টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: সভা শেষে বাঁকুড়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও কর্মাধ্যক্ষদের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। তাঁর কথায়, জেলা সভাধিপতি কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। সভাধিপতির সঙ্গে বাকিদের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এমনকী, টেন্ডার আটকে রাখা নিয়েও ধমক দেন তিনি। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, “সকলে একসঙ্গে কাজ করুন। মানুষের জন্য কাজ করুন।”
বুধবার বাঁকুড়ার খড়বোনা গ্রাউন্ডে প্রশাসনিক সভা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সভামঞ্চের পিছনে একটি অস্থায়ী ঘরে করা হয়েছিল। যেখানে জেলা পরিষদ সভাধিপতি অনুসূয়া রায়, কর্মাধ্যক্ষ-সহ ৫৫ জন দলীয় প্রতিনিধি এবং বাঁকুড়া ও বিষ্ণুুুপুর তৃণমূলের সাংগাঠনিক জেলা সভাপতি হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা পরিষদের সভাধিপতির খোঁজ করেন মমতা। জিজ্ঞেস করেন, “জেলা পরিষদের সভাধিপতি কে?” জবাব দেন সভাধিপতি অনুসূয়া রায়। এর পর কার্যত ধমকের সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলে ওঠেন, “তুমি সভাধিপতি? তুমি তো কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখ না। এত দ্বন্দ্ব কেন?” অভিভাবকের মতো মমতার পরামর্শ, “নিজেদের মধ্য়ে দ্বন্দ্ব রেখো না। সকলে একসঙ্গে কাজ কর। মিলেমিশে থাক।”
[আরও পড়ুন: ২০১৪-র ভোটে তৃণমূলের অ্যাকাউন্টে ‘গরমিল’! অরূপ বিশ্বাসকে তলব ইডির]
টেন্ডার আটকে রাখা নিয়ে ‘ধমক’ দেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি অর্চিতা বিদকেও। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “টেন্ডার কেন আটকে? তাড়াতাড়ি কাজ শেষ কর।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, সমস্যা থাকলে তা সেদিকে নজর রাখবেন বাঁকুড়া সাংগাঠনিক জেলার তৃণমূল সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী। তিনি সমস্যা মিটিয়ে দেবেন।
উল্লেথ্য, গত অক্টোবরে সভাধিপতির বিরুদ্ধে জেলা পরিষদের সদস্য ও কর্মাধ্যক্ষরা জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জমা করেছিলেন। বলা হয়েছিল, সভাধিপতি কারও সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করেন না। এর মধ্যে কেন্দ্রের পঞ্চাদশ অর্থবর্ষ ও রাজ্যের পঞ্চম অর্থবর্ষের টাকা ঢুকেছে জেলা পরিষদের কাছে। পথশ্রী ফেজ তিনের টাকাও ঢুকেছে। এদিকে জেলায় প্রকল্পের জন্য তহবিল বন্টন হয়নি বলে অভিযোগ। সূত্রের দাবি, সভাধিপতি ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের মধ্যে সমস্যা রয়েছে। সেই অভিযোগের পাহাড় পৌঁছে গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। এদিন জেলা সফরে তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
[আরও পড়ুন: মাঝপথে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, দিল্লির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমকে এবার সন্দেশখালি যেতে অনুমতি হাই কোর্টের]
এ প্রসঙ্গে সভাধিপতি অনুসূয়া রায় বলছেন, “দিদি আমাদের অভিভাবক। উনি যা নির্দেশ দিয়েছেন তা মেনেই কাজ করব।” একই কথা শোনা গিয়েছে পূর্ত কর্মাধ্য়ক্ষ অর্চিতা দে এবং কর্মাধ্যক্ষ সুজাতা মণ্ডলের গলাতেও। তিনি বলেন, “বোর্ড গঠনের পর এই প্রথমবার পরিদর্শনে এলেন মুখ্যমন্ত্রী। উনি আমাদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।”
এদিকে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কাজ উগরে দেওয়ার পাশাপাশি বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল খাতড়া মহাকুমার রানীবাঁধ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি পদ ফের ফিরিয়ে দিয়েছেন চিত্ত মাহাতোকে। উল্লেখ্য, মাস কয়েক আগেই চিত্তবাবুকে অপসারিত করে এই পদে বসানো হয়েছিল উত্তম কুম্ভকারকে। তারপর থেকেই দলের অন্তরে ক্ষোভ বিক্ষোভে ফুটছিলেন দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। এই ক্ষোভের আঁচ পেতেই এদিন উত্তম কুম্ভকারকে রানিবান ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি পর থেকে অপসারিত করে চিত্ত মাহাতোকে পথ ফিরিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলনেত্রীর এই সিদ্ধান্তে খুশি জঙ্গলমহলের এই মাহাতো নেতা।