নব্যেন্দু হাজরা: সময় পঁচাত্তর দিন। তারমধ্যেই শেষ করতে হবে প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ বাড়ি বানানোর কাজ। কিন্তু এত বাড়ি বানাবে কে! তার জন্য তো হাজার হাজার রাজমিস্ত্রির প্রয়োজন। কিন্তু এত প্রশিক্ষিত রাজমিস্ত্রি আসবে কোথা থেকে! রাজমিস্ত্রি খুঁজতে এখন ঘুম ছোটার জোগাড় পঞ্চায়েত দপ্তরের কর্তাদের।
কীভাবে কাজ শেষ করা হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই একাধিক বৈঠক হয়েছে। তারপরই ঠিক হয়েছে, রাজ্যে দ্রুত শুরু হবে রাজমিস্ত্রি প্রশিক্ষণ শিবির। কেন্দ্রীয় সরকারের যে রুরাল ম্যাশন ট্রেনিং প্রকল্প রয়েছে, তার আওতাতেই রাজ্যের সমস্ত জেলাতেই রাজমিস্ত্রি তৈরির প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হবে। যে ছ’সাতটি সংস্থা এই প্রশিক্ষণ দেয়, তাদের সঙ্গে সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছেন পঞ্চায়েত দপ্তরের কর্তারা। তাদের প্রতি জেলায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই মিস্ত্রি প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, সবই আটকে রয়েছে টাকায়। কেন্দ্রের টাকা না এলে কাজ পুরোপুরি শুরু করা যাচ্ছে না।
[আরও পড়ুন: ‘পা ধুইয়ে জল খাওয়াব’, মন্ত্রীর সামনে যুবককে চড় মারার ঘটনায় অভিযুক্তকে হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর]
নবান্ন সূত্রে খবর, ২০১৭ সাল নাগাদই রুরাল ম্যাশন ট্রেনিং প্রকল্পে রাজ্যকে ৪০ হাজার রাজমিস্ত্রি তৈরি করতে বলে কেন্দ্র। কিন্তু আবাস যোজনায় টাকা না আসায়, প্রকল্পে তেমন গতি ছিল না। ফলে হাজার পনেরো রাজমিস্ত্রি রাজ্যে তৈরির পরই তা থেমে যায়। কিন্তু এখন ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার বাড়ি আবাসে তৈরি হবে রাজ্যে। তা তৈরি করতেই বিপুল লোকের দরকার। যাঁরা কিনা ওই অল্প খরচের বাড়ি তৈরিতে প্রশিক্ষিত থাকবেন। ৪৫ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে সার্টিফিকেট মিলবে। তাছাড়া যাঁরা ইতিমধ্যেই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, তাঁদের জন্য রয়েছে ৯ দিনের প্রশিক্ষণ। বাড়ি পিছু কেন্দ্রের বরাদ্দকৃত অর্থে কীভাবে ঘর বানানো যায়, তা তাঁদের শেখানো হবে। জেলা প্রশাসনের কাজ ট্রেনি জোগাড় করা। আর ওই সংস্থার লোকেরা প্রশিক্ষণ দেবেন। ২০-৩০ জনকে নিয়ে একেকটি ব্যাচ হবে।
নবান্ন সূত্রে খবর, গত দু’বছরে করোনার কারণে এই প্রশিক্ষণ একেবারেই হয়নি। তার আগে সমস্ত জেলাতেই কম-বেশি হয়েছে। তবে মুর্শিদাবাদে এই প্রশিক্ষণে কেউ রাজি হননি বলেই খবর। ওখানকার একটা বড় অংশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই রাজমিস্ত্রির পেশায় যুক্ত। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁরা কাজ করেন। ফলে কাজ বন্ধ রেখে তাঁরা এই প্রশিক্ষণ নিতে রাজি হননি। তবে প্রত্যেক জেলাতেই এই প্রশিক্ষণ শিবির দ্রুত শুরু করে দিতে চাইছে নবান্ন। কারণ, কেন্দ্রে টাকা এসে গেলে খুব তাড়াতাড়ি সর্বত্র বাড়ি তৈরির কাজে হাত লাগাতে হবে। আর সেক্ষেত্রে একটা বড় সংখ্যক রাজমিস্ত্রির প্রয়োজন হবে। কারণ কাজে গতি ছাড়া ১১ লক্ষের উপর বাড়ি তৈরি সম্ভব নয়। তাই মিস্ত্রি জোগাড় করতেই রুরাল ম্যাশন ট্রেনিং প্রকল্পের কাজ ফেলে রাখতে চাইছে না নবান্ন।