সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তখন মাঝ রাত। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন বিশাখাপত্তনমের আরআর ভেঙ্কটাপুরমবাসী। ঘুমের মধ্যেই তীব্র জ্বালা শরীরে। গলা তেষ্টা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু উঠে ঘরের বাইরে বের হওয়ার সামর্থ্য নেই। কেউ কে যাওবা বিছানা ছেড়ে উঠলেন, দু’পা হাঁটতেই চলে পড়ে গেলেন। বৃহস্পতিবার ভোরের ভয়ংকর কয়েক ঘণ্টার বর্ণনা দিতে গিয়ে শিউড়ে উঠছেন ভেঙ্কটাপুরমের বাসিন্দারা। কারখানার বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে ইতিমধ্যে এক শিশু-সহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন প্রায় হাজার জন। তাঁদের মুখে একই রা, জ্বলে গেল, সারা শরীরটা জ্বলে গেল। তীব্র গ্যাসের ছোঁয়ায় এমনটাই অনুভব হচ্ছে ওঁদের।
সময় যত এগোচ্ছে ততই ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। একের পর এক মানুষ নিত্য নতুন উপসর্গ নিয়ে হাজির হচ্ছে হাসপাতালে। যাঁরাই ওই বিষাক্ত গ্যাস শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে নিয়েছেন তাঁদের প্রবল শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। সঙ্গে চোখে তীব্র জ্বালা, গা-হাত-পা অসম্ভব চুলকোচ্ছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা অসুস্থদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন। কেউ কেউ আবার পালাতে গিয়ে রাস্তায় জ্ঞান হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছেন। কেউ আবার বাড়ির বাইরেই বের হতে পারেননি। কেউ অর্ধচেতন হয়েছেন কেউ বা সম্পূর্ণ অচেতন। ওঁরা বলছেন, “ঘরের বাইরে পা রাখতেই দেখলাম ঘন কুয়াশায় গোটা এলাকা ঢেকে গিয়েছে। নিশ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। সঙ্গে সারা শরীর জ্বালা করছে।”
[আরও পড়ুন : পালটা মার, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের আবহাওয়ার পূর্বাভাস মিলছে ভারতের বুলেটিনে]
ইতিহাস বলছে, ১৯৬১ সালে হিন্দুস্তান পলিমার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটিকে ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি কেম অধিগ্রহণ করে। তারপরেই এই সংস্থাটির নতুন নাম হয় এলজি পলিমারস ইন্ডিয়া। এই কারখানাটি মূলত পলিসট্রিন তৈরি করে, যা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্লাস্টিকের খেলনা এবং অন্যান্য প্লাস্টিকের জিনিস তৈরি করা হয়। বিশাখাপত্তনমের ওই প্ল্যান্টের মালিক এলজি চেম বলেন, “গ্যাস লিকের ফলে যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারা বিষাক্ত গ্যাসের কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তাঁদের জন্যে দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে”। কিন্তু তাঁদের শরীরের বাইরের ক্ষত সেরে গেলেও ভিতরের ক্ষত সারবে তো! উত্তর দেবে সময়।
[আরও পড়ুন : পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে উদ্যোগী কংগ্রেস, তালিকা চেয়ে চিঠি মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে]
The post ‘শরীর জ্বলছে, নিশ্বাসও নিতে পারছি না’, বলছেন ভাইজাগের গ্যাস দুর্ঘটনার সাক্ষীরা appeared first on Sangbad Pratidin.