দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: ২০১৫-র নির্বাচনের থেকেও অনেক বেশি সংখ্যক আসন জিতে চন্দননগর পুরনিগম (Chandannagar Municipal Corporation) দখল করল তৃণমূল। সোমবার প্রেমদিবসে চন্দননগর পুরনিগমের নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সবুজ প্রেমে ভাসলেন গোটা চন্দননগরবাসী। সবুজ ঝড়ে ধরাশায়ী বিরোধী। ৩২ টি ওয়ার্ডের ৩১ টি ওয়ার্ডে জয় লাভ করে তৃতীয়বারের জন্য চন্দননগরের পুরবোর্ড দখল করল তৃণমূল (TMC)। আরেকটি আসন গিয়েছে সিপিএমের দখলে। জনরায়ে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যাত বিজেপি (BJP)। একটি আসনও মিলল না।
৩৩ আসনের চন্দননগর পুরসভায় গত নির্বাচনে তৃণমূলের দখলে ছিল ২১ টি ওয়ার্ড। তার সঙ্গে দু’জন নির্দল কাউন্সিলার তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সেই সংখ্যা দিয়ে দাঁড়িয়েছিল তেইশে। এবার সেই সংখ্যাকে ছাপিয়ে এককভাবে ৩১-এ পৌঁছে গেল তৃণমূল। এবার বত্রিশ ওয়ার্ডে ভোট হয়েছে। একটি ওয়ার্ডের প্রার্থীর মৃত্যুতে সেখানে ভোট হয়নি। গতবারের নির্বাচনে সিপিএম (CPM)ন’টি ওয়ার্ড দখল করলেও এবারে মাত্র একটি ওয়ার্ডে জিতে কোনওরকমে সম্মান রক্ষা করেছে সিপিএম। আর বিজেপিকে মানুষ সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচনে কোনও ওয়ার্ডে খাতাই খুলতে পারেনি গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীরা। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে চন্দননগর বিধানসভা এলাকায় বিজেপি পুর এলাকায় তিনটি ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকলেও মানুষ কিন্তু তাদের উপর আস্থা রাখেন নি।
[আরও পড়ুন: চলতি সপ্তাহেই খুলছে রাজ্যের প্রাথমিক স্কুল, নয়া কোভিড নির্দেশিকায় জানাল নবান্ন]
সোমবার সকাল থেকেই নির্বাচনী গণনাকেন্দ্রে কাছে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে প্রবল উৎসাহ দেখা যায়। বিজয় নিশ্চিত জেনে আগে থেকেই সকলে সবুজ আবির মেখে এদিন জমায়েত হয়েছিলেন। এরপর গণনা শুরু হওয়ার ঘন্টা দেড়েক পর থেকে যখন একের পর এক ওয়ার্ডে জয়ের খবর আসতে থাকে তখন উল্লাসে ফেটে পড়েন কর্মী, সমর্থকরা। ডিজে সাউন্ড বক্সের বাজনার তালে তালে রীতিমতো উৎসবের মেজাজে নাচ করতে থাকেন।
৩২ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী পীযুষ বিশ্বাস সবচেয়ে বেশি ২০১৬ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন। ৩০ নং ওয়ার্ডে ১৮০০-র বেশি ভোটে জয়লাভ করে চন্দননগর পুর নিগমের বিদায়ী মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, ”এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জয়।” বিজেপি সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ”আগামী দিনে বিজেপি চন্দননগর থেকে মুছে যাবে তারই পথ প্রশস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি আগের বোর্ড ভেঙে যাওয়ার পরও যে নজিরবিহীন উন্নয়ন হয়েছে শহরে – তাতে তাদের মানুষ ভুল বোঝেননি।” পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, এই বোর্ড দীর্ঘস্থায়ী হবে।
[আরও পড়ুন: কানে হেডফোন, মোবাইল গেমে মন, ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু মামা ও ভাগ্নের]
অন্যদিকে, বিপুলভাবে জয়লাভের পর চন্দননগরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন সমস্ত প্রার্থীদের পক্ষ থেকে এই জয় চন্দননগরের সমস্ত মানুষের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে ২২ জন নতুন মুখ জয়যুক্ত হয়েছেন। অন্যান্য বিরোধী দল প্রসঙ্গে বলেন, ”সিপিএম একটি মাত্র আসনে জয়ী হয়েছে। কটাক্ষ করে বলেন ছোটবেলায় আমাদের মা-মাসিরা কপালে টিকা লাগিয়ে দিতেন যাতে নজর না লাগে। সেরকম কারুর যাতে নজর না লাগে তাই সিপিএমকে একটা আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।” এই জয়ের পর আগামী দিনে তাদের প্রথম লক্ষ্য হল চন্দননগরের মানুষকে ১০০ শতাংশ পরিষেবা দেওয়া।
সিপিএমের পক্ষ থেকে চন্দননগর পৌর নির্বাচন কমিটির সদস্য গোপাল শুক্লা বলেন, ”এবারের নির্বাচনে একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষীর ভাণ্ডারের জনমোহিনী কর্মসূচি, অন্যদিকে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। শাসকদল ক্ষমতায় না এলে এলাকায় কোনও কাজ হবে না এই ধরনের প্রচার একটা বড় অংশের মানুষকে প্রভাবিত করেছিল। তবে তা সত্ত্বেও বিধানসভা ভোটে চন্দননগর পুর এলাকায় তাদের ভোট ১৫ শতাংশের কম ছিল। সেখানে এবারের নির্বাচনে ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছি। তাই খাতায়-কলমে খারাপ দেখালেও রাজনৈতিকভাবে বিশ্লেষণ করলে আমরা অনেকটাই সামনে এগিয়ে এসেছি।”