সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: ‘রামরাজ্যে’ই সবচেয়ে কষ্টে রয়েছেন নিষাদরাজ, শবরীরা!
বিরোধীদের দাবি নয়। সংসদে তথ্য দিয়ে এই কথা স্বীকার করল কেন্দ্র সরকার। মোদি-শাহর সরকার মানতে বাধ্য হল ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ তো অনেক দূরের কথা, দেশজুড়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দলিত, তফসিলি জাতি-উপজাতিদের উপর নিগ্রহ, অত্যাচার। তালিকায় শীর্ষে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ (Uttar Pradesh)। শুধু দেশের সর্বাধিক জনবসতিপূর্ণ রাজ্যই নয়, সমগ্র গোবলয়েই বেশ সংকটে সমাজে পিছিয়ে পড়া নাগরিকরা। পাশাপাশি কেন্দ্র এই কথাও মানতে বাধ্য হল যে, মোদি জমানায় দেশে বেড়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সংখ্যাও। গত পাঁচ বছরে ৩,৩৯৯টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে দেশে।
মঙ্গলবার লোকসভায় দু’টি ভিন্ন লিখিত প্রশ্নে পিছিয়ে পড়াদের উপর অত্যাচার সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়া হয়। জবাবে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে ২০১৮ থেকে ২০২০– এই তিন বছরে যথাক্রমে ৪৯,০৬৪, ৫৩,৫১৫ ও ৫৮,৫৩৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশেই হয়েছে যথাক্রমে ১১,৮৪১, ১১,৮৬৫ ও ১২,৭১৭টি। দ্বিতীয় স্থানে আছে মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh)। উল্লেখযোগ্যভাবে তালিকার প্রথম পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে চারটিই গোবলয়ের। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে রাজস্থান ও বিহার। পঞ্চমে মহারাষ্ট্র। কোনও ক্ষেত্রেই নেই বাংলা। তৃণমূলের (TMC) দাবি, বাংলার আইনশৃঙ্খলা যে দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা তা স্পষ্ট হয়ে যায় কেন্দ্রীয় সরকারেরই এই ধরনের পরিসংখ্যানে। কেন্দ্রের পরিসংখ্যানই বলে দেয় বিজেপি বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে যেসব কথা বলে তা অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়।
[আরও পড়ুন: কত দূরে বাস? গন্তব্যে যাওয়ার আগে স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েই জানতে পারবেন, নিউটাউনে বসছে ডিসপ্লে বোর্ড]
গত পাঁচ বছরে আইনশৃঙ্খলায় প্রভূত উন্নতির বার্তা উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনী প্রচারে বারবার দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। বলা হয়েছে ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার থাকলেই হবে রাজ্যের বিকাশ। অথচ ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি– কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সংস্থা) তথ্য উল্লেখ করে সংসদে ঠিক তার উলটো কথাই জানাল কেন্দ্র। অবশ্য শুধু যোগী-রাজ্যই নয়, মধ্যপ্রদেশে এবং হরিয়ানার মসনদেও রয়েছে বিজেপি। বিহারে নীতীশ কুমারের সরকারের প্রধান জোটসঙ্গীও তারা।
সামনে এসেছে বিজেপির ‘সুশাসন’-এর আরও একটি ছবিও। ২০১৬ থেকে ২০২০– কেন্দ্রে মোদি জমানার এই পাঁচ বছরে দেশজুড়ে ২,৭৬,২৭৩টি দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রায় ৩৪০০টি। লোকসভায় এই তথ্য দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়মন্ত্রী রামদাস আটাওয়ালে সংবিধানের বিভিন্ন আইন ও ধারা উল্লেখ করে দাবি করেছেন, তফসিলি জাতি, উপজাতিদের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দিয়েই দেখা হয়। যেহেতু আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি রাজ্যের আওতাভুক্ত, তাই বারবার বিভিন্ন নির্দেশিকাও জারি করে কেন্দ্র। সেই নির্দেশিকায় কতটা কী লাভ হয়, তা অবশ্য বোঝার উপায় নেই।
[আরও পড়ুন: পরীক্ষার খাতায় রাজনৈতিক স্লোগান! ‘খেলা হবে’ লিখলেই বাতিল উচ্চমাধ্যমিকের উত্তরপত্র]
কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র যোগী—রাজ্যে ২০১৮-২০২০ সালে চার্জশিট দাখিল হয়েছে যথাক্রমে ৯৭৮২, ৯৯৮২ ও ১২৭১৭টি। এর মধ্যে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে মাত্র ১৫৩৯, ১৬২০ ও ১৮২১টি ক্ষেত্রে। অথচ অমীমাংসিত কেসের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৪৭, ৫০ হাজার ৬৮ ও ৫৭ হাজার ৯৮০। তৃণমূলের বক্তব্য, এনসিআরবি’র তথ্যে বারবারই দেখা গিয়েছে, অপরাধ, হত্যা ইত্যাদি সব ঘটনাই বাংলায় অনেক কম। বস্তুত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য বিজেপির বিরুদ্ধে পালটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে তৃণমূল।