সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: এক যুগ আগেই শতবর্ষ পার করেছেন। এখনও দুর্বল পায়ে নিয়ম করে পাড়া বেরিয়ে প্রতিবেশীদের খোঁজ নেন। প্রতিবেশীরাও বেশ আদর-সমাদর করেন। গোটা তল্লাটে একডাকে সবাই চেনেন হারাধন সাহাকে। ভালবেসে ১১১ বছরের বৃদ্ধকে ছোঁড়া বলে ডাকেন সকলে। রাজ্যের প্রবীণ ভোটারদের একজন হারাধনবাবু। ব্রিটিশ আমলে ইউনিয়ন বোর্ডের সময় থেকেই ভোট দিচ্ছেন শতায়ু। গত বিধানসভাতেও (WB Assembly Elections) কারও সাহায্য ছাড়া একাই বুথে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তবে তাল কেটেছে এবার। মনের জেদ এবার হার মেনেছে অশক্ত শরীরের কাছে। ‘ঘরের মেয়ে’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) ভোট দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বিদ্রোহ করে বসেছে শরীর। তাই এবার পোস্টাল ব্যালটই ভরসা কাঁকসার ১১১ বছরের ‘ছোঁড়া’র।
পশ্চিম বর্ধমান (Paschim Bardhaman) জেলার ৯টি বিধানসভায় মোট শতায়ু ভোটারের সংখ্যা ২২ জন। সবথেকে বেশি শতায়ুর বাস দুর্গাপুর পূর্ব (Durgapur Purba) বিধানসভায়। কুলটি (Kulti) বিধানসভায় একজনও নেই। জন্মসূত্রে বয়স ১১১ হলেও ভোটার কার্ড অনুযায়ী হারাধনবাবুর বয়স ১০২। ব্রিটিশ আমলে দাপটের সঙ্গে ঠিকাদারের কাজ করেছেন। চাষের কাজ দেখভাল করেন এখনও। গোটা তল্লাটে একডাকে সবাই চেনেন ‘ছোঁড়া’কে। ঘর থেকে মাত্র ৭০০ ফুট দূরেই ‘আদুরিয়া সরস্বতীগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে হারাধনবাবুর পক্ষে আর যাওয়া সম্ভব নয়। সেজন্যই নির্বাচন কমিশনে (Election Commission of India) পোস্টার ব্যালটে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন।
[আরও পড়ুন: বহু মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক, বন্ধুর মামিকে ‘বিয়ে’, BJP প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক স্ত্রী ]
জেলার সবথেকে প্রবীণ ভোটার হারাধন সাহার আবেদনে সাড়া দিয়েছে কমিশন।বাড়িতে বসে ভোট দিতে পারবেন জেনে খুশি হারাধনবাবুও। ব্রিটিশ আমলে লাউদোহা কালিনগর গ্রামে ভোট দিতে যেতেন হারাধন সাহা। কখনও গরুর গাড়ি করে আবার কখনও সাইকেলে চড়ে স্বাধীন ভারতে মলানদিঘিতে যেতেন ভোট দিতে। পরে গ্রামেই গড়ে ওঠে ভোট কেন্দ্র। ২০১১ সাল থেকে সরস্বতীগঞ্জের বুথে ভোট দিয়ে আসছেন হারাধন সাহা। এখনও ভোরে নিয়ম করে ওঠেন। সামান্য জলখাবার খেয়েই লাঠি হাতে বেরিয়ে পড়েন পাড়ায়। ঘুরতে ঘুরতেই জানান, “বেঁচে যখন আছি ভোট দেবই। প্রয়োজনে বুথেই যাব। তবে কমিশনের ঘরে বসেই ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এবারের ভোট খুব গুরুত্বপূর্ণ।” নির্বাচন কমিশনের তরফে কাঁকসার বিডিও সুদীপ্ত ভট্টাচার্য জানান, “ঘরে বসে ভোট দেওয়ার আবেদন করেছিলেন। তাঁর আবেদন মোতাবেক আমরা নিয়ম মেনেই সব ব্যবস্থা নিয়েছি।” শতক পেরিয়ে এখন ভোট দিতে বদ্ধপরিকর দুর্গাপুর পূর্বের ভোটার হারাধন সাহা ‘ছোঁড়া’।