shono
Advertisement

Breaking News

ঢেউয়ের গায়ে গড়, ভারতের ডেনমার্ক তরঙ্গমবাড়ি

নিরিবিলি এই সাগরতটেই জমে উঠুক পুজোর ছুটি! The post ঢেউয়ের গায়ে গড়, ভারতের ডেনমার্ক তরঙ্গমবাড়ি appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:08 PM Sep 24, 2016Updated: 06:28 PM Sep 24, 2016

তিতাস: ট্র্যানকুয়েবর৷ তামিল ভাষায় যার অর্থ ‘যেখানে সমুদ্রের ঢেউ একসঙ্গে গুনগুনিয়ে ওঠে৷’ বর্তমানে এ জায়গার নাম হয়েছে থরঙ্গমবাড়ি অথবা সহজ বাংলায় তরঙ্গমবাড়ি৷ চেন্নাই থেকে ২৮৩ কিলোমিটার দূরে তামিলনাড়ুর তটের ওপর ছোট্ট জনপদ৷ নিরিবিলি সমুদ্রতট৷ বঙ্গোপসাগরের ঢেউ এখানে ভিজিয়ে দেবে যখন-তখন৷ খানিক দূরে বালির চরেও সময় কাটানোর জন্য আদর্শ এই তট৷ চেন্নাই থেকে সপ্তাহান্তে বেশ ভাল পর্যটকের আনাগোনা এই জনপদে৷

Advertisement

সমুদ্রতট থেকে ২০০ মিটার দূরত্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে সুবিশাল ড্যানসবর্গ কেল্লা৷ আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগের কথা৷ একদল নাবিক ড্যানিশ অ্যাডমিরাল ওভে জেদে-র নেতৃত্বে ভারতবর্ষের সঙ্গে ডেনমার্কের বৈষয়িক সম্পর্ক স্থাপনের কথা ভেবে এসে পৌঁছান তরঙ্গমবাড়িতে৷ তখন এ জায়গা থাঞ্জাভুরের রাজা বিজয় রঘুনাথ নায়কের শাসনে৷ বাণিজ্যের সমস্ত পরিস্থিতি উজ্জ্বল দেখে ১৬২০ সালের ২০ নভেম্বর ডেনমার্কের তৎকালীন রাজা ক্রিশ্চিয়ান চতুর্থর প্রতিনিধি হিসেবে জেদে চুক্তি করতে আসেন রাজার সঙ্গে৷ চুক্তির কথামতো সমুদ্রতটে কেল্লা গড়ে তোলার অনুমতি দেন রাজা৷ সেই বছরই শুরু হয় কেল্লা নির্মাণের কাজ৷ তারই সঙ্গে শুরু হয় মরিচ ও অন্যান্য মশলার রপ্তানি৷


দু’তলাবিশিষ্ট এই কেল্লার নিচতলা ব্যবহৃত হত সৈন্যদের বাসস্থান ও ঘোড়ার আস্তাবল হিসেবে৷ একই তলার অন্য দিকে রাখা হত রপ্তানির সরঞ্জাম৷ কেল্লার উপর তলায় ছিল গভর্নর ও পুরোহিতদের থাকার জায়গা৷ প্রায় ১৫০ বছর এই দুর্গের পথ ধরেই ভারত থেকে সুদূর ডেনমার্কে পৌঁছে যেত মশলাপাতি৷ ক্রমে ড্যানিশ নাবিকেরা শ্রীলঙ্কার পথে এগিয়ে যান৷ এরপর ১৮৪৫ সালে ব্রিটিশের কাছে হস্তান্তর হয় এই কেল্লা৷ সাড়ে বারো লাখ টাকায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিনে নেয় এই কেল্লা৷ জমজমাট বাণিজ্যের পথে মরচে ধরে, শেষে এই পথে বন্ধ হয় রপ্তানি৷ ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পর ইন্সপেকশন বাংলো হিসেবে কেল্লার ব্যবহার শুরু করেন রাজ্য সরকার৷ ১৯৭৮ সালে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ আর্কিওলজি’-র অধীনে এসে সংগ্রহশালায় রূপান্তরিত হয় ড্যানসবর্গ কেল্লা৷

