সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রের অন্তর্বর্তী বাজেট মধ্যবিত্তর ঠোঁটের কোণে হাসির ঝিলিক আনতে পারেনি। কারণ, তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও ঘোষণা নেই। আয়করের ক্ষেত্রে না দেওয়া হয়েছে ছাড় আর না কোনও নতুন প্রকল্পের ঘোষণা। তার ফলে কিছুটা হতাশ আমজনতা। মোদি সরকার যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী তারই প্রতিফলন বাজেটে ফুটে উঠেছে বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের। তবে নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীশক্তির উপর জোর দিয়েছেন নির্মলা সীতারমণ। নারী ক্ষমতায়ন গত দশ বছরে গতি পেয়েছে বলেই দাবি তাঁর। ‘লাখপতি দিদি’র লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি করা হয়েছে। তাতে যথেষ্ট খুশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত মহিলারা। এই প্রেক্ষাপটে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বাজেট। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মমতা সরকারের এই বাজেটে কেন্দ্রের ‘লাখপতি দিদি’ বনাম রাজ্যের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে’র হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। বরাদ্দ হয়তো একধাক্কায় অনেকটা বাড়বে বলেই মনে করছেন কেউ কেউ।
‘মা-মাটি-মানুষে’র সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নারী ক্ষমতায়নে নানা পদক্ষেপ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে’র মতো প্রকল্প রয়েছে বাংলায়। ২০২১ সালে নির্বাচনের আগে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প চালুর প্রতিশ্রুতি দেন মমতা। প্রতিশ্রুতি বাস্তব রূপ পায় সে বছরই নভেম্বরে। এই প্রকল্পে তফসিলি জাতি-উপজাতির উপভোক্তারা মাসিক ১০০০ টাকা ও অন্যান্যদের ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়। শুরুতে এই ভাতা পেতেন ২৫-৬০ বছর বয়সিরা। ৬০ বছর পেরিয়ে গেলে তাঁরা পেতেন ‘বার্ধক্য ভাতা’। তবে বর্তমানে ষাটোর্ধ্বরা ‘বার্ধক্য ভাতা’-সহ ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে মাসে ১ হাজার টাকা পান। প্রতি মাসে সরাসরি অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে প্রকল্পের টাকা। তাতে উপকৃত কোটি কোটি মহিলা।
[আরও পড়ুন: আড়ালে বসে ষড়যন্ত্র, ‘পিকচারে’ না থেকেও নিয়োগ দুর্নীতির মূল মাথা পার্থই! বিস্ফোরক CBI]
আবার রয়েছে ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পও। দীনদরিদ্র কন্যাদের ঘর বাঁধার সম্বল এই প্রকল্প। নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমবার বিয়ে হলে তবেই পাওয়া যায় ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের টাকা। নিয়ম রয়েছে আরও। স্রেফ রেজিস্ট্রি বিয়ে করলে এই টাকা পাওয়া যায় না। ছোট করে হলেও অনুষ্ঠান করতে হবে। সমস্ত শর্তপূরণ হলে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় আবেদনকারীর অ্যাকাউন্টে। নিয়ম অনুযায়ী, বিয়ের ৬০ দিন আগে ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের টাকা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়। সেক্ষেত্রে ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের টাকা পেতে গেলে আবেদনকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকাও বাধ্যতামূলক। শুধুমাত্র দুস্থ কন্যাদের বিয়েতে সাহায্য নয়, এই প্রকল্পে ঠেকানো গিয়েছে নাবালিকা বিয়ের মতো অপরাধও।
এছাড়া ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পেও বরাবরই জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত রাজ্যের প্রত্যেক ছাত্রী। ১৮ বছরের পর ২৫ হাজার টাকা এবং পরবর্তীকালে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচও দেওয়া হয় এই প্রকল্পে। তথ্য বলছে, তার ফলে দুস্থ পরিবারের কন্যাসন্তানদের স্কুলছুটের সংখ্যা কমেছে বেশ খানিকটা। রাজ্য বাজেট পেশের আগে নারী ক্ষমতায়নমূলক প্রকল্পগুলি নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনছে মধ্যবিত্ত। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সাধারণত ভোটের আগে বাজেটে কিছু না কিছু চমক থাকেই। সেক্ষেত্রে লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য বাজেটেও নারী ক্ষমতায়নে বরাদ্দ হয়তো বাড়বে কয়েক গুণ। সেদিকেই আপাতত নজর সকলের।