বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত ও ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: শরিকি বিবাদ নেই। বাড়তি দলের জন্য ঘর বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। এবার বরং উলটো। ১৯৫২ সালের পর এবার বিধানসভায় (Assembly House) বিরোধীদের ঘর বাড়তি পড়েছে। তার ভাগ্য নির্ধারণ হবে কীভাবে? সিদ্ধার্থশংকর রায়, জয়নাল আবেদিন, আবদুস সাত্তার, অতীশ সিনহাদের মতো ব্যক্তিত্ব যে বিরোধী দলের চেয়ার অলংকৃত করে এসেছেন, সেই চেয়ারেই বা বসবেন কে? প্রশ্ন উঠেছে এমন ব্যক্তিত্বই বা আজ কোথায়! বিধানসভায় বিরোধী দলের ঘর দুটি। এ পর্যন্ত বামফ্রন্ট আর কংগ্রেস সেই দুই ঘরে বসে এসেছে পালটাপালটি করে। যখন যে বিরোধী দলে থেকেছেন, তাঁদের বসার ব্যবস্থা হয়েছে পশ্চিমের ঘরে।
গত সরকারের আমলে বিজেপির (BJP) বিধায়ক সংখ্যা বাড়ায় তাঁদের জন্য আলাদা ঘর বরাদ্দ হয়। কিন্তু এবার মূল বিরোধী দলের সংখ্যা এক। বিজেপি। যাঁদের একার হাতেই ৭৭টি আসন। আইএসএফ জিতেছে একটি আসন। বাকি একটি নির্দল। বাম (Left) আর কংগ্রেস (Congress) শূন্য। ওদিকে, বিধানসভায় দুই বিরোধী দলের ঘরই প্রায় সমান মাপের। যেখানে একসঙ্গে হাত-পা ছড়িয়ে ৫০ জনের বসায় কোনও অসুবিধা হয় না। তার ভিতরেই রয়েছে দলনেতা আর সে দলের মুখ্য সচেতকের আলাদা ঘর। এই অবস্থায় বিরোধী দল হিসাবে যে কোনও একটি ঘরকে পছন্দমতো বেছে নিতে পারে বিজেপি। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হল, বাকি ঘরটির ভবিষ্যৎ কী?
[আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর শপথের দিনই রাজনৈতিক হিংসা দূর করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বিজেপির জয়ী প্রার্থীরা]
মন্ত্রী বা বিধায়কদের বসার ঘর, বিরোধী দলের ঘর এ সবেরই আনুষ্ঠানিক বাটোয়ারা করেন স্পিকার নিজে। তিনি শপথ নিয়ে পদে বসলে তবেই আপাতত ঘরগুলির সদ্ব্যবহার নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে জানাচ্ছেন প্রোটেম স্পিকার নির্বাচিত হওয়া সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “স্পিকার যিনি হবেন তিনিই এসব সিদ্ধান্ত নেন। সেক্ষেত্রে স্পিকার যেহেতু হবেন বিমানবাবু (বন্দ্যোপাধ্যায়), তাই চেয়ারে বসে তিনিই সেটা ঠিক করবেন। এখনই এসবের সিদ্ধান্ত হয়নি।”
যে ঘর যাঁদের হাতেই যাক, ইতিহাস বলছে, এই দুই ঘরই ঐতিহ্যের দাবিদার। দীর্ঘদিন কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতার ব্যক্তিগত সচিব হিসাবে কাজ করেছেন প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়। মেয়াদ ফুরনোর পরও তাঁকে কাজে বহাল রাখা হয়েছে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের অনুরোধে। বিরোধী দলনেতা হিসাবে পেয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশংকর রায়, জয়নাল আবেদিন, অতীশচন্দ্র সিনহা, আবদুস সাত্তার, সোমেন মিত্র, মানস ভুঁইয়া থেকে আজকের আবদুল মান্নানদের মতো ব্যক্তিত্বকে। রাজনীতি থেকে পরিষদীয় রীতিনীতির সবটাই যাঁদের গুলে খাওয়া। সে অর্থে বলতে গেলে বিরোধী দলনেতার চেয়ারের অলংকার। সিদ্ধার্থবাবু যখন বিরোধী দলনেতা, সে সময় মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।
[আরও পড়ুন: হারের জন্য আলিমুদ্দিনকে দায়ী করে শোকজের মুখে সিপিএম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য]
আজও প্রদীপবাবুর কাছে জ্যোতিবাবু বা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে লেখা অসংখ্য ড্রাফ্ট করা চিঠি সযত্নে রয়েছে। পাতা হলুদ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু এক ফোঁটাও কোথাও ছিঁড়ে নষ্ট হয়নি। “এগুলো আমার ব্যক্তিগত সম্পদ। সব এই দুটো ঘরে বসে লেখা” – গোছাতে গোছাতে বলছিলেন প্রদীপবাবু। সেসব হাতে লিখে অসংখ্যবার ভুল শুধরে দিয়েছেন সিদ্ধার্থশংকর রায়। প্রদীপবাবুর কাজের মেয়াদ ফুরিয়েছে। বিধানসভা থেকে এটুকুই তিনি নিয়ে গিয়েছেন।
এসব পর্ব মিটে গেলে বিরোধী দলের ঘর ভাগ। বিধানসভার সচিবালয়ের আধিকারিকদের মধ্যে অনেকেই বলছেন বিজেপির ৭৭ জন বিধায়ককে ভাগে ভাগে দুই ঘরে বসানো হতে পারে। তাঁদের মতে দুটি ঘর ব্যবহারের এই একটি উপায় থাকতে পারে। তবে আইএসএফ আর নির্দল বিধায়কের ক্ষেত্রে? তাঁদের জন্য দোতলায় ছোট দুটি ঘর বরাদ্দ হতে পারে। কংগ্রেস ছেড়ে বেরনোর পর মানস ভুঁইয়ার ক্ষেত্রে যেমন হয়েছিল। এর মধ্যে বিরোধী বিজেপির দলনেতা কে হবেন, তা নিয়েও জল্পনা চলছে মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীর নাম নিয়ে। নেতা যেই হোন, তাঁর নেতৃত্বে দল বসবে কোথায়। ভাগ্য স্পিকারের হাতে।