সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বনদপ্ততরের পাশের রাস্তায় বাঁ-দিকে দালান বাড়ি। তার উলটোদিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘বাংলার গর্ব মমতা’ লেখা ছোট গাড়ি। পাশেই আমগাছের তলায় কয়েকটি ফাঁকা চেয়ার। বাড়ির দেওয়ালের দু’পাশে চকচকে রঙে লেখা জয়পুর আসনের তৃণমূল প্রার্থী (TMC Candidate) উজ্জ্বল কুমার। সঙ্গে আঁকা ঘাস ফুলের উপর জোড়াফুলের প্রতীক। কিন্তু শনিবার ভোটের দিনে মনমরা হয়ে ‘ঘরবন্দি’ হয়েই থাকলেন তৃণমূল প্রার্থী। দিলেন না ভোটও। পুরুলিয়ার জয়পুর বিধানসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী উজ্জ্বল কুমার সারাদিন ঘরে বসেই কাটিয়ে দিলেন।
দলের নেতা–কর্মী–সমর্থকরা তাঁর বাড়িতে এসে, ফোনে কথা বলে ভোট নিয়ে তাঁর মতামত নিতে চাইলেও তা এড়িয়ে গেলেন। ভোটের দিনটা খানিকটা ঘুমোলেন আর বাকিটা মোবাইলেই ডুবে থাকলেন তৃণমূল প্রার্থী তথা আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির সহ–সভাপতি, ব্লক তৃণমূল কংগ্রসের সভাপতি উজ্জ্বল কুমার বাউরি।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে গিয়ে রাজ্যের ভোট প্রভাবিত করার চেষ্টা! মোদির বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের অভিযোগ মমতার]
হলফনামায় ছোট্ট ভুলে তারিখ বিভ্রাটে বাতিল হয়ে যায় উজ্জ্বল কুমারের মনোনয়ন। তারপর তিনি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলে কমিশনকে মনোনয়ন গ্রহণ করতে বলা হয়। কিন্তু নিবার্চন কমিশন ডিভিশন বেঞ্চে গেলে সেই নির্দেশ নাকচ হয়ে যায়। তবে হাল ছাড়েননি উজ্জ্বল। দ্বারস্থ হয়েছিলেন সু্প্রিম কোর্টের। গত ২৫ মার্চ তার শুনানি থাকলেও ভোট শেষে ১৩ এপ্রিল পরবর্তী শুনানি রয়েছে। উজ্জ্বলের আশা, বিচার তিনি পাবেন। তাঁর কথায়, “অতীতে রায়বরেলিতে ভোটকে অবৈধ ঘোষণা করে পুণরায় নির্বাচন হয়েছিল। ফলে আশায় রয়েছি। হলফনামার ছোট্ট তারিখের ভুলে মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাবে, তা ভাবতেই পারছি না। এখন আর কিছুই ভাল লাগছে না।”
ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের পর নির্বাচনী প্রচারে মানবাজারের সভা থেকে যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, জয়পুর আসনে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করবে তৃণমূল। তারপর কাশীপুর বিধানসভায় নির্বাচনী (WB Elections 2021) জনসভা থেকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দল প্রার্থী দিব্যজ্যোতি সিং দেওর নাম করে সমর্থন জানানোর কথা ঘোষণা করেন। এরপর দলীয় কর্মীরা তাঁর হয়ে প্রচারে নামলেও উজ্জ্বল কিন্তু কোন প্রচার করেননি। কারণ জয়পুর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি দিব্যজ্যোতি সিং দেও উজ্জ্বলকে প্রার্থী হিসাবে মেনে নিতে না পেরে ওই পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে নির্দলে মনোনয়ন করেন। যদিও তৃণমূল তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। ফলে দল দিব্যজ্যোতিকে সমর্থন করলেও তা মেনে নিতে পারেননি উজ্জ্বল। তাই তিনি এদিন ভোট দিতে বুথে যাননি। তাঁর কথায়, “এখন মন ভাল নেই। তাই ভোট দিইনি।”
[আরও পড়ুন: প্রথম দফায় ৯০% জায়গায় ভোট হয়েছে নির্বিঘ্নে, কমিশনকে ধন্যবাদ বিজেপি নেতাদের]
এদিকে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ উড়িয়ে পুরুলিয়াজুড়ে শনিবার দেখা গেল ফি বুথের পাশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্যাম্প থেকে ভেট নিয়ে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা! দলের নেতা–কর্মীরাও ভোটারদের হাতে ভেট পৌঁছে দিতে তৎপর। সেই সঙ্গে কানে ফিসফিসানি। কেউ বলছেন বড় ফুলে। কারও আবেদন ছোট ফুলে। এভাবেই বলরামপুর থেকে আড়শা, জয়পুর থেকে বাঘমুণ্ডি, ভেট নিয়েই হল ভোট। সেউ–বোঁদে, ছোলা ভেজা, পাতিলেবুর সরবত থেকে মুড়ি, ঘুঘনি, ছোলাসেদ্ধ, লাড্ডু- সবরকম খাবারই ছিল ‘ভেট’-এ। জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা পুরুলিয়ার জেলাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টি দেখা হচ্ছে।