স্টাফ রিপোর্টার: দলের রাজ্য নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই বঙ্গ বিজেপির সঙ্গে সংঘাত প্রকাশ্যে চলে এল অর্জুন সিংয়ের (Arjun Singh)। বিজেপিতে যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁদের অনেকেই যোগ্য নন। নেতারা ঘরে বসে ফেসবুক—হোয়াটসঅ্যাপে সংগঠন করেন বলে রবিবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে প্রকাশ্যে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি অর্জুন সিং। সোমবার অর্জুনকে পালটা জবাব দিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সুকান্তর বক্তব্য, “বিজেপি রাস্তাতেই আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই। বিজেপি ব্লকে ব্লকে আন্দোলন-মিছিল করছে। আমাদের দলের নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। দল সেই মতোই চলছে। ওঁর (অর্জুন) সমস্যা থাকলে উচ্চনেতৃত্বকে জানাতে পারেন।”
অর্জুন সিং রাজ্য বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ সামনে এনেছেন তার জবাব এদিন সুকান্ত দিয়েছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি এদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, বারাকপুরের সাংসদের আচরণে দল অসন্তুষ্ট। দলীয় সূত্রেও খবর, বেসুরো অর্জুন সিংয়ের আচরণে ক্ষুব্ধ রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের টিম অমিতাভ গোষ্ঠী। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের গোচরেও তাঁরা এনেছেন বলে খবর। তবে দলের বিরুদ্ধে রবিবার প্রকাশ্যে অর্জুন সিং যে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন তাতে অবশ্য খুশি বিক্ষুব্ধ শিবির।
[আরও পড়ুন: এবার নাইট শিবিরে ধাক্কা, চোটের জন্য আইপিএল থেকে ছিটকে গেলেন রাহানে]
বিক্ষুব্ধ শিবিরের নেতাদের বক্তব্য, “আমরা এতদিন যে কথা বলে আসছিলাম ঠিক সেই কথাই এবার বলছেন অর্জুন সিং।” টিম অমিতাভ-র অনভিজ্ঞতা-অযোগ্যতা নিয়েই সরব বিক্ষুব্ধ শিবির। অর্জুন সিংও প্রশ্ন তুলেছেন যে গুটিকয়েক নেতা বিজেপি চালাচ্ছেন তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে। আসানসোল ও বালিগঞ্জের উপনির্বাচনে পর্যদুস্ত হওয়ার পর টিম অমিতাভর বিরুদ্ধে তোপ দেগে নেতৃত্বের অযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা, সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। ক’দিন আগেই বেসুরো অর্জুনকে নিয়ে গোপন বৈঠক করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কার্যত হাতে পায়ে ধরে অর্জুনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন এই মুহূর্তে দল না ছাড়তে। কিন্তু শুভেন্দুর সেই বৈঠকের পরই দলের বিরুদ্ধেই সরব বারাকপুরের সাংসদ।
রবিবার দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বেইমানির অভিযোগ তুলে অর্জুন বলেছিলেন, ২০১৯—এর লোকসভা ভোটের আগে তাঁকে হারানোর চক্রান্ত হয়েছিল। এ বিষয়ে সুকান্ত মজুমদার এদিন বলেন, “এসমস্ত কথা না বললেই ভাল হয়। অনেক সময় আমাদের বিভ্রান্তি থাকে, মনে হয় আমাদের বিরুদ্ধে কেউ চক্রান্ত করছে। অনেক সময় এটা আবার সত্যিও হতে পারে। রাজনীতিতে এরকম হতেও পারে নাও হতে পারে।” এরপরই অর্জুনের নাম না করে তাঁকে সুকান্তর পরামর্শ, “আগের লোকসভা ভোট তিন বছর আগে হয়ে গিয়েছে। সামনের ভোট চলে এল। আগামীর দিকে আমাদের তাকানো উচিত। পুরনো জিনিস মাটি খুঁড়ে বের না করাই ভাল। এতে সমস্যা আরও বাড়বে, কমবে না।”
[আরও পড়ুন: বাইশ গজে মৌমাছির খেলা! মাটিতে শুয়ে পড়লেন ক্রিকেটার-আম্পায়াররা, ভাইরাল ভিডিও]
অর্জুন প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার আরও বলেন, “২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিজেপি বাংলায় বেড়েছে। বহু মানুষ দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তারা অনেকেই জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। যারা দলের নীতি—আদর্শের সঙ্গে সেইভাবে পরিচিত নয় যেভাবে পরিচিত হওয়া দরকার ছিল। স্বাভাবিকভাবেই তারা দলের নিয়মনীতি জানে না।” নাম না করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি অর্জুনের উদ্দেশেই বলেছেন, বিজেপির নীতি—আদর্শের সঙ্গে যাঁরা এখনও পরিচিত হতে পারেননি, তাঁদের দলেই রয়েছেন বারাকপুরের সাংসদ। এদিকে, জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম কটাক্ষ করে বলেছেন, দর-কষাকষি করতেই অর্জুন সিং দিল্লিতে গিয়েছেন।