দিপালী সেন: বড়সড় রদবদল উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায়। সেরা দশে নতুন করে নাম উঠল আরও ১২ জন মেধাবীর। স্থান বদল হয়েছে আগে থেকেই মেধাতালিকায় থাকা তিন পড়ুয়ার। পূর্ববর্তী স্থান থেকে এক বা দুই ধাপ উপরে উঠেছেন তাঁরা। এ বছরই উচ্চমাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ(WB HS Result 2024) পরবর্তী রিভিউ (পিপিআর) ও স্ক্রুটিনির (পিপিএস) ক্ষেত্রে তৎকাল পরিষেবা চালু হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় আবেদনের দিন থেকে সাতদিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানায় উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। সেই মতোই তৎকাল পিপিআর, পিপিএস-এর অধিকাংশ আবেদনের নিষ্পত্তি করে প্রথম দফার ফলপ্রকাশ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। তাতেই উঠে আসে এই ব্যাপক রদবদলের চিত্র। আরও অনেক পরীক্ষার্থীর নম্বরে বদল এসেছে।
এবার উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় ছিলেন মোট ৫৮ জন। নম্বর বৃদ্ধি হওয়ায় ১২ জনের অন্তর্ভুক্তির পর সেই সংখ্যা বেড়ে ৭০ হয়েছে। প্রাপ্ত নম্বরের (৪৯২) বিচারে আগের মেধাতালিকাতে পঞ্চম স্থানে ছিলেন বাঁকুড়ার কেন্দুয়াডিহি হাই স্কুলের অঙ্কিত পাল। তৎকাল রিভিউ-স্ক্রুটিনির পর দুই নম্বর বেড়ে অঙ্কিত বর্তমানে তৃতীয় স্থানে। একইভাবে হুগলি কলেজিয়েট স্কুলের অভ্রকিশোর ভট্টাচার্য ষষ্ঠ থেকে পঞ্চম স্থানে ও চুঁচুড়া বালিকা বাণীমন্দিরের বৃষ্টি পাল নবম থেকে সপ্তম স্থানে উন্নীত হয়েছেন। নতুন করে মেধাতালিকায় উঠে আসাদের মধ্যে রয়েছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের চার ছাত্র। প্রথমে মেধাতালিকায় ঠাঁই না পেলেও নম্বর পুনর্গণনার পর স্ট্যাটিস্টিক্সের নম্বর ৯৩ থেকে বেড়ে ৯৮ হওয়ায় একেবারে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছেন স্কুলের সাগ্নিক চক্রবর্তী।
বর্ধিত নম্বরের ভিত্তিতে দশম স্থান অধিকার করে নিয়েছেন আরও তিন ছাত্র। সবমিলিয়ে একই স্কুলের দশ ছাত্র এ বছরের উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায়। মিশনের পরিবেশ, নিয়মানুবর্তিতা এবং শিক্ষা পদ্ধতি এই সাফল্যের চাবিকাঠি বলে জানিয়েছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বামী ইষ্টেশানন্দ মহারাজ। নবম স্থানে তিনজনের নাম যুক্ত হয়েছে। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের তিন ছাত্র-সহ দশম স্থানে মোট আটজন নতুন করে জায়গা করে নিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: বারান্দায় দুই বোনকে কুপিয়ে খুন! সাতসকালে হাড়হিম হত্যাকাণ্ড পাথরপ্রতিমায়]
১০-১৩ মে পর্যন্ত চলেছিল তৎকাল রিভিউ, স্ক্রুটিনির জন্য আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া। সংসদ জানিয়েছে, সবমিলিয়ে ২২ হাজার ৮৩৬টি বিষয়ভিত্তিক আবেদন জমা পড়েছিল। ইতিমধ্যেই ২২ হাজার ১৩৮টি আবেদনের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এবং মোট ৫,৪৫৯টি ক্ষেত্রে নম্বর সংশোধন করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, পরবর্তী দফায় বাকি প্রায় ৭০০টি আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে। সাধারণ রিভিউ, স্ক্রুটিনির ক্ষেত্রে আবেদন গ্রহণ থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ-গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে প্রায় ৪৫ দিন লাগে। দীর্ঘমেয়াদি এই প্রক্রিয়ায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন ছাত্রছাত্রীরা। তা অনুধাবন করেই তৎকাল পরিষেবা চালু করা হয়েছিল। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “যাঁদের নম্বর বাড়ল, তাঁরা যাতে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে সুবিধা পান, তার জন্যই আমরা তৎকাল পরিষেবা চালু করেছিলাম। এবং এটা সত্যিই কার্যকর হয়েছে।”
একদিকে সাফল্য। অন্যদিকে, রিভিউ, স্ক্রুটিনিতে এত সংখ্যক উত্তরপত্রে নম্বর পরিবর্তন মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার উপর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। চিরঞ্জীববাবুর স্পষ্ট বক্তব্য, “পরীক্ষার মূল্যায়নে কোনও সমস্যা হয়নি। তারপরেও এটা কেন হল, সেটা সত্যিই পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। এ বিষয়ে আমরা প্রধান পরীক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করব। মূল্যায়নের গুণমান আরও বাড়াতে হবে। ভুলভ্রান্তি থেকে যাচ্ছে বলেই এটা হয়েছে। যা কখনওই বাঞ্ছনীয় নয়।” প্রসঙ্গত, এবারই প্রথমবার সম্পূর্ণ অনলাইন মাধ্যমে নম্বর জমা নিয়েছিল সংসদ। চিরঞ্জীববাবু জানিয়েছেন, প্রধান পরীক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সরাসরি উত্তরপত্র দেখে সিস্টেমে নম্বর তুলতে। এবং অনলাইন ব্যবস্থায় দুবার করে নম্বর তোলা বাধ্যতামূলক ছিল। ফলে, প্রক্রিয়াগত কোনও ভুল হয়নি। তবে, আরও বেশি সচেতনভাবে নম্বর তোলা হলে ভুলভ্রান্তি অনেকটাই এড়ানো যেত বলে মত সংসদ সভাপতির।