ড্যানিশ স্থাপত্যের এক চোখ-জুড়ানো নিদর্শন এই কেল্লা ২০০ ফুট উঁচু৷ পায়ে হেঁটেই ঘুরে দেখতে হবে কেল্লা৷ ড্যানিশদের হাতে তৈরি হয় দরজা, যাকে বলা হয় টাউন গেট, ড্যানিশ ভাষায় এর নাম ল্যান্ডপোর্টেন৷ প্রাচীরের এই অংশ ভেঙে ফেলে ১৭৯১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর পিটার অ্যানকার একই জায়গায় নতুন গেট নির্মাণ করেন৷ ট্র্যাপেজেইডাল অর্থাত্‍ অসমান্তরাল বাহুবিশিষ্ট চতুর্ভুজের আকারে তৈরি হয় এই কেল্লা৷ ২০০৪ সালের সুনামিতে কেল্লা খানিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ভেঙে পড়ে কেল্লার প্রাচীর ও দু’একটা অংশ৷


তার পরেও কেল্লার ভিতর সংগ্রহশালা দেখার মতন৷ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে কেল্লা হস্তান্তরের দলিল, পাণ্ডুলিপি, কাচ ও পোর্সিলিনের দুর্দান্ত সমস্ত জিনিস, তখনকার ব্যবহৃত আলো, চিনে টি-জার, ব্যবহৃত বাসনপত্র, পাথরের জিনিস, পুতুল, টেরাকোটার মূর্তি- কী নেই! রয়েছে চোল যুগের ব্যবহৃত কিছু সামগ্রী৷ ১০ থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর সময়কালে এখানে শাসন করে চোল ও পাণ্ড্য বংশ৷ তাই সেই সময়ের কিছু সামগ্রীও রাখা রয়েছে সযত্নে৷

ড্যানসবর্গ কেল্লার বাইরে নগর প্রাচীর প্রাঙ্গণে রয়েছে ১৭০১ সালে তৈরি জিয়ন গির্জা, যা ভারতবর্ষের প্রথম প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা৷ ১৭১৮ সালে তৈরি নিউ জেরুজালেম গির্জাও চোখে পড়বে এখানে৷ নগর প্রাচীরের আদল দেখে মনে হবে এ যেন ছোট্ট কোনও ইউরোপীয় জনপদ৷ রয়েছে কাঠের প্রবেশদ্বার ঘেরা কিংস স্ট্রিট৷ সেখানেই সারিবদ্ধ গেট হাউজ, মুলডর্ফস হাউজ, পোর্ট মাস্টার বাংলো, রেহলিং’স হাউজ৷ ডেনমার্ক থেকে আসা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্যই পরবর্তীকালে কেল্লার প্রাঙ্গণে এই ছোট্ট নগর গড়ে ওঠে বলে জানা যায়৷


ড্যানসবর্গ কেল্লার কিছু দূরে পায়ে হাঁটা পথে ঘুরে আসুন ড্যানিশ সেমেট্রি৷ তৎকালীন ড্যানিশ আধিকারিক, অফিসার ও ব্যবসায়ী সমাধিস্থ রয়েছেন এখানে৷ সমুদ্রতটের ওপরই ঘুরে দেখুন ১৩ শতাব্দীতে তৈরি মাসিলামানিপাথর মন্দির৷ পাণ্ড্য রাজা মারাবর্মন কুলশেখর তৈরি করেন এই মন্দির৷

সবশেষে বালির চরে নীল সমুদ্র থেকে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের আনাগোনা উপভোগ করুন৷ জলের তোড় পায়ে এসে লাগবে৷ চোখে পড়বে ইতিহাসমাখা ড্যানসবর্গ কেল্লার ভেঙে আসা পাঁচিলের টুকরো৷ সূর্যাস্তের পর তরঙ্গমবাড়ির রূপ দেখার মতো৷ মাথার ওপর তখন ঝলমলে আকাশ আর কান পাতলেই সঙ্গ দেবে ঢেউয়ের সমবেত কলতান৷

কীভাবে যাবেন:
তরঙ্গমবাড়ি থেকে চেন্নাইয়ের দূরত্ব ২২২ কিলোমিটার৷ চেন্নাই থেকে প্রচুর বাস পাবেন৷ সময় লাগবে ৭-৮ ঘণ্টা৷ পুদুচেরি, চিদম্বরম ও বেঙ্গালুরু থেকেও তরঙ্গমবাড়ি পৌঁছানো যায়৷

কোথায় থাকবেন:
দ্য বাংলো অন দ্য বিচ৷ অগ্রিম বুকিং প্রয়োজন৷

কখন যাবেন:
সারা বছর, তবে বর্ষাকালে না যাওয়াই ভাল৷

সঙ্গে রাখুন:
জল ও শুকনো খাবার সঙ্গে রাখুন, প্রয়োজনে জরুরি ওষুধ৷

The post ঢেউয়ের গায়ে গড়, ভারতের ডেনমার্ক তরঙ্গমবাড়ি appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement