এই প্রথমবার তিনি অ্যাকশন ফিল্মের মুখ। ‘পারিয়া’ মুক্তির আগে আত্মবিশ্বাসী বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। কথোপকথনে শম্পালী মৌলিক
ট্রেলার লঞ্চ-এর পর এখনও পর্যন্ত সাড়া কেমন? ববি দেওল তো শেয়ার করেছেন।
– খুবই ভালো সাড়া। আমার কেরিয়ারে এর আগে যে ক’টা ছবির টিজার ট্রেলার রিলিজ হয়েছে, বলা যায় সেই সব ক’টার থেকে সাড়া অনেকটা বেশি। আর ববি দেওলের মতো এত অভিজ্ঞ একজন অভিনেতা শেয়ার করাতে খুবই ভালো লেগেছে। আমাদের টিমের সকলকে অনুপ্রেরণা দেবে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিরও অনেকেই নিজে থেকে শেয়ার করেছেন, যে কারণে আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। যেহেতু এই সিনেমার মূল গল্প একজন মানুষ এবং তার সারমেয়র মধ্যে সম্পর্ককে ঘিরে, সেই দর্শকের কাছেও আমরা পৌঁছেছি। যাঁরা নিজেরা সারমেয়দের ভালোবাসেন, তাঁরা বহু বছর ধরে পারিয়াদের জন্য অনেক কাজ করে অভ্যস্ত।
আপনার চেহারার ট্রান্সফরমেশন নিয়ে জানতে চাই।
n আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে বা যে কোনও ইন্ডাস্ট্রিতে প্রত্যেক অভিনেতাকে কিছুটা স্টিরিওটাইপ হতে হয়। তার জন্য কাউকে দোষ দিই না, কারণ প্রত্যেকেরই এটা ব্যবসা। সেই ব্যবসার টাকা ফেরত আসা খুব প্রয়োজন। কখনও একই ইমেজ ব্রেক হলে হয়তো প্রযোজক পাওয়া সহজ হয়, পরের ছবির জন্য। আমার ক্ষেত্রে যে অনস্ক্রিন ইমেজ তৈরি হয়েছে, এত বছর কাজের সূত্রে যে বিক্রমকে দিয়ে প্রেমের গল্প করালে ভালো লাগবে। বা বিক্রম ‘পাশের বাড়ির ছেলে’ ধরনের রোল ভালো করে। ফ্যামিলি ড্রামা হলেও বিক্রমকে কাস্ট করা যায়। সেই সুবাদেই আমার এতদিনের কাজ। একটা অ্যাকশন ফিল্মের হিরোর ইমেজ তো সম্পূর্ণ আলাদা হয়, তাই আমার ক্ষেত্রে ইমেজ ব্রেক করা প্রয়োজন ছিল। যাতে দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা পাই। ট্রান্সফরমেশন সেই ভেবেই।
সিক্স প্যাক কিছুটা সেকথা ভেবেই কি?
– না, সিক্স প্যাক ঠিক তেমন ভেবে নয়। ২০২১-এর শেষের দিকে এই গল্পটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। আমি, তথাগত, আর অভিনব (অন্যতম প্রযোজক এই ছবির) অন্য একটা ছবির জন্য কোল্যাবরেট করেছিলাম। তখন তথা বলেছিল, ও সলমন খানের খুব ফ্যান। অন্যদিকে পড়াশোনা করা, বুদ্ধিমান বলে ওর একটা ইন্টেলেকচুয়াল দিক আছে। কিন্তু ও বলত, ‘দাবাং’ দেখে ভালো লেগেছে। নানা আড্ডায় বলেছিল, একটা অ্যাকশন ফিল্ম বানাতে চায়। আমাদের বন্ডিং তৈরি হয়ে গিয়েছিল, আগের ছবি শুট করতে গিয়ে। তখন থেকেই তথা জানত আমি কাজের ব্যাপারে প্যাশনেট, খাটতে ভালোবাসি। একটা কনফিডেন্স তৈরি হয়েছিল আমার ওপর। ও অভিনেতাদের ওয়ার্কশপে বিশ্বাস করে। এরকম একটা ছবির জন্য ফিজিক্যাল ট্র্যান্সফরমেশন, গ্রুমিং, মার্শাল আর্ট শেখা প্রয়োজন ছিল। অনেকটা সময় আর শ্রম দিতে হয়। ও আমার মধ্যে এই ছকভাঙা চরিত্রটা ভিস্যুয়ালাইজ করতে পেরেছিল। তার জন্য আমি থ্যাঙ্কফুল। তখন আমরা প্রযোজকের কথা ভাবি। মনে হয় যাদের সঙ্গে হয় আমি, নয় তথা আগে কাজ করেছি তাদের কাছেই যাই। প্রতীক এবং অভিনবর সঙ্গে আমরা আগে কাজ করেছিলাম। তাদের দুজনেরই মনে হয়েছিল, এই চরিত্রে বিক্রমকে কেন? মেলানো যায় না। ওইখানেই জার্নি শুরু। আমার মনে হয়েছিল ৫ মাস সময় পেলে আমি চেষ্টা করব, এইরকম ‘রাগড’ লুকের জন্য আর ইমেজের জন্য। সিক্স প্যাক অতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কিন্তু দেখে যেন মনে হয়, এ হিংস্র হতে পারে। তাই শারীরিক পরিবর্তন আনলেই সেটা বিশ্বাসযোগ্য হত।
পথকুকুরদের সঙ্গে ঘটে চলা অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে এই ছবি ‘পারিয়া’। সেখানে
আপনি সেভিয়ার হয়ে দাঁড়াচ্ছেন বলেই কি পেশিবহুল চেহারা?
