ধ্রুব বন্দ্য়োপাধ্যায়: আগে একবার এই চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আর জাতীয় পরিবেশ আদালত কেউই তার অনুমতি দেয়নি। হাতির জন্ম নিয়ন্ত্রণের আবেদন নিয়ে আবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে রাজ্য বন দফতর। তবে তার আগে রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে সবুজ সংকেত দরকার। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এই আবেদনের মূল কারণ, হাতির সঙ্গে মানুষের বেড়ে চলা সংঘাত। হাতির সংখ্যা বেড়ে যাওয়াই যার অন্যতম কারণ বলে দাবি বন দফতরের। কেরল সরকারও একই আবেদন করছে বলে জানা গিয়েছে।
এই আবেদনের মধ্যেই রাজ্য বন দফতর আরও একটি অনুমোদন পেয়েছে কেন্দ্রের কাছে। উন্মত্ত তিনটি হাতিকে এতদিন পর্যন্ত ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি ছিল। রবিবার নতুন করে ঝাড়গ্রামে হাতির আক্রমণে এক মহিলার মৃত্যেুর পর আরও ৭টি হাতিকে ঘুম পাড়িয়ে উত্তরবঙ্গ পাঠাতে পারবে রাজ্য। কোনও দলের মধ্যে উন্মত্ত হাতি থাকে সাধারণত একটিই। উন্মত্ত হয়ে গেলেও সেটিই প্রধানত দলটিকে নেতৃত্ব দেয়। সেই হাতি চিহ্নিত করা সহজ। বন দফতরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে উন্মত্ত হাতিটিকে সরিয়ে নিয়ে গেলেই দলের বাকিগুলি নিজে থেকে এলাকা ছেড়ে যায়। গত কয়েকমাসে পরপর ৩টি ঘটনায় ৩টি হাতিকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে গলায় কলার পরিয়ে উত্তরবঙ্গে পাঠানো হয়েছে।
তবে যা পরিস্থিতি তা সামলাতে দ্রুত হাতির জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে রাজ্য। যদিও বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানাচ্ছেন, “কোনওভাবেই বন্যপ্রাণ বা জীববৈচিত্রের কোনও ক্ষতি করে তা নয়। এই কাজে আগেও সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। তারা অনুমতি দেয়নি। তাদের অনুমতি না পেলে এটা সম্ভব নয়। আমরা তারই আবেদন করছি।” শুধু জন্ম নিয়ন্ত্রণ নয়, হাতির গতিবিধিতে নজর রাখার কাজও নানাভাবে চালানো হচ্ছে। আপাতত গলায় কলার পরিয়ে সেই কাজ হচ্ছে। যার সাহায্যে ২৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হাতির উপর নজর রাখা সম্ভব। এর মধ্যেই তাদের কানে দুল পরিয়ে তাদের চিহ্নিতকরণের কাজ করে রাখা হচ্ছে। তাতে ভবিষ্যতে চিপ বসানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। হাতিকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে অজ্ঞান করিয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উত্তরবঙ্গে। বক্সার জঙ্গলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় পথ দেখাবে ইঁদুর! মার্কিন মুলুক থেকে বঙ্গে এল ৪৩ জোড়া]
রাজ্যের বনাঞ্চলের পরিমাণ এই মুহূর্তে ১১ হাজার ৭৮৯ বর্গ কিলোমিটার। যার মধ্যে ৭০৫৪ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে সংরক্ষিত বন। আর ৩৭৭২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে সুরক্ষিত বন। সার্বিকভাবে মূল অংশই রয়েছে উত্তরবঙ্গে। দক্ষিণবঙ্গে বন এলাকায় রয়েছে জনবসতি আর ধানখেত। বর্তমানে বন্যপ্রাণের শুমারের কাজ চলছে। হাতির সংখ্যা এই মুহূর্তে ঠিক কত, তা এখনই জানা যাচ্ছে না। তবে মানুষের সঙ্গে বেড়ে চলা সংঘাতের সংখ্যা বলছে হাতির সংখ্যা বড়েছে। রাজ্য প্রধান মুখ্য বনপাল সৌমিত্র দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, “হাতির স্বভাবই হল একটু খোলা জায়গায় ঘোরা। সব সময় তারা বনে থাকে না। উত্তরবঙ্গেও তারা বনের মধ্যে একটু কম ঘন জায়গায় থাকে। দক্ষিণবঙ্গে সেই সুযোগ নেই। তাই তারা ধানখেত বা জনবসতির কাছাকাছি চলে আসে। তার জন্যই মানুষের সঙ্গে সংঘাতের ঘটনা এই এলাকায় বেশি।” তাঁর কথায়, “হাতির সঙ্গে মানুষের সংঘাত কমাতে হাতির জন্ম নিয়ন্ত্রণ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে সুপ্রিম কোর্টের উপর।” সেখান থেকে অনুমতি এলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তা করতে দেওয়া হতে পারে বলে জানাচ্ছে বন দফতর।