নিরুফা খাতুন: আর হাতে গোনা কয়েকদিন। জমে উঠেছে পুজোর বাজার। ঠিক তখন মাস পয়লার মুখে ফের শরতের আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। পুজোর দিন কুড়ি আগে ব্যবসায়ী থেকে উদ্যোক্তাদের মনে আশঙ্কা বাড়িয়ে ফের ভারী বৃষ্টি। বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আর একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে আরব সাগরে। জোড়া নিম্নচাপ ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে রাজ্যের উপকূলের খুব কাছে অবস্থান করছে। শনিবার থেকে ভারী বর্ষণ দক্ষিণবঙ্গে। রবিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করেছে আবহাওয়া দপ্তর। ভারী বর্ষণের জেরে উত্তরবঙ্গের পার্বত্য এলাকায় ধস নামতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
কয়েকদিন ধরে গরমে গলদঘর্ম অবস্থা রাজ্যবাসীর। আপেক্ষিক আর্দ্রতার জেরে অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। শুক্রবার সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার ছিল। বঙ্গোপাসগরের উপর ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হতেই আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। এদিন দু-এক পশলা দফায় দফায় বৃষ্টিপাত চলে। নিম্নচাপের প্রভাবে শনিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস।
[আরও পড়ুন: বাড়ির পরিচারিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা! অবশেষে ‘কোটিপতি’ কনস্টেবলের সেই বান্ধবীর মিলল খোঁজ]
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত শক্তিশালী নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই দুই নিম্নচাপ আরও শক্তিশালী হয়ে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হবে। উত্তর পূর্ব ও পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ ক্রমশ উত্তর বঙ্গোপসাগরের দিকে এগিয়ে আসছে। নিম্নচাপের মুখ রয়েছে উত্তর ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল এলাকায়। ফলে আগামী চারদিন উপকূল এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ চলবে। শনিবার থেকে বৃষ্টি বাড়বে। মঙ্গলবার পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে। এই কদিন উত্তাল থাকবে সমুদ্র। নদীর জলস্তর বেড়ে যাবে। তাই মৎস্যজীবীদের সমুদ্র থেকে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে নামার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’’
নিম্নচাপের জেরে পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে অতি ভারী বৃষ্টি চলবে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। রবিবার কলকাতা-সহ বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আলিপুরের অধিকর্তা জানান, শনিবার থেকে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। মঙ্গলবার থেকে সেখানে অতিভারী বৃষ্টি হবে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাহাড়ে বৃষ্টিপাত চলবে। ফলে ধসের সম্ভাবনা রয়েছে পার্বত্য জেলাগুলিতে। নদীর জলস্তরও বাড়তে পারে।
দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ পুজোর বাংলায় দুর্যোগের আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন মৃৎশিল্পীরাও। এদিকে, রাজ্যে বর্ষা বিদায় নেওয়ার সময় চলে এসেছে। এবার বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে ২৪ শতাংশ। কলকাতায় ঘাটতির পরিমাণ ১৮ শতাংশ। তবে উত্তরবঙ্গে এবার ভালোই বর্ষণ হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৭ শতাংশ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে উত্তরবঙ্গে।