দেব গোস্বামী, বোলপুর: কবে হবে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ? নাকি আবারও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকেই দায়িত্ব দেবে কর্তৃপক্ষ? প্রশ্ন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীতে স্থায়ী উপাচার্য নেই। ২০২৩ সালে ৯ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন কলাভবনের অধ্যক্ষ সঞ্জয়কুমার মল্লিক। কিন্তু বর্তমানে দুবছর কার্যকালের পর তাঁর অধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ২৫ মে। স্বভাবতই বিশ্বভারতীর নিয়ম অনুসারে অধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি আর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যও থাকতে পারবেন না। তবে কি এই সময়ের মধ্যেই স্থায়ী উপাচার্য মনোনীত হবেন? না কি আবারও অন্য কোনও বরিষ্ঠ ভবনের অধ্যক্ষকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে? এই নিয়েই দোটানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তবে বিশ্বভারতী (Vishva Bharati) সূত্রে জানা যাচ্ছে, ‘‘দ্রুত স্থায়ী উপাচার্যের যোগদানের সম্ভাবনা প্রবল। কারণ, উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় পদক্ষেপ একেবারে শেষ পর্যায়ে। শিক্ষা মন্ত্রক থেকে ইতিমধ্যেই তিনজন সম্ভাব্য স্থায়ী উপাচার্যের নাম অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঠানো হয়েছে। কে হচ্ছেন স্থায়ী উপাচার্য, তা শুধু রাষ্ট্রপতি সম্মতির অপেক্ষা।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের একাংশের দাবি, স্থায়ী উপাচার্যের জন্য ইতিমধ্যেই তাঁর বাসভবন পূর্বিতা সম্পূর্ণরূপে সাজিয়ে তোলা থেকে শুরু করে যাবতীয় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অপেক্ষা শুধুমাত্র নয়া উপাচার্যের আগমনের। শিক্ষামন্ত্রকে (Ministry of Education) ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুবিধা প্রসঙ্গে জানানো হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত ছাড়পত্র দেয়নি শিক্ষামন্ত্রক।
[আরও পড়ুন: সুন্দরবনে গুলির লড়াই, চোরাশিকারীদের গুলিতে খুন বনকর্মী]
অন্যদিকে, স্থায়ী উপাচার্য (Vice Chancellor) নির্বাচনের জন্য বিশ্বভারতীতে কর্মরত বিভিন্ন ভবনের অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা দিল্লিতে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে এসেছেন। এদের মধ্যে বিদ্যাভবনের বিপাশা লাহা, গণিত বিভাগের প্রশান্ত মণ্ডল, অর্থনীতি বিভাগের সুদীপ্ত ভট্টাচার্য, পল্লি সংগঠন বিভাগের অমিত হাজরা অন্যতম। তবে স্থায়ী উপাচার্য নির্বাচনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া থেকেই বিতর্ক তৈরি হয়। কারণ সার্চ কমিটিতে রাখা হয় আরএসএস (RSS) ঘনিষ্ঠ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা কুমুদ শর্মাকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া-অধ্যাপক-কর্মীরা চাইছেন যোগ্য কোনও ব্যক্তিকে বিশ্বভারতীর স্থায়ী উপাচার্য করা হোক।
যদি স্বল্প সময়ের মধ্যে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ না হন, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, সবচেয়ে প্রবীণ অধ্যাপক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের (Acting VC) দায়িত্ব নিতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলিষ্ঠ অধ্যক্ষ পল্লি সংগঠন বিভাগের অরবিন্দ মণ্ডল ও ভাষা ভবনের মনোরঞ্জন প্রধান - এই দুজনের মধ্যে একজনকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্বভার দিতে পারেন কর্তৃপক্ষ। তবে সবটাই কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের ছাড়পত্র সাপেক্ষে। যদিও অধ্যাপক সংগঠনের একাংশের মত, ‘‘যত শীঘ্র স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ততই মঙ্গল। কারণ ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া, উন্নয়নমূলক কাজে আর্থিক ক্ষমতা, নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও ভূমিকাই নেই। শুধু রবীন্দ্র ভাবনা ও দর্শন মেনে স্বতন্ত্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আসল উদ্দেশ্য হোক উপাচার্যের।’’
[আরও পড়ুন: আইপিএল প্লে অফের চার দল নিশ্চিত, কে কার বিরুদ্ধে খেলবে? রইল পুরো সমীকরণ]
তবে শিক্ষা মন্ত্রকের ছাড়পত্র না মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কে? তা নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর (Bidyut Chakraborty) সময়কালে তাঁর একাধিক সিদ্ধান্তে পাঁচ বছর ধরে তোলপাড় হয়েছে বিশ্বভারতী৷ কখনও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে নিশানা, কখনও এনআরসির স্বপক্ষে সভা, পড়ুয়া থেকে অধ্যাপকদের উপর শাস্তির কোপ। সবশেষে ইউনেস্কোর (UNESCO) বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতি মেলার পরেও স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের নাম বাদ দিয়ে ফলক বসানো বিতর্ক থেকেও বাদ যায়নি। তবে উপাচার্যের দায়িত্বভার গ্রহণ প্রসঙ্গে কিছুই স্পষ্ট হয় নি। সর্বস্তরে প্রশ্ন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য কে? কবে যোগদান করবেন? এ নিয়েই চর্চা শুরু হয়েছে।