সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে গণমাধ্যম ছাড়া এক পা-ও চলা অসম্ভব। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি জড়িয়ে রয়েছে মিডিয়া। প্রতিটি পদক্ষেপে সংবাদ আমাদের দরকার। অথচ কারণে অকারণে আমরা এই সংবাদমাধ্যমকেই কাঠগোড়ায় তুলি। মাঝে মধ্যে ভুলে যাই, সংবাদমাধ্যম ছাড়া আমরা অচল। অভিযোগ তুলি, আজকাল খবরের কাগজ বা চ্যানেলগুলো তো ‘টাকা নিয়ে খবর করে’। অথচ এর সত্যাসত্যের পোস্টমর্টেম করার কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবি না। হাওয়াতেই ভাসিয়ে দিই অভিযোগের ধ্বজা। মিডিয়া জগতের এইসব সত্য-মিথ্যার গল্প নিয়েই এবছর বিবেকানন্দ সার্বজনীন দুর্গোৎসবের থিম, ‘খবরের উৎস থেকে উৎসবের খবর’। শিল্পী সায়ক রাজ।
কথায় কথায় শিল্পী বলছিলেন, আবহাওয়ার খবর হোক বা ঘুরতে যাওয়ার আগে কোনও জায়গা সম্পর্কে বিস্তারিত খবর জোগাড়, ভরসা কিন্তু সংবাদমাধ্যম। কোথাও গন্ডগোল হচ্ছে, নাকি সীমান্তে যুদ্ধ বেঁধেছে- এসব খবরই আমাদের ড্রয়িংরুমে নিরন্তর জোগান দিয়ে যাচ্ছে মিডিয়া। অথচ তা মাথায় রাখে না কেউ। যে কোনও ইস্যু নিয়েই হোক সাংবাদিকদের তুলোধোনা করতে ছাড়ে না মানুষ। কিন্তু সাংবাদিকরা তো শুধু চাকরি করেন না, সমাজের প্রতি তাঁদের একটা দায়িত্ববোধও আছে। অলিখিত দায়িত্ব। তাঁরা জানেন তাঁদের খবরের উপর ভিত্তি করে অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। মানবিকতা আর দায়বদ্ধতার এই মিশেল টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব নয়। সেই অলিখিত দায়িত্ববোধের জেরেই সঠিক সংবাদ পরিবেশনে নিরন্তর পরিশ্রম করেন তাঁরা। অথচ ছোটবেলার সেই টেলিফোন খেলার মতো খবর পাঁচকান হয়ে অন্যভাবে পৌঁছয় লোকের কাছে। এর ফল ভুগতে হয় সাংবাদিকদেরই। দায়িত্ববোধ নিয়ে খাটাখাটনির পর দিনের শেষে বরাতে জোটে অভিযোগ। এখান থেকেই ‘মিডিয়া’ থিমের উৎপত্তি।
[ আরও পড়ুন: পুজোয় কলকাতায় অল্প খরচে ঠাকুর দেখতে চান? ভরসা রাখতে পারেন পর্যটন দপ্তরের প্যাকেজ ট্যুরে ]
শিল্পী জানালেন, থিম সাজাতে তাঁরা পিছিয়ে গিয়েছেন কয়েক শতক। কবি কিটসের সময়ও সংবাদপত্র ছিল। কিন্তু তা ছিল শিক্ষিত সমাজের মধ্যে সীমবদ্ধ। খবরের কাগজ তখন শিক্ষিত মানুষের ড্রইংরুমে খুঁজে পাওয়া যেত। বাকিদের কাছে রেডিও তখন ছিল খবর পাওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম। মূলত যুদ্ধ বা অন্যান্য সতর্কবার্তা শুনতেই রেডিওকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করত তারা। সেখান থেকে বিবর্তনের অনেক ধারা পেরিয়ে আজ এই জায়গায় এসেছে খবরের কাগজ, টিভি, রেডিও। থিমের মধ্যেও পড়েছে তার আঁচ। তিনটি বিভাগে সাজানো হয়েছে সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমগুলিকে। অডিও, ভিস্যুয়াল ও অডিও ভিস্যুয়াল। অডিওর মধ্যে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে রেডিওকে। এক্ষেত্রে মণ্ডপ সাজাতে রেডিওর বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করা হবে। যেমন ভিস্যুয়ালের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে সংবাদপত্রের কাটিং। এর মধ্যে আবার রাজনীতি, বিনোদন, খেলার মতো বিভেদ করা হয়েছে। আর অডিও ভিস্যুয়ালের ক্ষেত্রে টেলিভিশনের পিকচার টিউব ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হবে মণ্ডপ। এছাড়া বহু বিশিষ্ট সাংবাদিকের ছবিও মণ্ডপে থাকবে।
সায়ক বলছিলেন, এফএম বাদ দিলে রেডিও এখন প্রায় ব্রাত্য। দূরদর্শনের কথা তো ভুলেই গিয়েছে মানুষ। ডিজিটালের যুগে এখন সংবাদপত্রই জায়গা হারাচ্ছে। নয়ের দশক যারা দেখেছে তাদের মনের মণিকোঠায় দূরদর্শন বা আকাশবাণীর সিগনেচার টিউনের হালকা স্পর্শ লেগে রয়েছে। কিন্তু তারপর যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের কাছে তো সেই সুর প্রায় অপরিচিত। যদিও যাঁরা আগ্রহী, তাঁরা শুনেছেন। কিন্তু বাকিরা? তাঁদের সঙ্গে গণমাধ্যমের দুই মাইলফলকের পরিচয় করিয়ে দিতে আবহসংগীতেও রয়েছে আঁচ। দীপাবলি দত্ত সেভাবেই সুর বেঁধেছেন। মণ্ডপের অন্দরে বাজবে আমাদের অতি পরিচিত একটি ইনস্ট্রুমেন্টাল। তবে সেটি কী, তা ভাঙেননি দীপাবলি বা সায়ক।
The post পুজোয় খবর নিয়ে খবরদারি বিবেকানন্দ সার্বজনীনের, এবারের থিম মিডিয়া appeared first on Sangbad Pratidin.