ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: একটা আংটি। অথবা হাঁটার লাঠি জানিয়ে দেবে আপনার ব্লাড প্রেশার, হার্ট বিট, সুগার এমনকী আচমকা হৃদয়ের কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না। জানিয়ে দেবে আপনার ডাক্তারবাবুকে। আজ সোমবার স্বাস্থ্য ভবনে এই প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে চলেছে। থাকছেন রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের প্রখ্যাত হৃদ ও বয়স্ক রোগ বিশেষজ্ঞরা। সূত্র বলছে, পাইলট প্রোজেক্ট হিসাবে কলকাতার একটি হাসপাতালে বয়স্ক রোগীদের জন্য এই কর্মসূচি চালু হতে চলেছে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ অর্থাৎ ষাটোর্ধ্ব নাগরিকের সংখ্যা নিয়ে তেমন কোনও সরকারি সমীক্ষা হয়নি। তবে তিলোত্তমার ৫৫ শতাংশ নাগরিক যে বয়স্ক অর্থাৎ ৬০ বছর বা তার বেশি এনিয়ে কোনও সংশয় নেই। তাই বয়স্ক সহ-নাগরিকদের শারীরিক সমস্যা হলে তাঁর চিকিৎসক যাতে সঙ্গে সঙ্গে জানতে পেরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন তার জন্য এই পদক্ষেপ। বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উদ্যোগে মেডিক্যাল কলেজ জেরিয়াট্রিক ওয়ার্ড শুরু হয়েছে।
[আরও পড়ুন: দুর্বল সংগঠনের সঙ্গে গোষ্ঠীকোন্দল, দিল্লির বৈঠকে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বঙ্গ বিজেপি]
হু (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) রাজ্যের শতাধিক চিকিৎসককে বয়স্ক রোগ চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাঁরা এখন জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করছেন। কিন্তু সর্বক্ষণ তো ডাক্তারবাবুকে হাতের কাছে পাওয়া যায় না। আবার বাড়ি থেকে হাসপাতাল যেতে অন্তত একজনের সাহায্য দরকার। কিন্তু হাতে আংটি বা একটা লাঠি থাকলে রোগীর সমস্যা অনায়াসে ওয়েভ লেংথে ডাক্তারবাবুর মোবাইলে বা ল্যাপটপে সমস্ত তথ্য চলে আসবে। সেই অনুযায়ী ওষুধের ব্যবস্থা করবেন চিকিৎসক। দরকারে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে হাসপাতালে ভরতি করে চিকিৎসা করা হবে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জেরিয়াট্রিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক ডা. অরুণাংশু তালুকদারের কথায়, ‘‘রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর বয়স্ক নাগরিকদের সুস্থ রাখতে সদা সচেষ্ট। এটি তারই অঙ্গ।’’
অরুণাংশুবাবুর কথায়, আংটি বা লাঠি যেটি ওই প্রবীণ ব্যক্তি সঙ্গে রাখবেন তার মধ্যেই একটি চিপ যুক্ত থাকবে। যার মাধ্যমে অসুস্থ-অশক্ত মানুষটির শরীরের যাবতীয় তাৎক্ষণিক উপসর্গ পৌঁছে যাবে চিকিৎসকের কাছে। এই আংটি বা লাঠি চার্জ হবে বোতাম আকারের ব্যাটারি দিয়ে। ইচ্ছে করলে ভাড়া নেওয়া যেতে পারে। অথবা কিনতেও পারেন।’’ আংটি বা লাঠির দাম কত হবে তা ঠিক করবে স্বাস্থ্য ভবনের বিশেষজ্ঞ কমিটি। এক চিকিৎসকের কথায়, বিদেশে তো প্রায় সব বয়স্ক এমন আংটি বা লাঠি ব্যবহার করেন। জেটযুগে সন্তান থেকে অনেক দূরে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের হাতে টাকা থাকলেও পাশে থাকার সময় নেই। এই ঘটনা রূঢ় হলেও বাস্তব। তাই স্বাস্থ্য দফতর এমন পদক্ষেপ নিলে প্রবীণ নাগরিকরা সহজে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন।
[আরও পড়ুন: SSKM হাসপাতালে অশান্তি, ‘সামলে দিয়েছি’, জুনিয়র চিকিৎসকদের হেনস্তা নিয়ে মন্তব্য মমতার]
ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির উদ্যোগে নবদিগন্ত ও কালীঘাটের ‘নির্মল হৃদয়’য়েও আবাসিকদের নিখরচায় মাসে একদিন স্বাস্থ্য ও মনোরোগের সমস্যা চিকিৎসা হয়ে থাকে।’’ সংস্থার অধিকর্তা ডা. অধ্যাপক অমিত ভট্টাচার্যের কথায়, এই কাজে সাহায্য করেছে স্বাস্থ্য ভবন ও পিজির অধিকর্তা ডা. মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন চিকিৎসকদের মধ্যে এই কাজ সামাজিক দায়বদ্ধতা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।