– না, চরিত্রের একটা নিজস্ব প্রেক্ষাপট আছে। সেটা খুব বেশি প্রকাশ হয়নি এখনও। ছেলেটা কারখানায় কাজ করে। পাইস হোটেলে খেয়েদেয়ে দিন গুজরান তার। সেই হোটেলের মালকিন কুকুরদের ভালোবাসে। সেইখান থেকেই কুকুরবাচ্চার প্রতি আমার চরিত্রের টান তৈরি হয়। বন্ধন তৈরি হয়। এই চরিত্র কোথা থেকে এসেছে,
তার হিন্ট সিনেমায় আছে। আমার ইমেজ ভাঙার চেয়েও চরিত্রের প্রয়োজনে এই চেহারার দরকার ছিল। আরও হচ্ছে এই ছবির প্রথম ভাগ ৯ ফেব্রুয়ারি আসছে, দ্বিতীয় ভাগও তৈরি হবে। তখন আমার চরিত্রের আইডেনটিটি নিয়ে আরও অনেকটা জানা যাবে।
আপনি, তথাগত মুখোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র তিনজনেরই সারমেয়প্রেমী হিসেবে সুনাম। সেটা ছবির বন্ধন হিসাবে কাজ করেছে?
– নিশ্চয়ই। তথা এ বিষয়ে খুবই ভোকাল। শ্রীলেখাদিও অত্যন্ত সক্রিয়। ‘পারিয়া’ আমাদের মতো করে প্রতিবাদের গল্প। শ্রীলেখাদি ছবিতে একটি এনজিও চালান, তারা পথকুকুরদের জন্য কাজ করছে। সেখানেই অঙ্গনা কাজ করে। এই ছবিতে অঙ্গনা (রায়) আমার সঙ্গে রয়েছে। (এছাড়া অন্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে সৌম্য মুখোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, তপতী মুন্সি, লোকনাথ দে, দেবপ্রসাদ হালদার প্রমুখ।)
পথকুকুরদের বিষয় নিয়ে ছবি বাংলায় হয়নি কখনও। ফলে একটা রিস্ক ফ্যাক্টর থেকে যায় যে, দর্শক কীভাবে নেবে।
– পথকুকুরদের বিষয় করে সারা ভারতে সিনেমা হয়নি। এবং ওদের বিষয় করে একটা অ্যাকশন ফিল্ম ক্রিয়েট করা, পৃথিবীতে হয়েছে কি না আমার জানা নেই। হতে পারে অন্য ভাষায়, তবে আমার অজানা। এমন সাবজেক্টে ঝুঁকি থাকেই। আবার বাংলায় বানানো অ্যাকশন ছবি সাম্প্রতিক অতীতে সফল হয়েছে, তেমনও দেখিনি। একই সঙ্গে এটাও বলব, কোনও সাবজেক্টেরই গ্যারান্টি থাকে না। জানপ্রাণ দিয়ে সিনেমাটা বানাতে হয় আর যেন এন্টারটেনমেন্ট ভ্যালু থাকে। যেন দর্শক রিলেট করতে পারে। যেমন ‘শহরের উষ্ণতম দিনে’র সঙ্গে করেছিল। ‘পারিয়া’-র ক্ষেত্রে পশুপ্রেমীরা রিলেট করতে পারবে, যে তারা যা যা দেখে আসছে, তার যদি প্রতিশোধ কাউকে নিতে হত, সেটা এইভাবে।
২০২৪ কি ভিন্ন স্বাদের ছবি দিয়ে?
– ঠিকই, ‘পারিয়া’ অ্যাকশন ফিল্ম। ‘দুর্গাপুর জংশন’ থ্রিলার ছবি, পরিচালনায় অরিন্দম ভট্টাচার্য। আর ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’ আমি, মধুমিতা আর দর্শনা করেছি। পরিচালনায় শিলাদিত্য মৌলিক। যেটা অন্য ধারার মিষ্টি প্রেমের ছবি। আমি আর সোহিনী একটা রমকম করেছি, যার নাম ‘অমর সঙ্গী’। দিব্য চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায়। দিব্য এর আগে আমাজন প্রাইম-এর জন্য ‘আফসোস’ বলে একটা সিরিজ ক্রিয়েট করেছে। ফলে ২০২৪-এ সব ক’টাই বিভিন্ন স্বাদের ছবি আসবে আমার। শুরুটা ‘পারিয়া’ দিয়ে।
২০১৭ সালে যে বিপর্যয় আপনার জীবনে এসেছিল, এতদিনে তা অতিক্রম করার চাবিকাঠি কী ছিল?
– ভালোমন্দ জীবনে আসবেই। কোনওটাই চিরস্থায়ী নয়। খুব ভালো কিছু এলেও জানি, খারাপ আসতেই পারে। উল্টোটাও হবেই। নাথিং ইজ পারমানেন্ট।