অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সামনে রেখেই সাধারণত নির্বাচনে অংশ নেয় পাহাড়ের প্রতিটি রাজনৈতিক দল। এটাই যেন পাহাড়ের চিরাচরিত নিয়ম। কিন্তু বর্তমানে গোর্খাল্যান্ড অতীত। এখন আর পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে কেউ নির্বাচনে প্রচার করছে না। কারণ, পৃথক রাজ্য নিয়ে পাহাড়বাসীর মোহভঙ্গ হয়েছে। তাই এখন পাহাড় চাইছে উন্নয়ন। এবারের পঞ্চায়েত ভোটে (WB Panchayat Vote 2023) পাহাড়বাসীর লক্ষ্য, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, পথঘাট-সহ কর্মসংস্থান চাইছে পাহাড়। তাই গোটা পাহাড়ে কোনঠাসা বিমল গুরুং, অজয় এডওয়ার্ড-সহ খানিকটা বিজেপিও।
আশির দশক থেকে পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের (Gorkhaland) দাবিতে বারবার আগুন জ্বলেছে পাহাড়ে। কখনও ব্যাটন ছিল সুভাষ ঘিসিংয়ের হাতে, কখনও আবার ক্ষমতা হস্তগত করেছেন বিমল গুরুং (Bimal Gurung)। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুধু তাদের আন্দোলনের জেরে নিরীহ মানুষ মারা গিয়েছে। আবার পরপর তিনবার বিজেপিকে (BJP) লোকসভা নির্বাচনে জিতিয়ে দিল্লিতে সাংসদ পাঠিয়েছেন পাহাড়ের বাসিন্দারা। তাতেও লাভের লাভ কিছুই হয়নি। সব মিলিয়ে পাহাড়বাসী চূড়ান্ত হতাশ। তাঁরাও বুঝতে পেরেছেন, গোর্খাল্যান্ডকে হাতিয়ার করে শুধুই নির্বাচনের প্রচার করা হয়। তাই এখন গোর্খাল্যান্ডের ‘মোহ’ ভুলে তাঁদের নজর পাহাড়ের উন্নয়নে।
[আরও পড়ুন: মিলেছে ৩১৫, বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে চিঠি কমিশনের, পালটা চাপে কেন্দ্র]
ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার জিটিএ (GTA) নির্বাচন করিয়েছে। যার দায়িত্বে রয়েছেন পাহাড়ের বর্তমান ‘অধিপতি’ অনীত থাপা। রাজ্য সরকারের দেখানো পথেই তিনি পাহাড়ের উন্নয়নে কাজ করে চলছে। এখন পাহাড়ে পথঘাট ভাল হয়েছে। আগের থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। যদিও এখনও অনেক কাজ বাকিও রয়েছে। তাকদার বাসিন্দা নরবু লামার কথায়, “গোর্খাল্যান্ড নিয়ে আর মাথাব্যথা নেই। আমরা চাই, আমাদের সন্তানরা সরকারি চাকরি করুক। আমাদের বাড়িতে পানীয় জল আসুক। বাড়ির সামনে রাস্তা ঠিক হোক।”
পঞ্চায়েত নির্বাচন না হওয়ায় ওই সকল এলাকায় অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। আবার রাস্তাতে আলোও নেই। তাই পাহাড়ের বাসিন্দারা চাইছে তাই হোক। এই কারণেই এখন আর তাঁরা বিমল গুরুং কিংবা অজয় এডওয়ার্ডের কথা শুনতেও চায় না। বিজনবাড়ির বাসিন্দা আশা ছেত্রী বলছেন, “যারা আন্দোলন করেছিল তারা ভালই আছে। শুধু কিছু ছেলের প্রাণ গেল। তাই আর পাহাড়ে আগুন জ্বলুক তা চাই না। আমরা চাই আমাদের এলাকার উন্নয়ন হোক। আমাদের নিত্য সমস্যার সমাধান করা হোক।”
[আরও পড়ুন: রাহুলকে ‘দেবদাস’ বানিয়ে পোস্টার পাটনায়, পালটা ৪ রাজ্যে বিজেপিকে হারানোর হুঙ্কার কংগ্রেস নেতার]
পাহাড়বাসী গোর্খাল্যান্ডের কথা শুনতে নারাজ তাই এখনও পর্যন্ত রাস্তায় নামতে পারেনি বিমল গুরুং-সহ অজয় এডওয়ার্ড। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা সভাপতি অনীত থাপা (Anit Thapa) বলেন, “বিজেপি গোর্খাল্যান্ড ঘোষণা করলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।” অন্যদিকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির বক্তব্য, “আমরাও পাহাড়ের উন্নয়ন চাই। এই নির্বাচনের সঙ্গে গোর্খাল্যান্ডের কোনও সম্পর্ক নেই।”