ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: কেন্দ্রের দ্বারস্থ হওয়া, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি – এসবের সুফল মিলল অবশেষে। দীর্ঘ ১৬ দিন পর শুক্রবার জুন মাসের বেতন পেলেন বিশ্বভারতীর (Vishavabharati) অধ্যাপক, কর্মীরা। আর পেনশন মিলল অবসরপ্রাপ্তদের। অধ্যাপক সংগঠন VBUFA জানিয়েছে, বেতন, পেনশন আটকে থাকায় তাঁরা যে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রক বিশ্বভারতীর কাছে জানতে চেয়েছিল কেন বেতন, পেনশন দেওয়া হচ্ছে না? সেই জবাবদিহির চাপে পড়েই শুক্রবার বিকেলে বৈঠক করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। আর তারপরই কর্মীদের প্রাপ্য বেতন, পেনশন – সব দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অধ্যাপকদের একাংশ।
বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, বেতন এবং পেনশন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আচমকাই শুক্রবার বিকেলে বিভিন্ন ভবনের অধ্যক্ষ এবং বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। উপাচার্য জানান, করোনা (Corona virus)কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অফিস বন্ধ। তাই বেতন, পেনশন দিতে দেরি হচ্ছে। ঠিক হয়, জুন মাসের বেতন দেওয়া হবে মে মাসের বেতন অনুসারে। কারণ, অফিস বন্ধ থাকায় প্রতি মাসে বেতন হিসাব করে দেওয়া সম্ভব নয়। কর্মীদের অভিযোগ, এর ফলে জুলাই মাসে যে তিন শতাংশ হারে বেতন বেড়েছে, সেই বর্ধিত বেতন মিলবে না যদি মে মাসের বেতনক্রম অনুসারে তা দেওয়া হয়। ফলে তা পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
[আরও পড়ুন: হাজার ব্যবসার আড়ালেই জঙ্গিযোগ, বারাসত থেকে ধৃত JMB লিংকম্যানের কীর্তি ফাঁস গোয়েন্দাদের]
কর্মী, অধ্যাপকরা আরও প্রশ্ন তুলছেন, মে মাসের হিসেব অনুসারেই যদি বেতন দেওয়া হবে, তাহলে তা এতদিন কেন আটকে রাখা হল? এই সিদ্ধান্ত আগে নিলে এই ১৬ দিন বেতন বন্ধ থাকত না। তাহলে কি কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল? একইভাবে অনেক কর্মী, অধ্যাপক এবং পেনশনভোগীরা পাওয়া টাকা ব্যাংকে রাখে। এই বেতন এবং পেনশন বন্ধ রাখার ফলে ১৬দিনের সুদ থেকে তাঁরা বঞ্চিত হলেন। এই নিয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দেবেন বলে জানিয়েছে বিশ্বভারতীয় অধ্যাপক সংগঠন।
প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে জুন মাসের বেতন এবং পেনশন সময়মতো দেয়নি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্মুখ সমরে নামে অধ্যাপক সংগঠন VBUFA এবং পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশন। প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বভারতীর আচার্য নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে অভিযোগ জানান পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তাঁদের অভিযোগ, সময়মতো পেনশন না পাওয়ার ফলে যাঁরা খুব কম পেনশন পান, সেই সব কর্মী বেশ সমস্যায় পড়েছেন। পেনশনারদের আগেও গত ৫ তারিখে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সংগঠন বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী, রাজ্যপাল এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে চিঠি লিখেছিল। অধ্যাপক সংগঠন VBUFA জানায়, বিশ্বভারতীর বেতন দিয়েছে কি না, তা নিয়ে RTI করা হয়েছিল ইউজিসিতে। সেখানে ইউজিসি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, তারা সময়মতো বেতন পাঠিয়ে দিয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কেন সময়মতো বেতন, পেনশন পেলেন না অধ্যাপক, কর্মী, অবসরপ্রাপ্তরা?
[আরও পড়ুন: শনিবার রাজ্যে জয়েন্ট এন্ট্রান্স, স্টাফ স্পেশ্যাল ট্রেনে বিশেষ ছাড় পরীক্ষার্থীদের]
নিয়ম অনুসারে, মাসের শেষ দিন বেতন এবং পেনশন হয়ে থাকে এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে বিশ্বভারতীতে প্রায় ৫০০কর্মী, ৬০০ অধ্যাপক, ২০০ জন নিরাপত্তা কর্মী এবং ৩০০ জন অস্থায়ী কর্মীর পাশাপাশি ১৮০০ জন পেনশনারদের প্রতি মাসে বেতন ও পেনশন দিতে খরচ হয় প্রায় ২৪ কোটি টাকা। তবে সেই টাকা সময়মতো না পাওয়ায় সাময়িক জটিলতা তৈরি হয়েছিল।