সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে কত ঐশ্বর্য যে লুকিয়ে রেখেছে সিকিম, তার ক’টার হদিশ আর ট্যুরিস্ট প্যাকেজে মেলে? প্যাকেজের তো মস্ত অসুবিধাই এই- এক লহমায় হুশ করে সবটুকু দেখে নেওয়া। তাতে শুধু দেখাটাই হয়, সেই জায়গাটার সঙ্গে পরিচয় থেকে যায় অধরাই! সেই জন্যেই রাজবংশ, ধর্ম আর প্রকৃতি- এই তিনে মিলে গড়ে তুলেছে যে গ্যালশিং, তার বুকে সহজে কারও পা পড়ে না!
Advertisement
গ্যালশিং মানে রাজার বাগান। পশ্চিম সিকিমে সেই অষ্টাদশ শতক থেকে রাজবাড়ি রাবদেনসের লাগোয়া এই বাগান। একসময়ে সে বাগানে রাজপরিবারের সদস্যরা ছাড়া সত্যিই কারও পা পড়ত না। কালক্রমে রাজবাড়ি সেখান থেকে উঠে গেল, সেই সঙ্গে উঠে গেল বিধিনিষেধের কড়াকড়ি। তার পর থেকেই এই রাজার বাগানের সৌন্দর্য হয়ে উঠল অবারিত।
তবে, রাজ-পরিবার অন্যত্র চলে যাওয়ায় সেই যে শিথিল হল নিয়ম, তারব সঙ্গে সঙ্গেই কিছু অযত্নও এসে জুটল গ্যালশিংয়ের কপালে। গাছগাছালি আর পাহাড়চূড়ার সৌন্দর্যটুকু রইল বটে, তবে উধাও হল যত্নের সব চিহ্ন। ধীরে ধীরে এক ছোট গ্রামে পরিণত হল গ্যালশিং। সেই গ্রামের পথেই সার্থক হল জীবনযাপন, সার্থক হল ধর্মাচরণও।
কেন না, এই গ্যালশিংয়েই রয়েছে সিকিমের অন্যতম প্রাচীন বৌদ্ধমঠ পেমাইয়াংসে। সিকিমের একমাত্র মঠ, যা সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারে রাজনীতিতে। কাহিনি বলে, এই মঠের প্রধানের অনুমতি ছাড়া সিকিম সিংহাসনের উত্তরাধিকারী নির্বাচিত হত না। এমন ক্ষমতাশালী মঠের হাত ধরে কালক্রমে গ্যালশিং পেল এক নতুন নাম- গেজিং! মানে, বাজার!
এরকম নাম কেন? আসলে রাজবাড়ি অন্যত্র চলে যাওয়ার পর সেই যে গ্রাম বসল গ্যালশিংয়ে, তার লোকেদের তো কোনও বাজার ছিল না। মঠের সন্ন্যাসীদেরও ছিল না প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার কাছাকাছি ঠিকানা। তাই এই দুই স্বার্থ মিলিয়েই গড়ে উঠল এক হাট। শোনা যায়, গেজিং না কি সিকিমের সবচেয়ে পুরনো হাট! একই সঙ্গে যে হাট দিনযাপন আর ধর্মাচরণের প্রয়োজন মেটায়।
বলাই বাহুল্য, গ্যালশিংয়ের অন্যতম প্রধান আকর্ষণই এই হাট আর মঠ। পাশাপাশি, গ্যালশিংয়ে রয়েছে সিকিমের সবচেয়ে পবিত্র হ্রদটিও। তার মহিমা অবশ্য অজানা নয়। বরং, খুবই প্রসিদ্ধ সেই পবিত্র খেচিওপালরি হ্রদ। একটা পাতাও সেই হ্রদের জল কলুষিত করতে পারে না। শোনা যায়, পাখিরা না কি হ্রদের বুকে পাতা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তা তুলে নিয়ে যায় ঠোঁটে করে।
সিকিমের প্যাকেজ ট্যুরে খেচিওপালরি দেখে এসেছেন অনেকেই। কিন্তু, যে গ্যালশিং জুড়ে রয়েছে এই হ্রদের বিস্তার, তা অবহেলিতই থেকে গিয়েছে। এবার বরং সময় বের করে কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসুন গ্যালশিংয়ে। নির্জনতা, সৌন্দর্য, রাজকীয় বিলাস আর ধর্মের পবিত্রতা আপনার ছুটিকে নিঃসন্দেহে করে তুলবে অপরূপ। ঠিক গ্যালশিংয়ের মতোই!
কী ভাবে যাবেন: গ্যাংটক থেকে সকালে বাস ছাড়ে গ্যালশিংয়ের দিকে। দুপুর দুটোয় সেই বাস আবার গ্যাংটক ফেরে। সেইমতো হিসেব করে বাসে বেরিয়ে পড়ুন। চাইলে গ্যাংটক থেকে গাড়ি ভাড়া করেও চলে আসা যায় গ্যালশিং।
কোথায় থাকবেন: গ্যালশিংয়ে ছোটখাটো হোটেলের অভাব নেই। তারই কোনও একটায় ডেরা ফেলুন!
The post সিকিমের রাজার বাগানে appeared first on Sangbad Pratidin.