামছে পুলিশ ও পর্ষদ। দপ্তরের আইনজীবীরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই অভিযুক্তর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইন প্রয়োগের সুপারিশ করেছেন। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে ৩৩টি বাজির দূষণ ও শব্দবিধি পরীক্ষা করেছিল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তার মধ্যে ২২টি বাজিকে বাতিল করা হয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অভিজ্ঞতা বলছে, দীর্ঘদিন ধরে সল্টলেক, বারাকপুর, দক্ষিণ কলকাতার বেশকিছু বহুতলে তুলনামূলকভাবে বেশি শব্দবাজি ফাটানো হয়। আবার আসানসোল বা দুর্গাপুরেও গত কয়েক বছর ধরে শব্দবাজি ফাটানো হচ্ছে। এই অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে আইন ভঙ্গকারীর খোঁজ পেতে শতাধিক বহুতলের প্রতিনিধিদের ঠিকানা, মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর সংগ্রহ করা হচ্ছে। একইরকমভাবে পুজো কমিটিগুলিরও মোবাইল ও ঠিকানা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। নিষিদ্ধ শব্দবাজির মতোই দীপাবলিতে সাউন্ড বক্স বা মাইকের সঙ্গে সাউন্ড লিমিটার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যে বা যারা মাইক বা সাউন্ড বক্স ভাড়া দেবে তাকেই বিষয়টি ঠিক করতে হবে। অন্যথায় শব্দবিধি ভাঙার দায়ে একই আইন প্রয়োগ করবে পুলিশ। পাশাপাশি পর্ষদ ও পুলিশ আধিকারিকরা কলকাতা, বিধাননগর–সহ সব শহরে দূষণ মাপতে রাস্তায় নামছেন।
[আরও পড়ুন: বন্ধু রনিকে পালাতে দিয়েছে পুলিশই! IT কর্মীর রহস্যমৃত্যুতে বিস্ফোরক অভিযোগ পরিবারের]
কড়া আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে সপ্তাহের প্রথমদিন থেকেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে কিয়স্ক করে প্রচার চালানো হবে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পরিবেশ অ্যাপ’ নামে একটি অ্যাপ চালু হবে। প্রয়োজনে পরিচয় গোপন রেখে সেই অ্যাপে অভিযোগ জানাতে পারবেন নাগরিকরা। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেবে পুলিশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। বস্তুত, কালীপুজোয় দূষণ ঠেকাতে কোমর বেঁধে নামছে পর্ষদ।
The post শব্দবাজি ফাটালে জেল, কালীপুজোয় দূষণ রুখতে কড়া নজরে শহরের বহুতলগুলিও appeared first on Sangbad Pratidin.