বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: মুখ্যমন্ত্রী বনাম উপমুখ্যমন্ত্রী। লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha 2024) ফলাফল পথে নামিয়েছে উত্তরপ্রদেশের বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল। প্রতিদিনই বিভিন্ন ইস্যুতে যোগী আদিত্যনাথ ও কেশবপ্রসাদ মৌর্য একে অপরের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। একে অপরের বিরুদ্ধে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে নালিশ ঠুকছেন। শনিবার বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও উপনির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছে যোগী শিবির। অন্যদিকে, আরএসএস দপ্তরে যায় মৌর্য শিবির। আবার পালটা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দেবেন বলে জানিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। দুই শিবিরের তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত জল কোন দিকে গড়ায় সেই দিকেই নজয় রাজনৈতিক মহলের।
লোকসভা ভোটের পরে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে যোগী আদিত্যনাথের (Yogi Adityanath) বিদায় হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)। লোকসভার ফল প্রকাশের পর থেকে উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে কেজরিওয়ালের কথা মিলে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন বিজেপির নেতাদের একাংশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আজ দিল্লি এসে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষের সঙ্গে বৈঠক করেন যোগী। বিরোধী শিবিরের নেতা—রাজ্যের দুই উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য ও ব্রজেশ পাঠকও দিল্লি এসে আরএসএসের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
[আরও পড়ুন: দেগঙ্গায় সেনাকর্মীর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, কাঠগড়ায় উপপ্রধানের ছেলে]
লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির খারাপ ফলের পর থেকেই দলের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বনাম উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্যের (Keshav Prasad Mourya) মধ্যে বিরোধ প্রকট হয়ে পড়ে। কেশব শিবিরের অভিযোগ, যোগীর শাসনে আমলাতন্ত্রের রমরমায় দলের সাধারণ কর্মীরা প্রবল উপেক্ষিত হচ্ছেন। যা আগামীদিনে উত্তরপ্রদেশে দলের জনভিত্তি কার্যত শেষ করে দেবে বলে আশঙ্কা করছেন কেশব শিবির। সূত্রের মতে, তাই দলের স্বার্থে, ২০২৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে যোগীকে এখনই হটানোর জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তদ্বির করেছেন কেশবপ্রসাদ। ঘটনাচক্রে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশও যোগীকে সরানোর পক্ষে। বিজেপির দুই শিবিরের দ্বন্দ্বকে উস্কে দিয়ে বিরোধী এসপির নেতা অখিলেশ যাদবের মন্তব্য, ‘‘কেশবপ্রসাদ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বোড়ে। দিল্লির ওয়াইফাইয়ের (নেটওয়ার্ক) পাসওয়ার্ড।’’ রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, কেশবপ্রসাদকে সামনে রেখে ‘অপারেশন যোগী’ শুরু হয়েছে বিজেপির সদর দপ্তরে। সম্ভবত সেই বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছেন অখিলেশ।
[আরও পড়ুন: প্রধান শিক্ষকই পিওন! মালদহে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়াচ্ছে অষ্টমের শিক্ষার্থীরা]
এ দিকে প্রতিদিন দিন বিভিন্ন এলাকার বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করে চলেছেন যোগী। শনিবার লখনউ ডিভিশনের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। নিজের শিবির গুছিয়ে নিতেই যোগী ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন বলে মনে করা হচ্ছে। গত ক’দিনের মতো এদিনের ওই প্রশাসনিক বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন দুই উপমুখ্যমন্ত্রী। তাঁরা তখন দিল্লি এসে আরএসএস নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সূত্রের মতে, যোগী আমলে আরএসএস এবং বিজেপি কর্মীদের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেই বিষয়টি নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়। সন্ধ্যায় দিল্লি আসেন যোগীও। উত্তরপ্রদেশ ভবনে বৈঠক করেন দলীয় নেতা বি এল সন্তোষের সঙ্গে। নীতি আয়োগের বৈঠক উপলক্ষে আগামী দু’দিন দিল্লিতে থাকার কথা রয়েছে যোগীর। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আলাদা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। সূত্রের মতে, লখনউয়ের তখ্ত যোগীর ভাগ্যে কত দিন আছে, তা ওই বৈঠকেই অনেকাংশে নিশ্চিত হতে পারে।