গৌতম ব্রহ্ম: পেয়ারাগাছের গোড়ায় ফুল দিয়ে সাজানো পেল্লায় ‘লাভ সাইন’। ভিতরে জ্বলজ্বল করছে দুটো নাম। শর্মিষ্ঠা ও মাধব। সামান্য এগোতেই কানে ভেসে এল পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ। নান্দীমুখ চলছে। একটু পরেই গায়ে হলুদ। গোধূলি লগ্নে সাত পাকে বাঁধা পড়বেন শর্মিষ্ঠা এবং মাধব। সবকিছুই হচ্ছে নিয়ম মেনে। কিন্তু শুভদৃষ্টি ছাড়া। কারণ শর্মিষ্ঠা যে দৃষ্টিহীন!
[আরও পড়ুন: ‘এতটা নির্দয় হবেন না!’, ইনস্টাগ্রামে অবসাদগ্রস্ত পোস্ট গায়িকা নেহা কক্করের]
দম্পতির মুখে অবশ্য হাজার ওয়াটের আলো। এই বিয়ে যে নতুন নজির গড়েছে। আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকের। সোমবার বিয়ের আগে শর্মিষ্ঠার দৃষ্টিহীন বন্ধুরা দলবেঁধে রক্তদান করেছেন। চেষ্টা করেছেন সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার। বিয়ের মণ্ডপেই চলছে রক্তদান পর্ব। একে একে অতিথিরা আসছেন। বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া, অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তী, বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়, পর্বতারোহী সুমিতা-গৌতম প্রমুখ। কেউ প্রেশার কুকার, মিক্সি মেশিন উপহার দিচ্ছেন নবদম্পতিকে। কেউ দিচ্ছেন ঘর সাজানোর সরঞ্জাম। ফুল-মিষ্টি তো আছেই।
প্রায় চল্লিশ জন রক্ত দিয়েছেন। সিংহভাগই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত।
বেহালার ‘ভয়েস অফ ওয়ার্ল্ড’ (ভিওডব্লু)। দৃষ্টিহীনদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার কর্ণধার গার্গী গুপ্ত চান, এখানকার মেয়েরা আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই বেড়ে উঠুক। নিজের পায়ে দাঁড়াক। এদিনের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও তাঁর। বললেন, “দৃষ্টিহীনরা করুণার পাত্র নন, এটা বোঝাতেই বিয়ের দিন রক্তদান শিবিরের আয়োজন। প্রায় চল্লিশ জন রক্ত দিয়েছেন। সিংহভাগই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত।”
আগেও অবশ্য এখানকার দৃষ্টিহীন আবাসিকদের বিয়ে হয়েছে। শর্মিষ্ঠা-মাধবকে নিয়ে পঞ্চম জুটি। গায়ে হলুদের আগে দু’জনের সঙ্গেই কথা হল। শর্মিষ্ঠা জানালেন, তাঁর বাড়ি ক্যানিংয়ে। ২০০৮ সালে এখানে আসেন। উচ্চমাধ্যমিকের পর এখন ডিএড করছেন। বিয়ে হলেও পড়াশোনার জন্য আগামী এক বছর ভিওডব্লুতেই থাকবেন। তারপর বোলপুরে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে সংসার করবেন।
[আরও পড়ুন: সুমন মুখোপাধ্যায়ের প্রথম হিন্দি ছবি ‘পোশম পা’, প্রকাশ্যে হাড়হিম করা ট্রেলার]
আগামী ১৬ আগস্ট বউভাত। বেহালা থেকে কনেযাত্রীরা দল বেঁধে শান্তিনিকেতন যাবেন। সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট শৈবাল গুহ জানালেন, গার্গীদেবীর সহায়ক হিসাবে ভিওডব্লু-তেই কাজ করেন মাধব। সেখানেই শর্মিষ্ঠার সঙ্গে আলাপ। বিকম অনার্স হলেও বিএড করে রাখার সুবাদে মাধব ভিওডব্লুর ডিএড কলেজে পড়ান। সেই অর্থে পাত্রী হয়েছে ছাত্রী। কিন্তু দৃষ্টিহীন পাত্রীকে নিয়ে সংসার করতে সমস্যা হবে না? অকপট মাধব জানালেন, আট মাস হল আমাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকবার ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছি। কোনও সমস্যা হবে না। ভালবাসা থাকলে কোনও সমস্যা হয় না।
The post বেহালায় নজিরবিহীন উৎসব, রক্তদানের আলোয় উজ্জ্বল দৃষ্টিহীনের বিয়ে appeared first on Sangbad Pratidin.